বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

হাতি শান্ত থাকলেও বানরটা একটু খিটখিটে ছিল: হিমি 

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
দর্শকপ্রিয়তা উপচে পড়ে অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির। জীবনঘনিষ্ঠ ও ব্যতিক্রমী চরিত্রে অনবদ্য তিনি। ঈদের নাটকেও রয়েছে সেই ছাপ। এবার হিমি অভিনয় করেছেন বানর ও হাতির সঙ্গে। ‘নিহারকলি’ নামের নাটকে তার সহশিল্পী হাতি এবং ‘স্বপ্ন চুরি’তে বানর। নাটক দুটিতে কাজের অভিজ্ঞতা ঢাকা মেইলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী। 

শুরুতেই কথা হলো ‘নিহারকলি’ নিয়ে। মাহুত পরিবারের গল্পে নির্মিত নাটকটি নিয়ে হিমি বলেন, ‘‘এখন হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করে টাকা তোলা হয়। একসময় সার্কাস, বিয়ে বাড়িসহ বিভিন্ন উৎসবে খেলা দেখাত হাতি। এখন এভাবে খেলা দেখিয়ে উপার্জন কমে গেছে। এর-ই ভুক্তভোগী একটি মাহুত পরিবার। তাদের নিয়েই ‘নিহারকলি’ নাটকটি। কথায় আছে, হাতি কেনার চেয়ে পোষা কঠিন। প্রচুর ব্যয়। এরকম টানাপোড়নে পড়েছে পরিবারটি। না পারছে হাতিটি পুষতে, না পারছে ফেলতে। কেননা হাতিটির প্রতি মায়া জন্মেছে।’


বিজ্ঞাপন


481159320_1577239413220043_1881585243254229494_n

নাটকটিতে নিজের চরিত্র নিয়ে হিমি বলেন, ‘ওই পরিবারের পুত্রবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। আমার বিপরীতে আছেন নিলয় ভাই। আমাদের একটি অন্ধ ছেলে আছে। শুরুর দিকে আমার চরিত্রটি নেতিবাচক। যে হাতিটিকে পরিবার থেকে ছেঁটে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রয়োজনে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে চায়। আমার চরিত্রটা হাতিকে যে অপছন্দ করে তা না। সেও নিহারকলিকে ভালোবাসে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তার আচরণে রূঢ়তা প্রকাশ পায়।’

এরপর বলেন, ‘এই হাতির সঙ্গে ওই পরিবারের যে শুধু দুঃসময়ে কেটেছে তা নয় সুসময়ও ছিল। নাটকে নিলয় ভাই আমাকে বলেন, তোমার মনে নেই বিয়ের সময় হাতির ওপর উঠতে ভয় পাচ্ছিলে। তখন ফ্লাশব্যাকে দেখানো হয় দৃশ্যটি। হাতির পিঠে উঠে আমি ভয়ে কান্নাকাটি করছি। নামাতে বলছি।’

‘নিহারকলি’র চরিত্রগুলো নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘এই গল্পে প্রত্যেকটি চরিত্রের আলাদা আলাদা জায়গা আছে। যেমন আমার ছেলে অন্ধ। তার কৌতুহল হাতি দেখতে কেমন। এটা তার অসহায়ত্ব। এরকম চরিত্রগুলোর বিকাশের জায়গা আছে।’


বিজ্ঞাপন


3936b1f8-82bf-413a-8262-0c00eadbb327

‘স্বপ্ন চুরি’তেও নেতিবাচক চরিত্রে হিমি। তার কথায়, ‘‘আশ্চর্যজনকভাবে ‘নিহারকলি’র মতো ‘স্বপ্ন চুরি’তেও আমার চরিত্র নেতিবাচক। এখানেও টানাপোড়নে গল্প। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নিলয় ভাই বানরের খেলা দেখায়। এই মানুষগুলো কীভাবে জীবন যাপন করছেন সেই গল্প নিয়েই ‘স্বপ্ন চুরি’ নাটক।’’

পশুপাখির প্রতি হিমির ভালোবাসার কথা অনেকের জানা। নাটক দুটিতে কাজ করতে গিয়েও ভাব জমেছিল বোবা প্রাণী দুটির সঙ্গে। তার ভাষ্য, ‘পর্দায় নেতিবাচক হলেও বাস্তবে আমি অ্যানিমেল লাভার। ছোটবেলা থেকে পশুপাখির প্রতি আমার ভয় একটু কম। শৈশবে গ্রামে গেলে ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতো। নাটকেও ব্যতিক্রম হয়নি। নেতিবাচক চরিত্র করলেও আমার সঙ্গে বেশি খাতির হয়েছিল হাতিটির। কারণ আমি ব্যাগে সবসময় বিস্কুট, ফল ফলাদি রাখতাম। একটু পরপর ওকে খাওয়াতাম। কিন্তু হাতির তো অল্পে হয় না। তাই দেখে প্রোডাকশনকে দিয়ে কয়েক কেজি বিস্কুট আনিয়েছিলাম। এরপর থেকে সামনে গেলেই হাতি ভাবত নিশ্চয়ই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছি। আমার সামনে শুঁড় এগিয়ে দিত। দুই দিনের মধ্যেই ওর সঙ্গে দারুণ আলাপ হয়েছিল। তাই দেখে মাহুতরা বলছিলেন, আমার সামনে যতটা শান্তশিষ্ট  হাতিটা আসলে ততটা শান্ত না। ও বুঝতে পেরেছে আমি ওকে ভালোবাসি। এই হাতির একটি অতীত আছে। কিশোরগঞ্জে হাতির আক্রমণে ওষুধ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছিল। এখনও গুগলে কিশোরগঞ্জের হাতি লিখলে সেই হাতিটির তথ্য আসে। এটি-ই ওই হাতি।’

