বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয় চার স্থানে। চারটি ভবনে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বিদ্যাপীঠটি অস্থায়ী ক্যাম্পাস, অপর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়েই চলছে। শিক্ষার্থীদের জন্য নাই কোনো ক্যান্টিন। ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নেই। রয়েছে অধ্যাপক ও উপ-ভিসিও পদও শূন্য।
২০১৫ সালের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দেশের ৩৫তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আইন পাস হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ৯জন শিক্ষক ও ৩টি বিভাগে ১০৫ জন শিক্ষার্থী দিয়ে পাঠদান কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাত্রা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বর্তমানে ৫টি বিভাগ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিভাগগুলো হলো-বাংলা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও সংগীত। ছাত্র-ছাত্রী্র সংখ্যা ৮০০ জন। প্রয়োজনের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ শিক্ষক নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক প্রয়োজন ১০০ জন অথচ আছে ২৫জন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্লাস চলছে। শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে একাডেমিক ভবন-১, মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজে একাডেমিক ভবন-২। বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। ভাড়া বাড়ি নিয়ে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে প্রতি মাসে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। ছাত্রদের জন্য নেই আবাসিক হল, ছাত্রীদের ভাড়া করা একটি হল রয়েছে যেখানে ৩৫জন ছাত্রী থাকতে পারবে।
শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পাঠদান হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বিভাগের। এগুলো হলো- সংগীত, বাংলা, অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞান। মাওলানা সাইফউদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজে হয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের ক্লাস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় আমরা যে সরকারি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া করি এটা কাউকে বলতে পারি না। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি তখন সবাই মনে করে আমরা যেন মহিলা কলেজে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপাড়া করার যে মজা সেটা পেলাম না। আমাদের এই ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসের দূরত্ব প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। আর সেখানে ভ্যানে বা রিকশায় যেতে খরচ হয় ১৫-২০ টাকা।
ছাত্রদের জন্য কোনো আবাসিক হল না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, আমাদের এখানে আবাসিক কোনো হল নেই। আমার বাড়ি অন্য জেলায় তাই আমি মেসে থেকে এসে ক্যাম্পাসে লেখাপড়া করি।
বিজ্ঞাপন
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রিফাত-উর-রহমান বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। মহিলা কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আসতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। সবাই বলে আমরা নাকি মহিলা কলেজের শিক্ষক।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বিজন কুমার বলেন, গবেষণা খাতে চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম। গবেষণা খাতে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো, এখন প্রায় এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। তবে এটা পর্যাপ্ত না।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়টি নানাভাবে অবহেলিত ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১০০ জনের কাছাকাছি শিক্ষক রয়েছে। প্রতিটা বিভাগে প্রায় ২০ জন করে শিক্ষক আছে। কিন্তু আমার এখানে মাত্র ২৫ জন শিক্ষক এবং খন্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৮ থেকে ১০জন। ইউজিসি থেকে এখানে কোনো শিক্ষক দিচ্ছে না। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।
ভিসি অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম আরও বলেন, বর্তমানে গবেষণায় আমাদের ৮-১০টি প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। আমাদের এখানে ২০টি কম্পিউটার দিয়ে ল্যাব রয়েছে। এই ল্যাবে প্রায় ৪০জন শিক্ষার্থী বসে কাজ করতে পারে। সিন্ডিকেট সভায় পিএইচডি করার অনুমোদন দিয়েছে। তবে শিক্ষক সংকটসহ নানান সমস্যার কারণে আমরা এখনও পিএইচডি শুরু করতে পারিনি।
শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে নিজস্ব ক্যাম্পাসই নেই, সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আবার আবাসিক হল! তবে ছাত্রদের জন্য আবাসিক কোনো হল না থাকলেও ছাত্রীদের জন্য ভাড়া করা একটা হল রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩৫জন রয়েছে। এখানে বছরে সরকারি যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা অন্যন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক কম। প্রতি মাসে ভাড়া এবং শিক্ষকদের বেতন দিতে হয় ১১ লাখ টাকার উপরে। নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য প্রকল্প করা হয়েছে এবং সেটা ডিপিপি হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের হাতে রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই নিজস্ব ক্যাম্পাস পাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিনিধি/একেবি