‘ডাল উৎপাদনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ দেশে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। ইনপুট করছে দেশের খাদ্যদ্রব্যের প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ। টিসিবি’র সরকারি অর্ডারে ৭০-৮০ শতাংশ সরকারকে সহযোগিতা করছে। জিডিপি অর্থনীতিতে আমরা বড় ভূমিকা রাখতে চাই।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজশাহীর পবায় নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পার্টনারস মিট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নাবিল গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং সিইও কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের 'পার্টনারস মিট-২০২৪' আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক ডিলার, পার্টনার, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীসহ ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। এই আয়োজনে অতিথি, ডিলার ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নাবিল গ্রুপের সিইও। এরপর আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহান বক্স মন্ডল বলেন, ২০০৬ সাল থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এলাকার মানুষের, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নাবিল গ্রুপ কাজ করছে। আমরা পারতাম ঢাকায় গিয়ে ফ্যাক্টরি করতে। কিন্তু গ্রামের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য গ্রাম থেকে শুরু করেছি। নাবিল গ্রুপ সামাজিক সমস্যা সমাধানেও চেষ্টা করে যাবে। সততার সাথে আমরা ব্যবসা করছি। আমাদের ব্যবসায় কোনো ছলচাতুরী ও ভেজাল নাই। আমি দৈনিক ১০-১১ ঘণ্টা থাকি ফ্যাক্টরিতে। এখানে চেকিং হয়, আমি নিজে দেখি।
তিনি আরও বলেন, এলাকার লোকের জন্য নানা প্রোগ্রাম আছে আমাদের। অসুস্থ রোগীদের জন্য নিজস্ব ফান্ড করেছি, গরিব ও দুঃস্থ লোকদের সহায়তা করা হয়। নাবিল ফিড মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান বলেন, সারাদেশে আলো ছড়াচ্ছে নাবিল গ্রুপ। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। মানুষের কল্যাণের চেষ্টায় রয়েছি আমরা।
নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং সিইও কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ৫ লাখ টাকায় শুরু করে এখন ৪০ হাজার কোটি টাকার বিজনেস করছি। দেশের খাদ্যদ্রব্যের প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ ইনপুট আমরা করি। বাংলাদেশের খাদ্য ও কৃষিপণ্য সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। গ্রুপটি গম, মসুর ডাল, মটর ডাল ও সয়াবিন মিলসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশের মোট গম আমদানির ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মসুর ডালের ৪৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং মটর ডালের ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে নাবিল গ্রুপের মাধ্যমে। ফলে বাংলাদেশের ভোগ্য পণ্যের বাজারে বড় আমদানিকারক হয়ে উঠেছে নাবিল গ্রুপ।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, নৈতিকতা ও গুণগত মানে আপসহীন নাবিল গ্রুপ পণ্য আমদানি ছাড়াও কিছু ভোগ্য পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে চাল উৎপাদনে এই গ্রুপ দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নাবিল গ্রুপ বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির দৈনিক চাল উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩৬৪ টন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, কৃষি শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নাবিল গ্রুপ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে চলেছে। দেশের ফুড বিজনেস, এগ্রি বিজনেস, ট্রেডিং সেক্টর এবং সার্ভিস সেক্টর নিয়ে কাজ করা নাবিল গ্রুপের ২০টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁসহ দেশের প্রায় ১ লাখ মানুষের রুটি-রোজগারের প্রত্যক্ষ সহযোগী নাবিল গ্রুপ।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২১ বিলিয়ন ডলার ইনপুট করেছি। ১১ লাখ মেট্রিক টন খাবার উৎপাদন হয়। ডাল উৎপাদনে আমরা বাংলাদেশে নাম্বার ওয়ান। টিসিবি’র সরকারি অর্ডারের ৭০-৮০ শতাংশ আমরা সরবরাহ করি। আমি বিশ্বাস করি, আগামী ২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ জয় করে আমরা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাব।
ঋণ প্রসঙ্গে নাবিল গ্রুপের এমডি এবং সিইও বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সব ব্যাংক ঋণ আমরা পরিশোধ করতে সক্ষম হব। আমরা শুধু ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা করি না। আমাদের শক্তি আমাদের ডিলার ও পার্টনাররা। আমরা প্রফিটের জন্য বিজনেস করি না। যেকোনো দুর্যোগে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। দেশের সবচেয়ে বড় সিএসআর নাবিল গ্রুপের। সর্বশেষ প্রায় ১০ কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছি।
এএ/এফএ