শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

দুই সুপার পাওয়ারকে নিয়ে ‘খেলছে’ সৌদি

আবুল কাশেম
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১১:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

দুই সুপার পাওয়ারকে নিয়ে ‘খেলছে’ সৌদি
দুর্দান্ত খেলোয়াড় হওয়ার চেষ্টা করছেন এমবিএস

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে আবারও ঠাণ্ডা যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে রাশিয়ার। বিশ্বজুড়ে আসন্ন মন্দার জন্য খাদ্য ঘাটতি, জলবায়ু সংকটসহ নানা কারণের কথা বলা হচ্ছে। তবে এসবের মধ্যমণি হয়ে উঠেছে জ্বালানি। সোজা কথায় বললে তেল। আর এই খেলায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথার বান ছুঁড়লেও অন্যতম খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন সৌদির ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী (কার্যত দেশটির সর্বেসর্বা) মুহাম্মদ বিন সালমান।

২০১৭ সালের ২১ জুন মুহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকে সরিয়ে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স (পরবর্তী বাদশাহ) হন মুহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদি। যিনি এমবিএস নামেই পরিচিত। ক্ষমতা নেওয়ার পথে রাজপরিবারে আটক, অত্যাচার বা দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কত বড় দেশ ব্রুনাই, কেমন এর অর্থনীতি?

ভিশন-২০৩০ প্রণয়ন করে সৌদিকে বহুমুখী অর্থনীতির দেশে পরিণত করার অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়েছেন মুহাম্মদ বিন সালমান। এ লক্ষ্যে হাতে নিয়েছেন বিশাল বিশাল প্রকল্প। ঢেলে সাজাচ্ছেন সৌদির বিভিন্ন খাতকে। তারুণ্যনির্ভর এসব প্রকল্পের ধর্মীয় গুরুসহ এক শ্রেণির লোকেরা বিরোধিতা করলেও দেশটির তরুণরা এতে খুশি বলে মনে হচ্ছে। যার কারণে সৌদি তরুণদের মধ্যে এমবিএস এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

biden mbs

আসল কথায় আসা যাক। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বকে মহামারির পর নতুন করে সংকটে ফেলেছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে অবস্থান করছে তেলের বাজার। বিশ্বজুড়ে এর দাম বাড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে যাচ্ছে এর উৎপাদন বাড়াতে। সরাসরি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশকে একপ্রকার হাতেপায়ে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র। 


বিজ্ঞাপন


ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ভুলে সম্প্রতি সৌদি সফর করেছেন জো বাইডেন। হাসিমুখে হাত মিলিয়েছেন মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও। বৈঠক করেছেন দীর্ঘ সময়। এরপর একে একে এমবিএস এর শরণাপন্ন হয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো পশ্চিমা নেতারা। 

আরও পড়ুন: ন্যাটোভুক্ত হতে পারবে কি ইউক্রেন, কী করবে পশ্চিমারা?

তবে কথা দিয়ে চিড়ে ভেজেনি। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের তেল উৎপাদন ও রফতানিকারক ২৫টি দেশের সংগঠন ওপেক প্লাস। এই সংগঠনের নাটের গুরু বলা হয় সৌদি আরবকে। অপরদিকে এর সদস্য দেশ রাশিয়াও।

তেল সরবরাহ কমালে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম কমবে না। আসন্ন মন্দায় তেলের চাহিদা কমে গেলেও দাম বজায় থাকবে। আর এতে উপকার হবে রাশিয়ার। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়া চীন ও ভারতে একেবারে পানির দরে তেল রফতানি করছে। যদি বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকে তাহলে এই পানির দরে তেল বেচেও লাভের মুখ দেখবে মস্কো। কিন্তু দাম কমে গেলে চীন-ভারতকে দেওয়া তেলের দাম আরও কমাতে হবে রাশিয়াকে, যাতে লাভ নয় বরং ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

আরও পড়ুন: ইরানে বিক্ষোভ: হিজাব বিতর্কের আড়ালে কী?

ওপেকের এমন সিদ্ধান্তের পরই বেজায় চটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবের সঙ্গে দেশটির সব সম্পর্কের বিষয়ে ভাবা উচিত বলে জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সিনেটররাও। সৌদিকে পরিণতি ভোগার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাইডেন। এই বিষয়টি এখন বাইডেন ও এমবিএস এর ব্যক্তিগত আক্রোশে পৌঁছে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

mbs putin

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে গুপ্তহত্যার শিকার হন আলোচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে যে, এই হত্যার বিষয়ে জানতেন মুহাম্মদ বিন সালমান। বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমবিএস কে নানাদিক দিক দিয়ে বাঁচালেও সেই সময়ে এ নিয়ে সৌদি যুবরাজকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও এ নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। তবে সেসব ভুলেও তেলের বাজার ঠিক রাখতে সেই যুবরাজের দরজায় হাজির হন বাইডেন। 

মনে করা হচ্ছে যে, এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব এখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল ও জ্বালানির মূল্য বেশি থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিপদে পড়তে হবে বাইডেনকে। মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান অবশ্য বলছেন যে, সৌদির বিরুদ্ধে ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নেবেন বাইডেন।

আরও পড়ুন: তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কত দূর?

এদিকে তেলের বিষয়ে ওপেকের সিদ্ধান্তে রাশিয়ার জয় হয়েছে বলে মনে করা হলেও সৌদি সরাসরি রাশিয়ার পক্ষেও নেই। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিন্দা প্রস্তাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে সৌদি। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফোন করেন যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে তিনি ইউক্রেনীয়দের প্রতি সহমর্মিতা জানান। একদিন পর ইউক্রেনকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) অনুদানের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব।

ধীরে ধীরে দুই পরাশক্তি-নির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। হয়তো সেই বিশ্বে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রাকটিস এখনই শুরু করেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। একদিকে নিজের দেশকে বহুমুখী অর্থনীতিতে পরিণত করা, অপরদিকে বিশ্বে নিজের গুরুত্ব আরও কয়েকধাপ বাড়ানোর যে খেলায় নেমেছেন তিনি, রাজপরিবারের কর্তৃত্ব বজায় রাখার মতো সেই পথটা কি সহজ হবে? যদি এমবিএস জেতেন তাহলে জিতে যাবে সৌদি। আর যদি ব্যাকফুটে চলে যান তাহলে সেই দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে লাগবে বহু সময়। তরুণ এমবিএস এর মতো তারুণ্য উথলে উঠুক মুসলিমদের পবিত্র দুই মসজিদের রাহবার দেশটির। এমবিএস এর জন্য শুভকামনা, সৌদিদের জন্যও।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর