শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

ভূমি সেবায় ‘মাটির আলো’ ও একজন এসি ল্যান্ড সাবরিনা শারমিন

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২২, ০৬:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমি সেবায় ‘মাটির আলো’ ও একজন এসি ল্যান্ড সাবরিনা শারমিন
ছবি : ঢাকা মেইল

সাজানো-গোছানো। পরিপাটি কার্যালয়। কার্যালয় চত্বরে ঘিরে এক পাশে শোভা পাচ্ছে রঙ্গন, গোলাপ, করবী, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, বাগানবিলাসসহ বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ। চত্বরে ঢুকলে যেন চোখে পড়ে এক পশলা নান্দনিকতার ছোঁয়া। 

কার্যালয় লাগোয়া জমিদারি আমলে তৈরি কাচারি ঘরটি মনে করিয়ে দেয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। কিন্তু, মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়ে স্থানটি যেন হারাতে বসেছে তার ইতিহাস-ঐতিহ্যের জৌলুস। 


বিজ্ঞাপন


তবে, কালের আবর্তে বিলীন প্রায় অন্ধকারে ম্রিয়মান জরাজীর্ণ কাচারিও হয়ে উঠতে পারে প্রাণবন্ত জ্ঞানের বাতিঘর। মন যেন এমনই এক পরিবেশ তৈরির তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিল বার বার। 

মনন, ভালবাসা আর পরম যত্নে শতবর্ষী, ভঙ্গুর মলিন কাচারি পেল এক নতুন রূপ। নাম দেওয়া হলো—'মাটির আলো' (একটি ভূমি সংক্রান্ত পাঠাগার)।
ac landবলছিলাম, বগুড়ার শেরপুর উপজেলা ভূমি অফিসের গোসাই মহারাজের কাচারির কথা। মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হওয়া এই ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিময় কাচারিতে ‘মাটির আলো’ জ্বালিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন। 

সাধারণত ভূমি অফিস বলতেই বাইরে থাকে দালালের দৌরাত্ম্য। আর ভেতরে থাকে সেবাপ্রার্থীর প্রতি কর্মচারীদের অবহেলা। যার ফলে, সেবাগ্রহীতারা ঠিকভাবে সেবা পায় না বা তাদের সমস্যার সমাধানে কিভাবে আগাবেন, এটিও বুঝতে পারে না। 

দিনের পর দিন ভুক্তভোগীদের কাছে সারা দেশে এই হলো ভূমি কার্যালয়ের সাধারণ চিত্র। কিন্তু, বগুড়ার শেরপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সবকিছু বদলে দিয়েছেন একজন সাবরিনা শারমিন। তার চিন্তাধারায় সেবা নিতে আসা প্রার্থীরা সেবা সহজিকরণের পথ খুঁজে পেয়েছে 'মাটির আলো'য়।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি 'মাটির আলো'য় গিয়ে দেখা যায়, লাল সবুজের পতাকা করা হয়েছে দেয়ালে। পতাকার কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে বইয়ের তাক। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। এখানে স্থান পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম সংক্রান্ত বই, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিষয়ক বই। 

কর্ণারের দিকে এক নজর চোখ বুলালেই যেন মুক্তিযুদ্ধের ছোঁয়া। মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তোলার অনন্য চেষ্টা। 'মাটির আলো'য় আগত নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এর পাশের আলমারিতে রাখা আছে জমি-জমা সংক্রান্ত আইনের বই, শিল্প সাহিত্য বিষয়ক বই এবং বিশ্ববিখ্যাত মণীষীদের জীবনী। পাঠাগারটিতে সব মিলিয়ে দুই শতাধিক বই রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়ার সুবিধা। 

পাশেই পরিপাটি রুমটির দেয়ালে কাঠের তাক। তাকগুলোতে স্থান পেয়েছে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন আবেদন ফরম, প্রচারপত্র ও তথ্য ফরম। সেগুলো নেওয়া যায় বিনামূল্যে। আবেদন ফরম, প্রচারপত্র ও তথ্য ফরম হাতে পেলেই কাজ হয়ে যায় অনেক সহজ। একটি প্রচারপত্র হাতে নিয়ে দেখা যায়, জমি ক্রয়ের পূর্বে সাধারণ সতর্কতাগুলো কি কি তা ২৪টি পয়েন্টে লেখা আছে। 

bogura

অন্য ফরমে দেওয়া আছে সেবার নাম : ই-নামজারি। এ সেবা পেতে প্রয়োজনীয় কী কী কাগজপত্র লাগে তা ১১টি পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যটিতে সেবার নাম : মিসকেস/রিভিউ কেস এ সেবা পেতে প্রয়োজনীয় কী কী কাগজপত্র লাগে তা উল্লেখ করা রয়েছে। 

এতো গেল সেবা সহজিকরণের পদ্ধতি। জনসাধারণ সহজে সেবা পেলেও লাখ লাখ নথি ঘেঁটে তার ফলাফল পাওয়া কতটা কষ্টকর এ বিষয়টিও ভাবিয়েছে 'মাটির আলো'র উদ্যোক্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিনকে। আর তাই রেকর্ড রুমটি একটু ভিন্নভাবে সাজিয়েছেন তিনি। বছরওয়ারী তালিকা করে উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের স্টাফদের নিয়ে দীর্ঘ ৪ মাসব্যাপী কর্মযজ্ঞ চালিয়েছেন এই কর্মকর্তা। 

প্রায় লক্ষাধিক নথি ক্রমানুসারে সাজিয়ে প্রতিটির সঙ্গে ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছেন। নথিগুলোকে এমনভাবে সাজিয়েছেন, এখন যেকোনো নথি এক মিনিটের মধ্যে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এরফলে, নথি খোঁজার জন্য কাউকে আর ‘খুশি’ করতে হয়না সেবা নিতে জনসাধারণের। আগে একটা নথি খুঁজে বের করতেই দিন পার হয়ে যেত। 

উল্লেখ্য, রংপুর সদরের মেয়ে সাবরিনা শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। পরে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় যোগদান করেন। এসিল্যান্ড হিসেবে পদায়নের জন্য কিছুটা সময় অন্যত্র প্রশিক্ষণে ছিলেন। একই বছরের ৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ উপজেলায় কর্মকাল শুরু করেন। এর আগে, তিনি নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি সিনিয়র সহকারী সচিব (৬ষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর