মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দেশে ১২৫ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৫ এএম

শেয়ার করুন:

দেশে প্রতি ১২৫ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়
ফাইল ছবি

অটিজম হলো শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত একটি সমস্যা বা রোগ। এতে আক্রান্ত শিশুরা সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, সামাজিক কল্পনা এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর ফলে সমাজের মূলধারা থেকে তাদের অনেকটা আলাদা করে দেয়। অটিজম আক্রান্তরা সারাজীবন পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে থাকেন। যদিও সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনার মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে ঠিক সরকারি ও বেসরকারি কোনো পর্যায়ের অটিজমে আক্রান্তদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০০৯ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশের ১ শতাংশ শিশু অটিজমে আক্রান্ত। ২০১৩ সালের আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার ৩ শতাংশ শিশু অটিজমে আক্রান্ত। আর গ্রামে প্রতি সাতশ জনে একজন শিশু অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন।


বিজ্ঞাপন


সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী, ১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে অটিজম শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫২ হাজার ৮৩৮ ও নারী ৩৩ হাজার ২৫০। এছাড়া হিজড়া সম্প্রদায়ের ৫৪ জন অটিজমে আক্রান্ত। আর দেশে প্রতিবছর ১২৫ জনের মধ্যে একজন শিশু অটিজম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

আরও পড়ুন

যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে আসছে এআই প্রযুক্তি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজমের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। এর একাধিক কারণ রয়েছে। এটি একটি মাল্টি ফ্যাক্টরিয়াল জিন ইনভারমেন্টাল ইন্টারেকশন। সামাজে অটিজম বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন শিশুকে বছরের পর বছর সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। সামাজিক কোনও আচার অনুষ্ঠানেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। এটি তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি কমে এলেও আক্রান্তরা এখনও চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে তাদের সমাজের মূলধারায় আনা সম্ভব। এতে তারা দেশে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তাদের অধিকার নিয়ে মূলধারার মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারবে।

দেশে অটিজমের বার্তমান অবস্থা


বিজ্ঞাপন


জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু ঢাকা মেইলকে জানান, ২০১৭ সালে বিএসএমএমইউর অধীনে তিন বছরের কম বয়সী অটিজম শিশুদের ওপরে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, অটিজমের মাত্রা প্রতি এক হাজারে ১৭ জন। অটিজম আক্রান্ত চারজন ছেলে হলে একজন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ অটিজমের আক্রান্ত শিশুদের আনুপাতিক হার ৪ অনুপাত ১। শহরে অঞ্চলে এর মাত্রা বেশি এবং গ্রামে কম। গ্রামের তুলনায় শহরে আক্রান্ত প্রায় ২১ গুণ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, অটিজমের কারণ ও রোগীদের অবস্থা নিয়ে দেশে বেশ কয়েকটি স্টাডি হয়েছে।

আরও পড়ুন

তামাকে কার্যকর করারোপ রুখবে ১১ লাখ অকাল মৃত্যু

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গড়ে প্রতি ১২৫ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের সিমটম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অটিজমের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এর একাধিক কারণ রয়েছে। এটি একটি মাল্টি ফ্যাক্টরিয়াল জিন ইনভারমেন্টাল ইন্টারেকশন। একজন মানুষ অটিজমের বৈশিষ্ট্য থাকবে কি না তা জিনের মধ্যে নির্ধারণ করা থাকে। পরিবেশ যদি তার প্রতিকূলে থাকে সেটার জন্যও অটিজম দেখা দিতে পারে। কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশু, গর্ভবতী অবস্থায় যেসব মায়েদের পুষ্টিহীনতা থাকে তারা অটিজমের অধিক ঝুঁকিতে থাকে। এটিকে একটি রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অটিজমের লক্ষণ ও করণীয়

ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু বলেন, অটিজম আক্রান্ত শিশু দেড় বছর বয়স থেকে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। তিন বছরে এসে পুরোপুরি চিত্রটা প্রকাশ পায়। এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে। আক্রান্তরা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। স্বাভাবিক শিশুরা যে ধরনের খেলাধুলা করে, অটিজম আক্রান্তরা সে ধরনের খেলাধুলা করে না। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বোতল, ব্রাশ কিংবা কাগজের টুকরো নিয়ে খেলাধুলা করে। এ ধরনের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় কম, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। এদের ঘুমজনিত সমস্যা থাকে। আক্রান্তদের হজমের অসুবিধা হয়। কখনো কখনো তারা অধিক পরিমাণে হাইপার (রাগান্বিত) থাকে। অটিজমে ভোগা শিশুদের অনেকেরই খিঁচুনি ও মৃগী রোগ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে শিশু স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কাজ করতে চায় ইউনিসেফ

অটিজম বিষয়ে রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও বাঁধা তুলে ধরে ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, অটিজম নিয়ে বাংলাদেশের একটি কর্মকৌশল রয়েছে। তাদের মূলধারায় নিয়ে আসতে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা সারাবিশ্বের কাছে একটা উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজম ও স্নায়ুবিক সমস্যাযুক্ত শিশুদের নিয়ে যে ধরনের পলিসি গ্রহণ করেছে তার বেশিরভাগ পলিসির প্রস্তাবক ও উত্থাপক বাংলাদেশ। তবে পলিসির জায়গায় আমরা যতদূর এগিয়েছে কাজের জায়গায় ততটা এগোতে পারিনি। আগামীর দিনগুলোতে এ সংক্রান্ত যে পলিসি ও নীতিমালা রয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ।

এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, অটিজম নিয়ে আমাদের একটি সামাজিক স্টিগমা রয়েছে। আমরা তাদের নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করি। আমাদের কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। কোন একটি একক প্রতিষ্ঠান, বিভাগ বা ব্যক্তির পক্ষে এটির সমাধান করা সম্ভব নয়। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনই সমাজসেবা, শিক্ষা ও সিভিল সোসাইটির গুরুত্ব রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমেরও গুরুত্ব রয়েছে। সবাইকে নিয়ে যদি একসঙ্গে কাজ করা যায়, তাহলেই এটি কার্যকরী হবে৷ এই বাধাটুকু মোকাবিলা করা গেলে অটিজমে আক্রান্তদের সমাজের মূলস্রোতে আনা যাবে।

এমএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর