শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

স্কুল নয়, যেন একটি শিশু পার্ক

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২, ০৪:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সারি সারি ফুলের গাছ, বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম ও শিশু বান্ধব মনোরম এক পরিবেশ প্রথম দেখায় যে কারও মনে হতে পারে এটি কোন শিশু পার্ক। তবে শিশু পার্ক নয়, এটি নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। শিক্ষার্থীদের জন্য মনোরম পরিবেশ আর পড়াশুনায় উদ্যম ফেরাতে এমন উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে দেখা যায়,  স্কুলের সামনের অংশে নানা জাতের ফুল গাছের মাধ্যমে করা হয়েছে সৌন্দর্য বর্ধন। পরিপূর্ণ পরিকল্পনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি শিশু পার্কের মত। আর তারই মাঝে বসানো হয়েছে স্লাইড, স্লীপার, দোলনা, জঙ্গল জিম সহ শিশু পার্কের বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম। শুধু শিশুরা নয় এমন পরিবেশে মুগ্ধ হতে বাধ্য সব বয়সের মানুষ।

মনোরম এমন পরিবেশে এক সাথে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা খেলাধুলা ও শিশু পার্কের মত ঘোরাঘুরি সুযোগ হওয়ায় স্কুল বিমুখ অনেক শিক্ষার্থী হয়েছে স্কুলমুখী। বেড়েছে শিক্ষার্থীদের তুলনা মূলক উপস্তিতি ও পড়াশোনার চাহিদা। এছাড়াও স্কুলের এমন নিরাপদ পরিবেশে নিশ্চিন্ত মনে বাচ্ছাদের স্কুলে পাঠানোর পাশাপাশি খুশি অভিভাবকরা।

বালাগ্রাম মন্তের ডাঙা এলাকার ছবিতা রানীর ছেলে বিমল বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগে বিমলকে স্কুলে পাঠাতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হতো ছবিতা রানীকে। 


বিজ্ঞাপন


তবে এখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বিমল নিজেই উদ্যমী জানিয়ে ছবিতা রানী বলেন, বিমল আগে স্কুল যেতে চাইত না। সে অনেক ঝামেলা করত স্কুলে যেতে এখন তাকে আর বলা লাগে না। সেদিন স্কুলে গেলাম স্কুলের পরিবেশ দেখে অবাগ হয়েছি। বিমল ও তার বন্ধুরা খেলছিল টিফিন টাইমে। এমন স্কুল সচারাচর দেখা যায় না ধন্যবাদ স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

একই এলাকার বিপ্লব ঘোষ বলে, শুধু স্কুলের পরিবেশ নয়, পরিবেশের মতই সুন্দর স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা। তারা ছেলে মেয়েদের এমন যত্ন নেন শিক্ষকরা তা এখানে না দেখলে বুঝতাম না। স্কুলটির রেজাল্ট ও অনেক ভালো। আর পরিবেশ তো আপনারা দেখলেন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছামিয়া আক্তার বলে, আগে মাঠটা ফাঁকা ছিল। কেমন দেখাতো সার পার্কের মত করে দিছে। এখন আমাদের খেলাধুলা আর পরিবেশটাও ভালো লাগে। আমি নিয়মিত স্কুলে আসি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আফজালুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে আমরা মনে করি যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। যখন স্কুলে আসতে চায় না তখন তাদের স্কুলের প্রতি তত আগ্রহ থাকে না। আমাদের চিন্তা হয়েছে যে স্কুলের প্রতি কিভাবে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়। স্কুলে তারা নিয়মিত হলে তারা পড়ালেখার ক্ষেত্রে এমনিতে আগ্রহী হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এই আমরা উদ্যোগ নেই, যে স্কুলের পরিবেশটা শিশু বান্ধব করি। পরিবেশ যখন শিশু বান্ধব হবে তখন শিক্ষার্থীদের পিছনে আমাদের ছুটতে হবে না, শিক্ষার্থীরাই প্রতিদিন স্কুলে আসবে। সে জায়গা থেকে এই ব্যতিক্রম কিছু করা। এতে আমার সহকর্মীরা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার আমাদের অনেক সাহায্য করেছে দিক নির্দেশনা দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান বলেন, শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড। যদি আমরা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে জাতি অনেক টা পিছিয়ে থাকবে। দীর্ঘ ২ বছর করোনা মহামারির কারণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে অনেক টা দূরে থাকার কারণে তারা স্কুলমুখি হন নাই। তাদের শিক্ষার পরিবেশ থেকে অনেকটাই তারা দূরে ছিল। এই ভীতি কাটিয়ে তোলার জন্য আমাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। তাদের স্কুল ভীতি কাটিয়ে পুনরায় তাদের স্কুলের পরিবেশে নিয়ে আসার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি মানবিক বিকাশে কোন বিকল্প নাই। 

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে আনার জন্য বালাগ্রাম সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যান্ত প্রশংসনীয়। এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন, আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য আমাদের জন প্রতিনিধিদের আন্তরিক সহযোগিতা রয়েছে। এই পরিবেশ উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছড়িয়ে দেওয়ার প্র‍য়াস অব্যাহত থাকবে।

এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর