রসালো একটি ফল। যার নাম শুনলেই কেমন যেন একটা মাধুর্য (হানি) এবং আভিজাত্য আছে (কুইন) বলে মনে হয়। তাছাড়া জাত নামের অর্থ বিবেচনায় ‘মধুর রানি’ বা ‘স্বাদের দিক দিয়ে সেরা’ —এরকম কিছু একটা বিষয়ও মাথায় আসে। আদতেই ফলটি যে সেরা স্বাদের— তা অস্বীকার করার জো নেই।
বলছিলাম— ‘হানিকুইন’ জাতের আনারসের কথা। পাহাড়ি আনারসের স্বাদ এবং সৌন্দর্যের ব্যপারে যাদের জানা আছে, তাদেরকে আর আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না বোধ করি। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় আনারসের দুইটি জাতের আবাদ হয়ে থাকে। একটি হলো— ‘জায়ান্ট কিউ’, আরেকটি— ‘হানিকুইন’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচি উপজেলায় আবাদ হয়ে থাকে ‘জায়ান্ট কিউ’। আর রাঙামাটির নানিয়ারচর ও সদর উপজেলায় আবাদ হয় ‘হানিকুইন’ জাতের আনারস। এছাড়া খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, মহালছড়িসহ অন্যান্য উপজেলাতে ‘হানিকুইন’ ও ‘জায়ান্ট কিউ’ দুটি জাতের আনারস চাষ হয়। কৃষিবিদরা বলছেন, উৎপাদন ও স্বাদের দিক থেকে ‘হানিকুইন’ উৎকৃষ্ট জাত।
রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার হাতিমারা এলাকার আনারস চাষি সজীব চাকমা। প্রতি বছর ঢালু পাহাড়ে আনাস বাগান করে তিনি। বলেন, আমি প্রতি বছর আনারস চাষ করে থাকি। মূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাস আনারসের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। কানি প্রতি ৮ হাজার চারা লাগানো যায়। এ বছরও বাড়তি লাভবানের আশায় আনারস লাগিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন আগাম ফলন এলে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। মোটামুটি বেশি লাভবান হয়েছি।
জেলা সদরের বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের আনারস চাষি নীতিময় চাকমা বলেন,‘ রাঙামাটির এসব আনারস পাইকারদের হাত ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশে রাঙামাটির আনারসের চাহিদা রয়েছে। আমরা মূলত হানিকুইন জাতের আনারস বাগান করি।’
নানিয়ারচর উপজেলা মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, নানিয়ারচরকে এক সময়ে বলা হত আনারসের রাজধানী। এখন নানিয়ারচর ছাড়াও অন্যান্য উপজেলাতেও আনারসের চাষ হচ্ছে। উপজেলার অনেক কৃষক মৌসুমি ফল হিসেবে আনারস চাষ করে জীবিকানির্বাহ করে থাকেন। আবার অনেকেই কৃষকদের কাছ থেকে বাগান কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামের পাইকার ফল ব্যবসায়ীদের কাছে পরিবহনে করে আনারস সরবরাহ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য জেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৬৪৭ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৮ টন; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৪ টন; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৭ টন; ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৬৯ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৯ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আনারস চাষ হচ্ছে বান্দরবানে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাঙামাটি ও শেষে খাগড়াছড়ি।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল ঢাকা মেইলকে বলেন, পাহাড়ে দুই জাতের আনারসের আবাদ হয়ে থাকে। তবে রাঙামাটিতে বেশিরভাগ হানিকুইন জাতের আনারস চাষ হয়। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর ও সদর উপজেলাতে আনারসের আবাদ করা হয়, তবে নানিয়ারচর উপজেলাতে উল্লেখজনক বেশি। অন্যান্য উপজেলাগুলো চাষ হলেও বেশি ফলন হয় না।
প্রতিনিধি/এএ