সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামে জনবসতি এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার কবল থেকে শ্মশান ঘাটও রক্ষা পায়নি। এই ভাটার দখলে আছে কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিও।
এছাড়া ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করে আসলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাট দখলে নিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করায় মানুষের সেখানে দাহ করতে নানান জটিলতা পোহাতে হয়।
বিজ্ঞাপন
জেঠুয়ার মেসার্স মুন ব্রিকস্ নামে এই ইটভাটার মালিক ইন্দ্রজিৎ দাশ বাপি। তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিপক্ষে কেউ কথা বললে তাকে হতে হয় নানাভাবে হয়রানি। অভিযোগ রয়েছে এলাকার অসহায় মানুষ তার কাছে বিপদে শরণাপন্ন হলেই আর্থিক সহায়তার নামে তাদের জিম্মি করে নিজ স্বার্থ হাসিল করেন তিনি।
অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ওই আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। একই আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স না নিয়ে কোনো ইটভাটায় ইট তৈরি করা যাবে না। এই আইনের এসব ধারা লঙ্ঘন করে মেসার্স মুন ব্রিকস্ নামের ইটভাটাটি চালু করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁষে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ভাটার তিন পাশে কৃষিজমি ও এক পাশে একটি কপোতাক্ষ নদ। ইটভাটার মধ্যে রয়েছে শ্মশান ঘাট। যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে দাহ করা হয়। এছাড়া তিন থেকে চার শত মিটার দূরে রয়েছে জেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেটুয়া বাজারসহ জনবসতি এলাকা। কিন্তু ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষণসহ ধুলাবালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে ইটভাটাটি প্রথম শুরু করে ছিলেন গোনালী এলাকার মোকাম হোসেন। কিন্তু ভাটার মধ্যে শ্মশান ঘাট আছে, এজন্য এলাকাবাসি ইটভাটা স্থাপনে বাঁধা দেয়। পরে মেসার্স মুন ব্রিকসের মালিক ইন্দ্রজিৎ দাশ বাপি নিজেন লিখে নিয়ে ওই ভাটার কার্যক্রম শুরু করেন। সেই থেকে ইটভাটার কার্যক্রম চলেছে। তবে স্থানীয় প্রশান দেখেও না দেখেন না।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার প্রভাবে তিনি কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমি দখলে নিয়ে তিনি ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বললে নানাভাবে হয়রানি হতে হবে, এজন্য কেউ কথা বলতে রাজি না।
জেটুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোল্লা তবিবুর রহমানসহ অনেকে জানান, ক্ষমতার জোরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধু ইটভাটায় চালু করেননি তারা, অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি তুলে ও কপোতাক্ষ নদের চর কেটে ইট তৈরি করে থাকেন যা বেআইনি। ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে কৃষিজমি ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসির চরম ক্ষতি হবে। এছাড়া তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাটও তার ভাটার মধ্যে। যে কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কেউ মারা গেলে তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা বেগম জানান, কোনো প্রকার নিয়ম না মেনে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। আমরা সেইভাবে রিপোর্ট দিয়েছি।
তবে মেসার্স মুন ব্রিকসের মালিক ইন্দ্রজিৎ দাশ বাপি জানান, আমার ভাটার সকল কাগজপত্র আছে, নিয়ম কানুন মেনেই আমি ইটভাটা পরিচালনা করছি।
সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, জেঠুয়া মুন ব্রিকস্ নামে ইট ভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তারা চেয়েছিল, কিন্তু নিয়মের মধ্যে না আসায় তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, কৃষি জমি বা সরকারি জমি দখল করে ইটভাটা পরিচালনা করার কোনো নিয়ম নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। জেঠুয়া মুন ব্রিকসের বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস