শৌখিন বিদেশি জাতের মুরগির খামার করে সফলতা পাওয়ার পর এবার বাণিজ্যিকভাবে ময়ূরের খামার করেছেন রাজবাড়ীর তরুণ উদ্যোক্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৮)।
নিজ বাড়ির উঠানেই গড়ে তুলেছেন বিদেশি জাতের মুরগি ও ময়ূরের বিশাল খামার। বাড়িতে বসেই খামার থেকে প্রতি মাসে আয় অর্ধ লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড় বাঙলাট গ্রামের মৃত আমীর হোসেনের ছেলে।
উদ্যোক্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি বিভিন্ন পাখি ও মুরগি পালনে খুব আগ্রহী ছিলাম। পলিটেকনিকে ডিপ্লোমা শেষ করে দেশে অনেক চাকরির সন্ধান করি। মন মতো চাকরি না মেলায় বিদেশে যাই ভাগ্যের উন্নয়ন করতে। কয়েকটি দেশ ঘুরে আমি ভারতে যাই। সেখানে বিভিন্ন দেশের বিদেশি মুরগি দেখি। তখন আমার বিদেশি মুরগি পালনের ইচ্ছে হয়। আমি ভারত থেকে মাত্র ৪ জোড়া উন্নত জাতের মুরগি এনে আমার গ্রামের বাড়ি কালুখালীতে লালন পালন শুরু করি। ২০১৬ সাল থেকে আমার এই বিদেশি মুরগির খামারের যাত্রা শুরু।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, চলতি বছরের (২০২৪) শুরুর দিকে ৪টি ময়ূর সংগ্রহ করি। ময়ূরগুলো ১৩টি ডিম পাড়ে। কয়েকটা ডিম বিক্রি করি ও কয়েকটি থেকে বাচ্চা ফুটে। বর্তমানে খামারে ১০টি ময়ূর আছে।
পাশাপাশি আমার খামারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি মুরগি আছে। যার মধ্যে ব্রামহা,কচিন,সেভরাইট,পলিস ক্যাপ, সিলভার লেস, সেরমা, কসমো, প্যারোট লিপ, সোমাত্রা, আই আম মিচামী, ফনিক্স, ইয়োকোহামা, ব্লু বারলেসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুরগি রয়েছে। এসব মুরগি ভারত, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, জাপান, চায়না, ভিয়েতনাম, ইন্দ্রোনেশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
খামারে ৪০ প্রজাতির ৭০ জোড়া বিদেশি মুরগি আছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো বিদেশি মুরগি বিক্রি করে মাসিক আয় প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। খামারে পালন করা বিদেশি মুরগির ডিম বিক্রি না করে তা থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে বিক্রি করি। এসব মুরগির ১ থেকে ১০ দিন বয়সী বাচ্চা প্রতি জোড়া ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকায় হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর পূর্ণবয়স্ক মুরগির জোড়া ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মাত্র ৪টি ময়ূর দিয়ে শুরু, এখন খামারে আছে ১০টি ময়ূর।
বিদেশি জাতের মুরগি ও ময়ূরের খামার থেকে প্রতি মাসে আয় প্রায় অর্ধ লাখ টাকা।
খামারের সব থেকে বড় ময়ূরের নাম সৌন্দর্য। তার দাম ৮০ হাজার টাকা। পাশাপাশি প্রতি জোড়া ময়ূরের দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আরও বলেন, আমি বিদেশ যেতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পরে প্রতারিত হই। পরে দেশে ফিরে বিদেশি জাতের মুরগি পালন শুরু করি। ধীরে ধীরে সফলতা আসে। এখন খামারে বিদেশি জাতের মুরগির পাশাপাশি ময়ূর পালন করছি। খামারের সব থেকে বড় ময়ূরের নাম সৌন্দর্য তার দাম ৮০ হাজার টাকা। পাশাপাশি প্রতি জোড়া ময়ূরের দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
তরুণ উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর বলেন, ময়ূর প্রধানত শষ্যভুজী প্রাণী। আমি ময়ূরের খাবার হিসেবে দেই ধান, ভাত, চাল, গম, ভুট্টা, শাক সবজি ও ফলমূল। শৌখিন খামারে সুন্দর সুন্দর দামি মুরগি ও ময়ূর দেখে বিদেশি মুরগির খামার করতে চান অনেক তরুণ উদ্যোক্তা। প্রতিদিনি প্রায় শতাধিক মানুষ আমার এই খামার দেখতে আসেন।
খামারে ময়ূর দেখতে আসা দর্শনার্থী হেলাল মাহমুদ বলেন, টেলিভিশন, মোবাইল ফোনে ময়ূর দেখেছি। জাহাঙ্গীর ভাইয়ের খামারে এসে বাস্তবে দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে।
আরেক দর্শনার্থী সুজন বিষ্ণু বলেন, বিদেশে না গিয়ে বা চাকরির পেছনে না ছুটে গ্রামে থেকেও যে ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় রাজবাড়ীর ছেলে জাহাঙ্গীর তা করে দেখিয়েছেন। শূন্য থেকে তার ব্যপক সফলতা অর্জনের কারণে আজ তিনি অন্যদের কাছে সফল উদাহরণ।
কালুখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম রতন জানান, তরুণ উদ্যোক্তা মো. জাহাঙ্গীরের বিদেশি মুরগি ও ময়ূর পালনে আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি। নানাবিধ পরামর্শ দিচ্ছি।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জণ বিশ্বাস জানান, তরুণ উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীরকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। বেকারত্ব দূরীকরণে তিনি নিজে উদ্যোক্তা হয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অন্য বেকার যুব সমাজের জন্য তিনি আদর্শ উদাহরণ।
প্রতিনিধি/এসএস