রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে কেঁচো সার বানিয়ে কৃষাণীদের লাখ টাকা আয়

মো. জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২২, ০৪:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে কেঁচো সার বানিয়ে কৃষাণীদের লাখ টাকা আয়
ছবি: ঢাকা মেইল

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় কেঁচো সার উৎপাদন করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি নিজের ভাগ্য বদল ও স্বাবলম্বী হওয়ার দেখচ্ছেন স্বপ্ন দেখছেন অর্ধশতাধিক কৃষাণী।

গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও নিজেদের চাহিদা পূরণ করে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের চাহিদা পূরণ করছে তাদের সার।

>> আরও পড়ুন: রসে ভরা রাঙামাটির ‘হানিকুইন’


বিজ্ঞাপন


প্রতিমাসে এই খামার থেকে তারা আয় করছেন লাখ টাকা। ফলে মাত্র এক বছরের মধ্যে নিজেদের সফল খামারি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন তারা। সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা রিং, কারেন্ট ও হাউজ পদ্ধতিতে এ সার উৎপাদন করা হচ্ছে।

এদিকে কৃষাণীদের তৈরীকৃত কেঁচো সার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলাকাতে। তা দেখে এখন উপজেলার অনেক যুবক ও নারীরা বিষমুক্ত এ জৈব সার উৎপাদনে ঝুঁকছেন।
sarকথা বলে জানা যায়, ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে অতিরিক্ত ব্যায় করতে হয় কৃষকদের। আর এই ব্যায় কমাতে কেঁচো দিয়ে তৈরীকৃত সার উৎপাদন শুরু করেন তারা। হাতের নাগালে ভালো মানের এ সার পাওয়ায় এখন কৃষকরা তা কিনে নিজ জমিতে প্রয়োগ করছেন। ফলে ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কেঁচো সারের কোনো বিকল্প নেই।

>> আরও পড়ুন: ষোল ফুটের ভাঙা ঘরে হ্লাম্রার সংসার, চাই মাথা গোঁজার ঠাঁই

মো. আশরাফ হক নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, ‘এ বছর কেঁচো সার দিয়ে ধান ও মরিচের আবাদ করেছিলাম। ফলন অনেক ভালো হয়েছে।’

লুৎফর হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘এই সার দিয়ে ধান, ভুট্টা, মরিচ ও মুগডাল আবাদ করেছি। অন্য সারের তুলনায় খরচ অনেক কম হয়েছে।’
sarকমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (সিডিএ) দিনাজপুর এর আর্থিক সহায়তায় উপেজেলার গাংগুয়া গ্রামে জৈব কৃষি চর্চা নারী উন্নয়ন জনসংগঠনের ৩৬ জন নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গত বছর এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ সংগঠনের সহায়তায় গড়ে তোলা হয়েছে কেঁচো সার তৈরির শেড। বাড়ির কাজ শেষ করে অবসর সময়ে এটা নিয়েই ওই নারীদের ব্যস্ততাপূর্ণ সময়। এখন কেঁচো সার উৎপাদন ও বিপণনে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।

>> আরও পড়ুন: স্কুল নয়, যেন একটি শিশু পার্ক


বিজ্ঞাপন


সংগঠনের সদস্য হাজেরা বলেন, সিডিএ’র সহযোগিতায় গত বছর আমরা কেঁচো সারের ২০টি হাউজ তৈরি করি। এ শেড থেকে যে সার উৎপাদন হয় সেগুলো বিক্রি করি ১৫-১৮ টাকা কেজি দরে। এপর্যন্ত আমরা এই শেড থেকে লক্ষাধিক টাকার অধিক কেঁচো সার বিক্রি করেছি।

আশরাফি খাতুন নামে এক গৃহবধূ বলেন, কেঁচো, গোবর, কচুরিপানা, কলাগাছ, খড়কুটা দিয়ে মাত্র ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই তৈরী করা যায় এই কেঁচো বা জৈব সার। শেডের ভেতরে অর্থাৎ বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন যেমন সহজ, তেমনি এর চাহিদাও বেশি। এতে ঝামেলাও কম ও অতিরিক্ত আয় হয়। নিজেদের জমিতে এ সার ব্যবহার করার পাশাপাশি অন্যদের কাছে বিক্রিও করছি। এ সারের ব্যবহারের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকার বেশিরভাগ কৃষক এখন অন্য সারের পরিবর্তে এই সার ব্যবহার করছেন।
sarসিডিএ’র মহলবাড়ি ইউনিট ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উচ্ছিষ্ট, গোবর, তরকারির খোসাসহ আবর্জনা দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এগুলো ফসলের জন্য খুবই উপকারী। গত বছর আমাদের এনজিও থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে এই জনসংগঠনের সদস্যদের টিনের শেডে ২০টি হাউজ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা এখান থেকে সার উৎপাদনের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে আর্থিকভাবে ভালোই লাভবান হচ্ছেন।

>> আরও পড়ুন: ভূমি সেবায় ‘মাটির আলো’ ও একজন এসি ল্যান্ড সাবরিনা শারমিন

রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘কেঁচো সার ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক ভালো। এ সার ব্যবহারের খরচও অনেক কম। এছাড়া দিন দিন এ সার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে এবং কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর