জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। তবুও থেমে নাই তার জীবন সংগ্রাম। দুই হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেছেন। পরেছেন কলেজেও। কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে আর এইচএসসি পরীক্ষায় বসা হয়নি তার। সংসারের হাল ধরতে হয় এক সময়। আয় সামান্য হলেও তিনি সন্তুষ্ট। নিজের পরিশ্রমের উপার্জিত অর্থে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে চান প্রতিবন্ধী এই যুবক।
আত্নসম্মানে বলিয়ান এই প্রতিবন্ধী যুবকের নাম মো. রুবেল মিয়া (২৩)। তিনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এই গ্রামের মো. হবি মিয়ার ছেলে। তিল্লি ব্রিজের ওপর বসে রুবেল তিনি বাদাম বিক্রয়ের ব্যবসা করেন।
বিজ্ঞাপন
রুবেলের পরিবারে তিনি ছাড়াও রয়েছেন মা-বাবা ও দুই বোন। দিনমুজুর বাবা সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। কোনো কোনো দিন না খেয়েও তাদের দিন কাটে। সংসারের হাল ধরতে তিন বছর আগে ২শ ৯০ টাকা নিয়ে রুবেল বাদাম বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ টাকার বাদাম বিক্রয় করেন। এই বিক্রি থেকে ২শ থেকে ৩শ টাকা প্রতিদিন লাভ হয় তার। লাভের টাকাটা সংসার চালাতে তার বাবার হাতে তুলে দেন। রুবেল মিয়ার মনে অনেক কষ্ট থাকলেও সবসময় হাসি মুখে থাকেন। স্বপ্ন দেখেন এই বাদাম বিক্রি করেই একদিন বড় ব্যবসায়ী হবেন তিনি। তখন তাদের সংসারে আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
তিনি বলেন, আল্লাহ্ যেমনি রাখেন, তেমনি ভালো আছি। আমি পরিশ্রম করে বড় হতে চাই। মানুষের কাছে হাত পাততে চাই না।
রুবেল জানান, প্রায় ৫ বছর আগে তার বড় বোন রুমা আক্তারের বিয়ে দিয়েছেন। নিজেও প্রায় ১ বছর আগে পাশের গালা গ্রামের বিলায়েত আলীর মেয়ে শারমিন আক্তারকে (২০) বিয়ে করেছেন। রুবেলের ছোট বোন সুমা আক্তার (১৪) লেখাপড়া করেন ৮ম শ্রেণিতে। এখন রুবেলের প্রথম স্বপ্ন তার বোনকে পড়ালেখা শিখিয়ে ভালো দেখে একটা ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার।
বিজ্ঞাপন
রুবেলের বন্ধু রাকিব হোসেন শাওন বলেন, রুবেল আর আমি এক সঙ্গে মানিকগঞ্জ শহরের খানবাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজে পড়ালেখা করতাম। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সে জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে অটো বা রিকশা ভাড়া দিয়ে কলেজে আসা সম্ভব ছিল না তার। কলেজে এক বছর লেখাপড়া করলেও এইচএসসি পরীক্ষা সে দেয়নি। আমার বন্ধু এখন বাদাম বিক্রয় করেন। তার দুই হাত না থাকার কারণে টাকা নিতে বা বাদাম মেপে দিতে কষ্ট হয়। সে কারণে আমি প্রায় প্রতিদিন বিকেলে ব্রিজে এসে বন্ধুর পাশে বসে তার বাদাম বেচতে সহযোগিতা করি। শুধু আমি নয়, তার স্কুল কলেজের সকল বন্ধুরাই তাকে অনেক ভালোবাসে এবং তার বাদাম বিক্রয় করতে সহযোগিতা করে।
রুবেলের বাবা জানান, রুবেল জন্মগ্রহণ করে দুই হাত ছাড়া। তাকে এত বড় করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন, আয় অনেক কম। এ কারণে সংসারে তাদের অভাবে লেগেই থাকে।
তিল্লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ধলা বলেন, মো. রুবেল মিয়া ভালোমনের একজন মানুষ। তার দুই হাত না থাকলেও সে অনেক পরিশ্রম করে তার সংসার চালান। তাকে কিছুদিনে মধ্যে পরিপূর্ণভাবে একটি দোকান বানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও ব্যক্তিগত বা সরকারিভাবেও সাহায্য করা হবে।
টিবি