486669570_1595921264685191_6770034665865966541_n

এরপর বানরের অথায় আসেন, ‘তবে হাতি শান্ত থাকলেও বানরটা একটু খিটখিটে ছিল। এর অবশ্য কারণ আছে। বানরটা বয়স্ক ছিল। ৪৮ বছরের মতো হবে। সে কারণেই বোধহয় মেজাজ গরম থাকত। অন্যদিকে হাতির বয়স ছিল ২২ বছর। তবে হাতির মতো বানরের সঙ্গেও আমার বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। যদিও তার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারিনি। মাত্র একদিন শুটিং ছিল।’

হাতির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘শুটিংয়ের আগে থেকেই আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। কেননা এর আগে কখনও হাতির পিঠে উঠিনি। তাই সেটে গিয়েই হাতির পিঠে উঠে দেখেছি কেমন লাগে।’

তবে কিছুটা বানরভীতি ছিল। উল্লেখ করে বলেন, ‘বানরের প্রতি কিছুটা ভয় কাজ করত। কেননা ছোটবেলার একটি স্মৃতি আছে। আমি পুরান ঢাকায় বড় হয়েছি। গেন্ডারিয়ায় কিন্তু প্রচুর বানর। স্কুলে যাওয়ার সময় বাসায় গেটেও বসে থাকত। আমাদের বাসায় সব সময় কলা ও কাঁচা বাদাম থাকত। আম্মু একদিক দিয়ে খাবার দিলে বানর খাওয়ায় মন দিত। অন্যদিক দিয়ে আমাকে নিয়ে যেত। একবার ছাদে আম্মু কাপড় শুকাতে দিয়েছিল। আমি গিয়ে দেখি বানরের ছোট একটা বাচ্চা। এত কিউট লাগল যে ওকে ধরে বাসায় নিয়ে এলাম। এরপর ওর পুরো পরিবার আমাদের বাসা ঘেরাও করেছিল। এরপর থেকে একটু ভয় পেতাম। যদিও আগে থেকেই আমি কোনোকিছু চিন্তা না করেই পশু পাখির গায়ে হাত দিতাম, ধরতে যেতাম। তবে ওই ঘটনার পর থেকে বানরের ক্ষেত্রে একটু ভয় কাজ করত।’

474149329_1545831463027505_1545360221899616187_n

পশুপাখি নিয়ে নাটক শুধু কাজের খাতিরে করেন না হিমি। ভালোবাসার তাগিদও থাকে। তার কথায়, ‘পশু পাখিদের নিয়ে নাটকগুলো যে শুধু পেশার জায়গা থেকে করি তা কিন্তু না। নিজেদের উদ্যোগেও করা হয়। অনেক সময় নিলয় ভাইও আইডিয়া দেন। এটা মূলত পশুর পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে। কেননা ফানি কনটেন্ট অনেক করা হয়। এরমধ্যে দুই-একটা এরকম কাজ করি যাতে পশু-পাখির প্রতি মানুষের উদারতা বাড়ে।’

সবশেষে সহশিল্পী নিলয় আলমগীরের একটি মহৎ উদ্যোগের কথা জানান হিমি। তিনি একটি ফাউন্ডেশন করছেন। স্নেহ ফাউন্ডেশন। সঙ্গে হিমিও আছেন। এটি মূলত পশু পাখিদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। পথের, অসুস্থ পশু পাখিদের জন্য কাজ করে ফাউন্ডেশনটি। হিমি জানান, এখনও স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়নি। আপাতত বোট ক্লাবের পাশে একটি অস্থায়ী আশ্র্যকেন্দ্রে কাজ চলছে। 

‘নিহারকলি’ ও ‘স্বপ্ন চুরি’ ঈদে মুক্তি পাবে। দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখা যাবে নাটক দুটি। ‘নিহারকলি’ নির্মাণ করেছেন ফজলুল হক। ‘স্বপ্ন চুরি’ বানিয়েছেন জাকিউল ইসলাম রিপন।

আরআর 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub