একটি দিবস পালন করা হয় সারা বছরের মুহূর্তগুলোকে আরও ভালোভাবে মনে রাখার জন্য। মা দিবসে মাকে একটু স্পেশালভাবে কিছু গিফট দেওয়া, কোথাও খেতে নিয়ে যাওয়া, গল্প করা, নতুন করে ভালোবাসাটা জাগ্রত করার জন্য সবাই উৎসব আনন্দে মেতে ওঠে। আত্মত্যাগ, কঠিন পরিস্থিতি সামলে হাসিমুখে সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত যে মা তৈরি করে যাচ্ছে সেই মাকে একটু সম্মান জানানোর জন্য আয়োজন। মায়ের আঁচল হলো সন্তানের জন্য সবচেয়ে নির্ভরশীল, পরম মায়া-মমতার জায়গা।
বাবাদের পাশাপাশি মায়েরাও সন্তানের ভরণপোষণের জন্য পরিশ্রম করেন, সংসারের দায়িত্ব পালন করে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাতা নিজেদেরকে করেন। জীবনের দুর্বিষহ সময় পাশে কে থাকে— মা। সুখে-দুঃখে মা সন্তানের পাশে থেকে সবসময় আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা যান। সন্তানের জন্য মায়ের যে আত্মত্যাগ, ঋণ তা কোনোদিন আমরা শোধ করতে পারব না।
বিজ্ঞাপন
আমিও একজন মা। সন্তান গর্ভে ধারণ করার সময় থেকে সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানোর আগ পর্যন্ত মায়েদের যে কষ্ট তা একমাত্র গর্ভধারণী মা-ই বুঝে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী গান— ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব, মা গো, বলো কবে শীতল হবো। কত দূর, আর কত দূর, বল মা...।'
মা নিজের জীবন উৎসর্গ করে সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করে। কিভাবে সন্তানরা বেড়ে উঠবে, ভালো থাকবে, তার জন্য মায়ের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মা নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। একটি পরিবারকে আগলে রাখেন মা। পৃথিবীর সকল মা শান্তিতে থাকুক, ভালো থাকুক, এই শুভকামনা।
মা দিবস এমন একটি দিন যা ভৌগলিক সীমানা ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যকে অতিক্রম করেছে। মায়েরা হলো নিঃস্বার্থ ও বিমূর্ত প্রতীক। ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের স্বপ্ন, আশা ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলোকে বিসর্জন দেয়। তাদের ভালবাসার কোনো সীমা নেই।
এবার বলি আমার মায়ের কথা। আমি দেখেছি, ছোটবেলার মতো এখনও দেখছি, কখন বাসায় আসবো, কি খেয়েছি— তা নিয়ে সারাদিন মা ফোন করতেই থাকেন। কত অস্থিরতা তার।
বিজ্ঞাপন
সবসময় ভালো খাবার আমার জন্য রেখে দেন। আমি যা পছন্দ করি তা রান্না করেন। বড় হয়েও মায়ের কাছে সেই ছোট আমি।
এখন দরকার মাকে সেবা করা। কিন্তু উল্টো আমাকে নিয়েই তার ব্যস্ততার শেষ নেই। আমি ব্যস্ত থাকি আমার ছেলেকে নিয়ে, আর আমার মা ব্যস্ত আমাকে নিয়ে। এর নাম মা। যার তুলনা তিনি নিজেই।
আমি বুঝি না, বাবা-মাকে কিভাবে মানুষ বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে? কিভাবে বাবা-মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করে? আমি চাই মানুষ বাবা-মায়ের অবদান বুঝুক। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত করুক। সত্যি সত্যিই আমাদের বিবেক জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা যেমন আমাদের সেবা করে মানুষ করে তুলেছেন, আমরাও যেন তেমনি করে তাদেরকে ভালবাসা দিয়ে আগলে নিজের কাছে রেখে দিয়ে প্রাপ্য সম্মান করতে পারি। এটাই হবে মূল্যায়ন।
আমার দৃষ্টিতে আমার মা পৃথিবীর সেরা মা। এমন মা পেয়েছি ভাগ্যগুণে। সেই ছোটবেলা থেকে দেখছি, যখনই খেতে বসি দুপুরে কিংবা রাতে, তখনই মেহমান ছাড়া ভাত খেতে পারি নাই। দূর-দূরান্ত থেকে কেউ আসলে না খেয়ে যেতে পারত না। কখনো দেখা যেত, আম্মা নিজে না খেয়ে মেহমানকে আগে খেতে দিতেন। আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে কেউ খালি মুখে ফিরে যেতে পারত না।
ভালো সব কাজ মায়ের কাছ থেকে আমি শিখেছি। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার কিভাবে করতে হয়, ভালো আচরণ, মেহমানদারি—সব কিছু মায়ের কাছ থেকে শেখা। শুধু নিজের ছেলে-মেয়েকে নয়, আমার মা সবার জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতেন। এমন মা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
ডা. আয়শা আক্তার
উপ-পরিচালক, ২৫০ বেড টিবি হাসপাতাল