গাজার দক্ষিণাঞ্চলে গত ২৩ মার্চ ১৫ চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, তাদের সৈন্যরা ভুল করেছে।
রোববার (৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ির সমন্বয়ে গঠিত বহর রাফাহর কাছে হামলার শিকার হয়।
প্রথমে ইসরায়েল দাবি করেছিল, ওই বহরটি অন্ধকারে হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়া ‘সন্দেহজনকভাবে’ এগিয়ে আসছিল, তাই সৈন্যরা গুলি চালায়। ওই গাড়িগুলোর চলাচল সেনাবাহিনীর সঙ্গে আগে থেকে সমন্বয় করা হয়নি বলেও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু নিহত এক প্যারামেডিকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িগুলোর লাইট জ্বালানো ছিল এবং তারা আহত মানুষকে সাহায্য করতে সাড়া দিয়েছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, নিহত চিকিৎসাকর্মীদের অন্তত ছয়জন হামাসের সঙ্গে জড়িত ছিল—তবে এখনো তারা এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
বিজ্ঞাপন
আইডিএফ আরও স্বীকার করেছে, গুলি চালানোর সময় তারা কেউই সশস্ত্র ছিলেন না।
নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত ওই মোবাইল ভিডিওতে দেখা যায়, ভোর হওয়ার আগেই গাড়িগুলো রাস্তার পাশে দাঁড়ানোর পর হঠাৎ গুলি শুরু হয়।
ভিডিওটি পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলে, যেখানে প্যারামেডিক রেফাত রাদওয়ানকে শেষ প্রার্থনা করতে শোনা যায়, এরপর ইসরায়েলি সৈন্যদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় যারা গাড়িগুলোর দিকে এগিয়ে আসছিল।
শনিবার সন্ধ্যায় এক আইডিএফ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, সৈন্যরা এর আগে এক গাড়িতে থাকা তিনজন হামাস সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। পরে অ্যাম্বুলেন্স বহরটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আকাশপথ থেকে নজরদারি চালানো পর্যবেক্ষকরা সৈন্যদের সতর্ক করেন যে, ‘সন্দেহজনকভাবে’ কিছু গাড়ি এগিয়ে আসছে। যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাস সদস্যদের গাড়ির পাশে দাঁড়ায়, সৈন্যরা মনে করে তাদের ওপর হামলা হতে পারে এবং গুলি চালায়। যদিও জরুরি সহায়তাকারীদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।
ইসরায়েল স্বীকার করেছে, তারা আগে যে বলেছিল গাড়িগুলোতে লাইট ছিল না সেটি ভুল ছিল এবং এজন্য ঘটনায় জড়িত সৈন্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়েছে জানিয়ে তাদের দায়ী করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল এবং প্যারামেডিকরা উচ্চ দৃশ্যমান ক্ষমতাসম্পন্ন পোশাক পরে ছিলেন।
আইডিএফ কর্মকর্তা বলেন, ১৫ জন নিহত কর্মীর মৃতদেহ বন্য প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সৈন্যরা বালুর নিচে পুঁতে রাখে। পরদিন রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য গাড়িগুলো সরিয়ে কবর দেওয়া হয়।
ঘটনার এক সপ্তাহ পরও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিরাপদ পথের ব্যবস্থা করতে না পারায় এবং ঘটনাস্থলের অবস্থান নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়ায় মরদেহগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
পরে এক ত্রাণ দল মরদেহগুলো খুঁজে পেলে রেফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও পায়, যাতে ওই হামলার ভিডিও ছিল।
নিহতদের কারো হাত বাঁধা ছিল বা তাদের কাছ থেকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বলে কিছু প্রতিবেদনে বলা হলেও তা অস্বীকার করেছেন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেঁচে যাওয়া এক কর্মী বিবিসিকে বলেন যে, অ্যাম্বুলেন্সগুলোর লাইট জ্বালানো ছিল এবং তার সহকর্মীরা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
আইডিএফ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা এই ঘটনার একটি ‘বিশদ তদন্ত’ চালাবে, যাতে ঘটনাপ্রবাহ এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার পদ্ধতি বোঝা যায়।
রেড ক্রিসেন্টসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এমএইচটি