রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নতুন সংসারে কী কী লাগে?

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৩, ০১:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

নতুন সংসারে কী কী লাগে?

ভালোবাসা পাওয়ার পর দুজন মানুষের চিন্তা থাকে ভালো বাসা পাওয়া নিয়ে। বিয়ের পর নিজেদের মনমতো একটা সংসার সাজানোর স্বপ্ন কে না দেখেন? হোক ছোট বাসা, তবু নিজেদের পছন্দ আর প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস দিয়ে রাজ্য সাজান দুজন মানুষ। তবে মধ্যবিত্তদের সবকিছুই করতে হয় ভেবেচিন্তে। তাই নতুন সংসার সাজানোর আগেই খসড়া করতে হয় খরচের। 

আপনি কি সম্প্রতি বিয়ে করেছেন কিংবা করবেন? টোনাটুনির সংসার কীভাবে গোছাবেন তা নিয়ে ভাবছেন? কোন জিনিসগুলো না কিনলেই নয় আর কোনগুলো আপাতত না কিনলেও চলবে— বুঝে উঠতে পারছেন না? তবে এই প্রতিবেদন আপনার জন্যই- 


বিজ্ঞাপন


room

বাসা খুঁজুন 

সংসার সাজানোর আগে মনের মতো বাসা খুঁজে পাওয়াই জরুরি। হুট করে এই শহরে বাসা পাওয়াও কঠিন। তাই বিয়ের আগে থেকে বাসা খোঁজা ভালো। এখন অনেক বাসাই ভাড়া নেওয়ার আগে এক বা দুই মাসের অ্যাডভান্স দিতে হয়। তাই বাসা ভাড়া আর অ্যাডভান্সের টাকা সবার আগে যোগ করুন হিসেবের খাতায়। 

যা না হলেই নয় 


বিজ্ঞাপন


বাসা নেওয়ার পর সবার আগে প্রয়োজন বাতি আর পাখার ব্যবস্থা করা। সব ঘর, বাথরুম, রান্নাঘর, বারান্দার জন্য বাতি কিনে ফেলুন। সব ঘরের জন্য একটা করে বৈদ্যুতিক পাখারও ব্যবস্থা করতে হবে। 

room

এরপরই জরুরি বিষয় হলো দুই বার্নারের গ্যাসের চুলা আর ফ্রিজ। বাজেট কম থাকলে কিস্তিতেও ফ্রিজ কিনতে পারেন। দুজনের সংসারে শুরুতেই বড় ফ্রিজ কেনার প্রয়োজন নেই। তবে এসব জিনিস যেহেতু দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয় তাই বুঝেশুনে ভালো ব্র্যান্ডের কেনাই ভালো হবে। আর কিনতে হবে একটি পানির ফিল্টার। 

বাজেটে কুলালে টেলিভিশন কিনতে পারেন। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই ফোনে ব্যস্ত সময় কাটান। তাই চাইলে কয়েক মাস পরেও টেলিভিশন কিনতে পারেন। যেহেতু এখন ইন্টারনেটের যুগ তাই নিশ্চিত করুন ওয়াইফাই সংযোগ। 

room

অতি জরুরি আসবাব 

সংসার শুরু করতে গেলে কিছু আসবাব অবশ্যই লাগে। তবে কোন আসবাব কিনবেন বা কেমন আসবাব কিনবেন তা নিয়ে দোটানায় থাকে অনেকে। চলুন সংসার গোছানোর বিভিন্ন আসবাব নিয়ে আলোচনা করা যাক- 

শান্তি আর স্বস্তির বেডরুম 

সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ ক্লান্তি দূর করার সময়টা কাটে বেডরুমে। তাই এই ঘরের আসবাব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু বাজেট সংকটে থাকলে কী করবেন? কোনো সমস্যা নেই। বাজেট অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনলেই হলো। ফার্নিচারের দোকানে পুরাতন ফার্নিচার নতুন করে বার্নিশ করে বিক্রি করা হয়। নতুন আসবাবের তুলনায় এগুলো তুলনামূলক কম দামেই পাওয়া যায়। সেগুন, গর্জনের আসবাবগুলো টেকসইও হয়। সেগুলো থেকে কিনতে পারেন। 

room

বেডরুমের প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো হলো খাট, আলমারি কিংবা ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল। খাট কেনার অর্থ না থাকলে ম্যাট্রেস আর কুশন দিয়েই বাজেট ফ্রেন্ডলি খাট বানিয়ে ফেলতে পারেন। ড্রেসিং টেবিল না কিনে ফ্লোর বা দেওয়ালে আয়না ফিক্সড করে নিতে পারেন। এর পাশে শেলফ লাগিয়ে নিলেই কাস্টমাইজড ড্রেসিং টেবিল হয়ে যাবে। 

হাতিল, অটবি ছাড়াও রোকেয়া সরণি, বাড্ডা, পান্থপথ, শাহজাহানপুর ইত্যাদি জায়গায় আসবাবের দোকান রয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আসবাব কিনুন।

room

ছিমছাম ডাইনিং রুম 

সংসারের শুরুতেই কাঠের ডাইনিং টেবিল বা চেয়ার কেনার প্রয়োজন নেই। পোর্টেবল ডাইনিং টেবিল আর চেয়ার দিয়ে আপাতত কাজটি সেরে নিন। এতে জায়গা যেমন বাঁচবে, তেমনি বাঁচবে অর্থও।

হয়তো ভাবতে পারেন, বাসায় অতিথি আসলে কী করবেন? এখন কিন্তু ব্যুফে খাবারের ট্রেন্ড চলছে। অনেকটা তেমন আয়োজনই করুন। টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রাখলে অতিথিরা নিজেদের পছন্দমতো খাবার নিয়ে ড্রয়িং রুম কিংবা গেস্ট রুমে বসে খেতে পারবেন।

room

নান্দনিক ড্রইং রুম 

অনেকেই ভাবেন ড্রয়িং রুম মানেই বিশাল বড় সোফা, দেওয়ালে ক্যানভাস, কোণায় নানা শোপিস। এমন ধারণা কিন্তু একদমই ঠিক নয়। ঘর সাজানোর বিষয়টি ব্যক্তির পছন্দ, রুচি, শৌখিনতা এবং প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে। নতুন সংসার শুরু করলে বাজেটের কথা মাথায় রাখতে হয়। 

বেতের দুই বা তিন সিটের সোফা কিনতে পারেন। সেটাও চাইলে এড়ানো যায়। ফ্লোরে তোশক ভাঁজ করে তার ওপর নকশী কাঁথা বিছিয়ে দিন। রাখুন কয়েকটি রঙ বেরঙের কুশন। ব্যাস সোফার কাজ হয়ে গেল। কিংবা ফ্লোরে রাগ বিছিয়ে কুশন দিয়েও সাজাতে পারেন ঘরটি। লাইটিং এর জন্য বেছে নিতে পারেন ফ্লোর ল্যাম্প বা মরিচ বাতি। 

room

রান্নাঘরের জন্য যা কিছু লাগবে 

সংসারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। তাই রান্নাঘরের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কেনা জরুরি। রান্নাঘরে বিল্ট ইন র‍্যাক না থাকলে থালাবাটি ও হাড়ি কড়াই রাখার জন্য একটি র‍্যাক কিনতে হবে। লাগবে রান্নার জন্য কয়েক সাইজের হাড়ি, কড়াই, প্রেশার কুকার, গামলা, বাটি, খুন্তি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রেশার কুকার তালিকা থেকে বাদও দিতে পারেন। রান্নার পাত্র একবারে নন স্টিক কিনতে পারলে ভালো। টিকবেও অনেকদিন, পরিষ্কারের ঝামেলাও কম।

খাবার খাওয়ার জন্য কিনতে হবে অন্তত একসেট করে প্লেট, বাটি, চামচ, জগ, গ্লাস ইত্যাদি। রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় জিনসগুলো পাবেন নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা, গুলশান ডিসিসি, তালতলা, মৌচাক, ইস্টার্ন প্লাজা ইত্যাদি মার্কেটে। 

room

ওয়াশরুমের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস 

ওয়াশরুমের জন্য কিনতে হবে বালতি, মগ, বদনা, বেসিনের তোয়ালে, পেস্ট ব্রাশ রাখার হোল্ডার, সোপকেস। সেসঙ্গে বাসা পরিষ্কারের জন্য ঝাড়ু, ঘর মোছার মপ, টয়লেট ও কমোড পরিষ্কারের জন্য কয়েকটি ব্রাশ।

আরও খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় যা কিছু 

বিছানার জন্য অন্তত দুই সেট চাদর আর ব্যবহারের জন্য তোয়ালে বা গামছা কিনতে হবে। লাগবে বালিশও। কর্মজীবী মানুষদের জন্য আয়রন বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। সংসারের শুরুতে আয়রন স্ট্যান্ড না কিনলেও চলবে। 

room

সব ঘরের জন্য একসেট করে পর্দা কিনতে হবে। বুটিক হাউজগুলোতে মনের মতো পর্দা পেয়ে যাবেন। এখন অনেক এলাকাতেই ভ্যানগাড়িতে বাহারি পর্দা বিক্রি করা হয়। বাজেট কম থাকলে সেখান থেকেও কিনতে পারেন। 

কয়েকটি পাপোষ, জুতা রাখার জন্য শু-র‍্যাক কিনতে হবে। বাজেট বেশি থাকলে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার আর ওয়াশিং মেশিন কিনে নিন। ব্যস্তজীবনে এসব জিনিস কাজে লাগে বেশ। তালিকায় রাখতে পারেন রাইস কুকার, জুসার, টোস্টার, ইলেকট্রিক কেটলি কিংবা স্যান্ডউইচ মেকার। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্য উপহার পাওয়া যায়। তাই আগেই এগুলো না কেনা ভালো। 

room

ঘরের খালি কোণাগুলো ইনডোর প্ল্যান্ট আর মাটির শোপিস দিয়ে সাজাতে পারেন। বারান্দায় কিছু টবে গাছ লাগানো যেতে পারে। শোবার ঘরে খাটের পাশে রাখতে পারেন একটি টেবিল ল্যাম্প। এটি ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়াবে, তেমনি সৃষ্টি করবে রোম্যান্টিক আবহ। 

নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিয়ে সাজান নতুন সংসার। সাধ্য অনুযায়ী আসবাব আর তৈজসপত্র বাছাই করলে কম টাকাতেই সুন্দর করে ঘর সাজানো যায়। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর