বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মণিরামপুরে পাট পণ্য তৈরি প্রশিক্ষণে ঝুঁকছেন নারীরা

জেলা প্রতিনিধি, যশোর
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

অভাবের সংসারে বাবার কাঁধে বোঝা হতে চান না মারুফা খাতুন। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি পাট জাতীয় পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এখান থেকে উপার্জিত স্বল্প রোজগারে বাবার সংসারে অবদান রাখছেন। বাবা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে ছোট তিন বোনসহ ৫ জনের সংসার চালান।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ক্ষতিক্ষারক পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এতে আরও আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে মারুফা খাতুনের।


বিজ্ঞাপন


তারমতো আরও কয়েকজন নারী রীতা দত্তের অপরূপা হস্তশিল্পে পাট জাতীয় পণ্য সামগ্রীসহ সুতোয় তৈরি হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারমতো স্বামীর স্বল্প আয়ের সংসারে বাড়তি রোজগার করছেন এবং একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন গৃহিণী খাদিজা বেগম, মাছুমা খাতুনসহ কয়েকজন।

102

যশোরের মণিরামপুরের একমাত্র রীতা দত্ত পাট জাতীয় পণ্য সামগ্রী তৈরির ওপর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। রীতা দত্ত অপরূপা বহুমুখী মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। সংগ্রামী ও প্রবল আত্মবিশ্বাসী নারী এই রীতা দত্ত ব্র্যাকে চাকরি করতেন। একদিন বাসায় ফেরার পথে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। প্রাণে বেঁচে গেলেও চোখসহ শরীরের নানা অংশের গুরুতর ক্ষতি হয়। কিন্তু থেমে থাকেননি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে পাট জাতীয় পণ্য তৈরি, মৎস্য ও গবাদি পশু পালনসহ স্বাস্থ্যসেবার ওপর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রায় ষাটোর্ধ্ব বয়সী এই রীতা দত্ত কর্মে নবীনদের ছাপিয়ে গেছেন।

জানা যায়, পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার আইন, ২০১০ পাট আইন, ২০১৭-এ ধান, চাল, হলুদ, মরিচসহ এ ধরনের পণ্য সামগ্রী পাট জাতীয় পণ্যে মোড়কজাত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আইনটি প্রয়োগ করলেই পলিথিনের ব্যবহার থাকবে না।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

চাঁদপুরে অর্ধশত সুবিধাবঞ্চিত শিশু পেল নতুন ঠিকানা

রীতা দত্ত বলেন, ক্ষতিকারক পলিথিনের বিকল্প হতে পারে পাট জাতীয় এসব পণ্য। এজন্য দরকার সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ ও ভূমিকা। পাটের সুতার দাম নাগালের মধ্যে রেখে দেশীয় বাজারে সহজ বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে পলিথিনের দৌরাত্ম্য কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। দেশে পাট জাতীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টি হলে অনেক নারী এ পেশায় এগিয়ে আসবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে নারীদের কার্যকরী উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার প্রয়োজন। প্রতিদিন যে পরিমাণ পলিথিন ব্যবহার হয়, তাতে অর্থের অপচয়। কারণ এটি কেবল একবারই ব্যবহার হয়। অথচ একটা পাটের তৈরি ব্যাগ একশ’ টাকায় কিনে অনায়াসে তিন থেকে চার বছর ব্যবহার করা যায়। শুধু বাজার করা ব্যাগ হিসেবে নয়; কাপড় রাখা থেকে শুরু করে সাংসারিক সব ধরনের কাজ এই পাট জাতীয় পণ্যে সম্ভব।

103

শিক্ষানবিশ খাদিজা পারভীন বলেন, সকাল ৯টা হতে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিই, আবার নতুন পণ্য তৈরি করি। এতে উপার্জিত স্বল্প রোজগার সংসারের কাজে লাগায়। মারুফা খাতুন বলেন, সংসারে তার আরও তিন বোন রয়েছে। বাবার রোজগারে সংসার চলে না। এখান হতে উপার্জিত স্বল্প রোজগার বিরাট উপকার হয়।

এ ব্যাপারে পাট অধিদফতরের উপজেলায় দায়িত্বরত সোহানুর রহমান সোহান জানান, এ উপজেলায় রীতা দত্তই একমাত্র পাট জাতীয় পণ্যের ওপর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা পাট জাতীয় পণ্য তৈরিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে পলিথিনের বিকল্প বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন