বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রাণিখাদ্যের সংকটের কারণে গরু-মহিষ ও ছাগলকে চাহিদা অনুযায়ী খাবার দেওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে নিরাপদে রাখার জন্য শুকনো জায়গাও সংকুলান হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সরেজমিন বন্যাদুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পশুগুলোর খাবার সংগ্রহের জন্য কৃষক ও খামার মালিকদের মধ্যে রীতিমতো হাহাকার পড়ে গেছে। পশুগুলো নিয়ে তারা অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন। নিয়মিত খাবার দিতে না পারায় ইতোমধ্যে মহিষ, গরু-ছাগলগুলোর ওজন কমতে শুরু করেছে। এভাবে চললে সেগুলোকে হাটে তুলে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৪ হাজার চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। এতে গবাদিপশুর অন্যতম প্রধান খাদ্য ঘাসের যোগান বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যারা গরু-মহিষ ও ছাগল লালন পালন করেছেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাদুর্গত তিন উপজেলায় ৪২ হাজার ৭২৩টি গরু, ২৮ হাজার ৫৮৭টি ছাগল, ৪ হাজার ৭৬৬টি ভেড়া এবং ১ হাজার ৪৫টি মহিষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ৪০ হাজার গরু, ২৭ হাজার ছাগল, ৪ হাজার ভেড়া এবং ১ হাজার মহিষ পানিবন্দি হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। সারিয়াকান্দি উপজেলার চরপাড়ার সুমন কুমার জানান, চরের কোথাও শুকনো জায়গা নেই। ক্ষুধার্ত মহিষগুলোকে খাওয়ানোর মতো ঘাসও নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিনি মহিষগুলোকে নিয়ে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। কিন্ত যেসব মাঠে ফসল আছে সেখানে জমির মালিকরা মহিষ নিয়ে ভিড়তে দিচ্ছেন না। ফলে সবখানে মহিষগুলো খাবারও পাচ্ছে না। ধুনট উপজেলার বৈশাখী চরের বক্কর জানান, বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ৫টি গরু নিয়ে তিনি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। ঘাস আর খড়ের অভাবে গরুগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়াতে পারছেন না।
একই চরের মোশারফ হোসেন জানান, গরু পালন ও কেনা বেচা করে সংসার চালান তিনি। তিনি হাটে বিক্রি করবেন বলে তিনটি ষাঁড় লালন-পালন করছিলেন। কিন্তু বাজারে ঘাস না মেলায় গরুকে নিয়মিত খাওয়াতে পারছেন না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী খাবার দিতে না পারলে গবাদি পশুগুলোর ওজন কমে যাবে। কোরবানির পশুগুলোর ওজন কমলে কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে এই সংকট মোকাবেলায় খামার মালিকদের বিকল্প পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিখাদ্যের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/ এইচই