ছোট্ট একটি প্রাণী মশা। অথচ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় যেসব কারণে তার মধ্যে এটি একটি। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো অসংখ্য রোগের কারণ এটি। মশার কামড়ে সবার মৃত্যু না হলেই শরীরের যে অংশে ক্ষুদ্র এই প্রাণীটি কামড়ায় সেই অংশটিই ফুলে যায়। অনেকসময় সেই স্থান লালচেও হয়ে যায়।
কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন এমনটা হয়? মশা কামড়ালে কেন সেই স্থান ফুলে যায়? তার আগে চলুন জেনে নিই মশা কীভাবে কামড়ায় আর মশা কামড়ালে আমরা প্রথমে টের পাই না কেন-
বিজ্ঞাপন

মশা কামড়ালে আমরা টের পাই না কেন?
আমাদের লোমকূপের গোড়ায় সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্র দিয়েই মশা হুল ঢুকিয়ে দেয়। আর হুল ঢুকিয়ে প্রথমেই ছেড়ে দেয় কিছু লালা। এতে প্রায় ১০০ ধরনের প্রোটিন থাকে। এই লালা ব্যথা ব্যথা উপশম করে। আর তাই মশা যখন হুল ফুটিয়ে মনের সুখে রক্ত পান করে তা আমরা টের পাই না।
মশা কীভাবে রক্তপান করে?
চামড়া ভেদ করে রক্তবাহ পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য মশার মুখে একটি বিশেষ অঙ্গ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ঠোঁটের মতো অংশ। একে লেবিয়াম বলে। মশা যখন কামড়ায় তখন এই লেবিয়াম থাকে ত্বকের বাইরে। এর সাহায্যে মানব শরীরের ত্বকে মশা ৬টি সূচের মতো অংশ ঢুকিয়ে দেয়। এগুলোকে স্টাইলেট বলে। ৬টি সূচের মধ্যে ২টি বিশেষ সূচকে বলে ম্যাক্সিলি।

এই ম্যাক্সিলিতে থাকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দাঁতের মতো অংশ। মানব ত্বক চিড়তে বা চামড়া ভেদ করতে এই অংশটিকে করাতের মতো ব্যবহার করে মশা। এই অংশগুলো এতই ধারাল হয় যে মানুষ বুঝতেই পারে না মশা কামড়াচ্ছে। অনেকটা ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করার মতো প্রক্রিয়া এটি। আরেকটি সূচের মতো অংশকে বলা হয় ম্যান্ডিবল। যা ত্বকের চেরা অংশকে ধরে রাখে দু’পাশে।
এরপরেই মশা তার প্রবোসিস নামক অংশ ঢুকিয়ে স্ট্র দিয়ে টানার মতো করে রক্ত খায়। এই অংশকে সাপোর্ট দেয় হাইপোফ্যারিংক্স নামের অংশ। খুব কম সময়ে কাজটি করা হলেও এটি বেশ জটিল প্রক্রিয়া।

মশা কামড়ালে সেই স্থান ফুলে যায় কেন?
মশার লালা যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন শরীর একে অবাঞ্ছিত বস্তু হিসেবে গণ্য করে। তাই লালা নিঃসরণের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হয়। ফলে শরীর হিস্টামিন নামে একধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ করার মাধ্যমে শরীরকে রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই হিস্টামিনের কারণেই মশার ওই কামড়ে দেওয়া স্থানে চুলকায় আর জ্বালা করে। তখন আমরা ঐ স্থানে চুলকালে জায়গাটি ফুলে যায় আর লাল বর্ণ ধারণ করে।
এনএম

