বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

লাখো পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার সৈকত

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৩ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষজন ছুটছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, নিজের পছন্দের জায়গায়। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। ঈদের দিন ৩১ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন। ৩১ মার্চ সকাল থেকে কক্সবাজারে আসতে শুরু করেন হাজার হাজার পর্যটক। বাস-ট্রেন, এমনকি বিমানেও এসেছেন পর্যটকেরা। হোটেল কক্ষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মানুষজন নেমে পড়ছেন সমুদ্রসৈকতে। রমজান মাসজুড়ে সমুদ্রসৈকতে পর্যটক সংখ্যা কম থাকলে ঈদের ছুটিতে পা ফেলার জায়গা নেই।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের মেলা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছেন অন্তত দেড় লাখ পর্যটক। প্রচণ্ড গরমের এই সময়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে নেমে গোসলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।


বিজ্ঞাপন


কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসা  ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রী নুসরাত ইমরোজ বলেন, সকালে কক্সবাজারে এসে বিচে চলে এসেছি। এত বেশি মানুষ একসঙ্গে দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে সমুদ্রের পাড়ে কিছু  ময়লা দেখে মনে খারাপ লাগছে।

thumbnail_image_3730

পরিবার নিয়ে সাকিবুর রহমান নামের একজন ভ্রমণকারী ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন। তিনি ঘুরে দেখেছেন সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটনকেন্দ্র হিমছড়ি, ইনানী। তিনি জানান, কাজের চাপে পরিবারকে তেমন সময় দেওয়া হয় না। তাই ঈদের টানা ছুটিতে পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য কক্সবাজার বেড়াতে আসা। সেই সঙ্গে তিনি সৈকতে এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান।

ময়মনসিংহ থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী গফুর উদ্দিন বলেন, বেড়াতে এসে খুব আনন্দ করছি। তবে হোটেল ভাড়া একটু বেশি মনে হয়েছে এবার। ভাড়া কিছুটা কম হলে ভালো হতো।


বিজ্ঞাপন


coxsbazar-2_20250330_191301206

সি সেফ লাইফ গার্ডের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ঈদের ছুটির সাথে যোগ হলো সাপ্তাহিক ছুটি, সেজন্যে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসময়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ সমুদ্রে গোসল করেন। তাদের সামাল দিতে ২৭ জন লাইফগার্ড কর্মীকে হিমশিম খেতে হয়।

আরও পড়ুন

কক্সবাজারে পর্যটক হয়রানির অভিযোগে ১৭ ক্যামেরা জব্দ

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের প্রথম দিন সৈকতে নামেন হাজারও পর্যটক। ঈদের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে অন্তত ৬ লাখ পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। ঈদের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ করে পাঁচদিনে মোট সাড়ে ৭ লাখ মানুষ কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।  এর সঙ্গে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা সৈকতে ভিড় জমিয়েছে। সব মিলিয়ে সৈকতের চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের মিলনমেলা বসেছে।

thumbnail_image_3730

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, পর্যটকে ভরপুর দুই কিলোমিটার সৈকত এলাকা। প্রচণ্ড গরমে দল বেঁধে নারী -পুরুষ সমুদ্রের কোমরসমান পানিতে নেমে গোসলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বেশির ভাগ মানুষ হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে গোসল করছেন। মুঠোফোনে তুলছেন ছবি ও ভিডিও চিত্র। সৈকতে রাখা আছে কয়েকটি দ্রুতগতির জলযান জেট স্কি। তরুণ-তরুণীরা জেট-স্কিতে চড়ে ঘুরে আসছেন সাগরের গভীরে। বালুচরে বসানো আছে সারিবদ্ধ চেয়ার-ছাতা (কিটকট)। গরমে অতিষ্ঠ লোকজন কিটকটে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ কেউ চা কফি খাচ্ছেন। শামুক -ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য কিনতেও ভুলছেন না অনেকে।

thumbnail_image_3903

এছাড়া বালুচরে প্রস্তুত আছে শতাধিক বিচ বাইক ও বেশ কিছু ঘোড়া। ইচ্ছেপূরণে অনেকেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে সৈকতে চক্কর মেরে আসছেন। বিচ বাইকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

কক্সবাজারের হোটেল মালিকেরা জানান, গত ৫ দিনে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে । ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল রিসোর্ট, গেস্ট হাউসের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটক টানতে রোজার মাসে হোটেলকক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড়ের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা ২৫ মার্চ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন থেকে হোটেলের শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় থাকবে বলে ধারণা করছেন হোটেল মালিকেরা।

thumbnail_images_(8)_20240408_114341028

কক্সবাজারে একটি হোটেল সমিতির নেতা মুকিম খান বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে । ছোট-বড় মাঝারি আকারের কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।

মুকিম খান বলেন, রোজার পুরো মাস হোটেল মালিকদের ব্যবসা খারাপ গেছে। এ কারণে ঈদ পরবর্তী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ছাড়ের সুযোগ নেই । পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে কোনো হোটেল মালিক যেন নির্ধারিত মূল্যের বেশি কক্ষভাড়া আদায় করতে না পারেন, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার, ঈদে ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা

তিনি বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্ট হাউস -রিসোর্টের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চুরি-ছিনতাইরোধে শহরের অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যানজটের নিরসন এবং পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার প্রস্তুতি চলছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানিয়েছেন, বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। ইতোমধ্যে অনেক পর্যটকের হারিয়ে যাওয়া মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিস খুঁজে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া এবং রেস্তোরাঁগুলোয় খাবারের দাম যেন বেশি আদায় করা না হয়, সেসব তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন