রক্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিমোগ্লোবিন। এটি লোহিত রক্তকণিকায় থাকে এবং রক্তের প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে। এই উপাদানটির কারণেই মূলত রক্তের রঙ লাল হয়। যখন রক্তের লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমতে থাকে, সেই অবস্থাকে অ্যানিমিয়া বলে। বাংলায় যাকে আমরা রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বলে থাকি।
বড় ধরনের কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না বিধায় অ্যানিমিয়াকে ঘাতক রোগ বলা হয়। অনেক কারণেই এই স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অ্যানিমিয়া মানুষের দেহে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় এই রোগ দেখা দেয়। রক্ত থেকে হিমোগ্লোবিন কমার অনেক কারণ থাকতে পারে। এগুলো সম্পর্কে সচেতনতা আবশ্যক।
বিজ্ঞাপন
নারীদের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বিশেষত পিরিয়ডসের কারণে এটি হয়ে থাকে। এসময় শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া কৃমিজনিত কারণেও এ সমস্যা দেখা দেয়। যাদের পাইলস রয়েছে তাদের অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার শরীরে ঠিকমতো রক্ত তৈরি না হলেও এ সমস্যা হয়ে থাকে। আয়রন, বি১২, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদির ঘাটতি থাকলে দেহে ঠিকমতো হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না। তখন এই সমস্যা দেখা দেয়।
অ্যানিমিয়ার লক্ষণ
অ্যানিমিয়ার বড় ধরনের কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। তবে এর উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো-
অতিরিক্ত দুর্বল লাগা
শারীরিক অবসাদ
কাজে আগ্রহ খুঁজে না পাওয়া
শ্বাসকষ্ট
চেহারা ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া
বিজ্ঞাপন
এই লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন শরীরে দেখা দিয়ে অবশ্যই সতর্ক হয়ে যান এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রক্তশূন্যতা হলে কোন কোন খাবার খেতে হবে?
দেহে অ্যানিমিয়া দেখা দিলে তিন ধরনের খাবার বেশি খেতে হয়। আয়রন বাড়ানোর জন্য লাল শাক, কাঁচকলা, খেজুর, থোড়ের মতো আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ফলিক অ্যাসিডের জন্য খেতে হবে সবুজ শাক ও সবজি। এছাড়া ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি মেটাতে পরিমিত মাছ ও মাংস খেতে হবে।
কখন ওষুধ খেতে হবে?
সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ধীরে ধীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। কিন্তু এতে সমাধান না মিললে ওষুধ খেতে হবে। ভিটামিন বি ১২, ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
শিশুদের কি অ্যানিমিয়া হয়?
হ্যাঁ, শিশুদের এই সমস্যা হতে পারে। গ্রামাঞ্চলের শিশুদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আর এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো ঘন ঘন কৃমির সংক্রমণ। তাই শিশুদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর অবশ্যই কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। সেসঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিলে এবং কিছু নিয়ম মানলে সুস্থ রাখা যায়।
দেহে অ্যানিমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
এনএম