বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ছাত্রলীগের ‘আদু ভাই’রা এবার ক্যাম্পাস ছাড়বে তো?

রেদ্ওয়ান আহমদ
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২৩, ০১:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ফাইল ফটো

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে রয়েছে— ছাত্রত্ব না থাকলে সংগঠনে থাকতে পারবেন না। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের জন্য সে নিয়ম যেন কথার কথা। এক বছরের কমিটি চার বছর পূর্ণ করতে চলল। এ ইউনিটটি বর্তমানে চলছে ‘অছাত্র’ ও ‘আদু ভাই’দের হাত ধরে। সামনাসামনি ‘আদু ভাই’ সম্বোধন করতে না পারলেও পেছনে সবাই কমবেশি এ নামেই ডাকে তাদের।

গত বছরের ৩১ জুলাই ঘোষিত ৪২৫ সদস্যের কমিটির প্রায় ২৫০ জনের ছাত্রত্ব ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এরমধ্যে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল হক রুবেল। নিজস্ব প্রাইভেটকার নিয়ে তিনি ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ান দাপটের সঙ্গে।


বিজ্ঞাপন


সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অবস্থাও প্রায় একই। তিনি চবির মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে অর্ধ যুগ আগে।

বিবাহিত, চাকরিজীবী ও গত চার-পাঁচ বছরে ক্যাম্পাস বা ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় নয়- এমন নেতার সংখ্যাও অনেক। এছাড়া অন্যায় ও শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে বহিষ্কৃত প্রায় ৩০ জন ছাত্রলীগ কর্মীকেও প্রকাশ্যে অবস্থান করতে দেখা যায় এ ক্যাম্পাসে।

তবে এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করা এমন সাবেক ও বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে মাদক বিক্রি ও সেবন বন্ধ করতে ক্যাম্পাস এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গোপন ও সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী যেকোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সম্ভাব্য মাদক বিক্রির স্থান ও মাদক সেবনের স্থানসমূহে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।


বিজ্ঞাপন


পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হল ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকারী ছাত্রত্বহীন, বহিষ্কৃত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। ১৫ মার্চের পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রত্ববিহীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের জরুরি ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। সভায় চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দেসহ ডিসিপ্লিনারি কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহীদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী অছাত্র, বহিরাগত, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করাতেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৫ মার্চ থেকে প্রতিদিন আমাদের অভিযান চলবে।

তবে সাধারণ অনেক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের চবি ইউনিটের বহিষ্কৃত ও ছাত্রত্বহীন ‘আদু ভাই’রা কি তাহলে এবার ক্যাম্পাস ছাড়ছেন?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ অবশ্যই প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা মাথা পেতে নেব।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন