সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ৭৭ নম্বর ভৈরব নগর মৌজায় ভুয়া নথি দেখিয়ে ২ অসহায় পরিবারের জমি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খুলনা সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (হেডকোয়ার্টার) ও শ্যামনগরের এসও মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে এই অসহায় পরিবারগুলোকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের তথ্য বিশ্লেষল করে জানা গেছে, খুলনা বিভাগীয় জোনাল অফিসে ২০২৪ সালে মিসকেস ১০১১ ও ১০১২ দায়ের করা হয়। ওই মিসকেসে ১৪৭৯ ডিপি খতিয়ানে ৩০ শতক, ১০৯৫ ডিপি খতিয়ানে ২৭ শতক এবং ৪৪২ ডিপি খতিয়ানে ২২ শতক জমিসহ মোট ৭৯ শতক জমির উল্লেখ করা হয়। উক্ত মামলার একটি ১০১১/২৪ এর মিস কেসের বাদী শ্যামনগরের ভৈরব নগর এলাকার সুদিও মণ্ডলের ছেলে বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল এবং অপর ১০১২/২৪ মিস কেসের বাদী আব্দুস ছামাদ শেখ। খুলনা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে মিস কেস দায়ের করলে গত ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তারিখে খুলনায় শুনানি হয়। পরে বিষয়টি অমীমাংসিত হওয়ায় বাদীরা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরে আবেদন করেন। যা ১৬ অক্টোবর তারিখে স্মারক আদেশে উক্ত কেসের নথি যশোর জোনাল অফিসে প্রেরণ করা হয়। এরপর সেখানে বিগত ২৪ সালের ২০ নভেম্বর তারিখে যশোর জোনালের কর্মকর্তা শুনানি শেষে টেবিলে বিবাদীদের পক্ষে খারিজ রায়ের নির্দেশ দেন। এদিকে যশোরে নথি থাকায় এবং খুলনা জোনালের কর্মকর্তার বদলি হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জাকির হোসেন উক্ত ডিপি খতিয়ানের জমি কর্তন করেন। যেখানে অগ্রিম নিজের স্বাক্ষরের ১৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ দেখিয়ে ওই জমি কর্তন করেন।
বিজ্ঞাপন
মূল নথি পর্যালোচনা করে আরও জানা যায়, ১২২৭ ডিপি খতিয়ান দেখিয়ে ১১৪৪ মিস কেচে ৭৯ শতক জমি কর্তন করেন জাকির হোসেন। তবে ১১৪৪ মিস কেসের বাদী বাহার আলী গাজী। আর ১০১১ও ১০১২ মিস কেসের বাদী বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল এবং আব্দুস ছামাদ। অর্থাৎ উক্ত কেসের ২টি আলাদা এবং জমির পরিমাণও ভিন্ন। কিন্তু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় দায়ের করা মিস কেসের পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির কেসের তথ্য দিয়ে জমি কেটে নিয়েছেন। যেখানে মোটা অঙ্কের উৎকোচের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত জমি কর্তন করেন ওই কর্মকর্তা। বাহার আলীর কেস রাতারাতি বদলে বিনয়কৃষ্ণ ও আব্দুস সামাদের নামে দেখানো হয়েছে। যার মাঝে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তবে এসব নথি ঘুরে দেখা গেছে ওই কর্মকর্তার ব্যাপক জালিয়াত ও অনিয়মের চিত্র। অপরাধ করে গেলেও ফেলে গেছেন একাধিক সূত্র। তবে এ ঘটনা নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তার এসব কাজের সহযোগী শ্যামনগরের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পেশকার রণজিৎ সিন্ডিকেট মিলে মাঠ পর্যায়ে বিগত আমলে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম করে পকেট ভর্তি করেছেন। যার খেসারত সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে। বর্তমানে এসব পরিবারকে প্রভাবশালীরা বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ নানা হুমকি দিয়ে চলেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানান, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা মিলে আমাদের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে কর্তন করে নিয়ে অন্য ব্যক্তির নামে দিয়েছেন। এতে করে আমাদের উচ্ছেদসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়ে আমাদের নামে জমি বহাল রাখার কথা বলে উলটো অন্য লোকের নামে দিয়ে দিয়েছেন। আমরা আমাদের জমি ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে অভিযুক্ত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ভুল হয়েছে। কাজ করতে গেলে ভুল হয়। এক কেসের নথি দিয়ে অন্য কেসের জমি কর্তন ও অগ্রিম তারিখে কীভাবে স্বাক্ষর করেছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তৎকালীন খুলনা জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকতার নির্দেশে করছেন এবং ভুলের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে লিখিত পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/এসএস