গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল আবারও ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে, যার ফলে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২০০ জনে পৌঁছেছে, এবং তাদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। এই হামলায় আহত হয়েছে আরও অনেক মানুষ। আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর থেকে গাজার বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রাপ্তির জন্য হাসপাতালগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে।
বিমান হামলাগুলো ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল এই প্রথম এমন ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে। ফিলিস্তিনের সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরে ইসরায়েলি বিমান গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়ে ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং আহত করেছে বহু মানুষকে।
বিজ্ঞাপন
গাজার স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, হামলার পর থেকে শহরজুড়ে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এবং আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে। হামলা এতটাই ভয়াবহ যে, স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে ভীষণ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। গাজায় হামলা শুরুর আগে, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছিল বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, হামাস, হুথি, ইরান এবং তাদের সমর্থক গোষ্ঠী যে শুধু ইসরায়েলকে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রস্ত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রশাসন এবং ইসরায়েল একে অপরকে সমর্থন জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলকে সহযোগিতা দেওয়া ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। ট্রাম্পের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই হামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন রয়েছে।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। সেসময় উদ্ধার তৎপরতার জন্য অনেক অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসককে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তবে সঙ্কট এতটাই গুরুতর যে, অনেক এলাকায় জরুরি চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া, ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামলা চালিয়েছে হামাসের কমান্ডার এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, হামাসের শীর্ষ নেতাদের উপর এই হামলা করা হয়েছে, এবং এই হামলা ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশে পরিচালিত হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসের সঙ্গে আলোচনায় ব্যর্থ হওয়ার পর, তারা এই হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, হামাসের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ইসরায়েল এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদক বারাক রভিদের মতে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের চাপের পরও, হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইসরায়েল তার বিরুদ্ধে এই আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গাজার স্থানীয় মিডিয়া এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলের এই হামলাকে অত্যন্ত অমানবিক বলে মন্তব্য করেছে। তারা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ গাজায় এমন এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, যা পুরো বিশ্বের কাছে নজিরবিহীন। মানবাধিকার সংস্থাগুলি এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনের এই সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করা। সূত্র: আল জাজিরা
এইউ