রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

জানালার গ্রিল কেটে জব্দ করা বস্তা সরানোর চেষ্টা খাদ্য কর্মকর্তার

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

শরীয়তপুরের ভেদেরগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বাসা থেকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১৩ অবস্থা সরকারি চাল ও বিপুল পরিমাণে খালি বস্তা পেয়ে বস্তাসহ বাসভবনটি সিলগালা করে দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। সিলগালা করা ওই বাসভবনের জানালার গ্রিল কেটে জব্দ করা সেই বস্তা সরানোর চেষ্টা করেছিলেন খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ।

এই ঘটনার পর তাকে খাদ্য কর্মকর্তার পদ থেকে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।


বিজ্ঞাপন


রোববার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার সিলগালা করা বাসভবন থেকে জানালার গ্রিল বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন দিয়ে কেটে জব্দ করা বস্তাগুলো অপসারণের চেষ্টা করেন তিনি।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার (১১ নভেম্বর) হঠাৎ করেই পরিদর্শনে এসে খাদ্য গুদামের পাশেই থাকা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সেখানে গিয়ে সরকারি সীলমোহরসহ ৫০ কেজির ১০ বস্তা ও ৩০ কেজির ৩ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। চালগুলোর পাশেই পড়েছিল বিপুল পরিমাণে খালি বস্তা। খালি বস্তাগুলোও জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। খালি বস্তার মধ্যে ৫০ কেজির ৭৫০টি প্লাস্টিকের, ৫০ কেজির ৫০টি পাটের ও ৩০ কেজির ৩০০টি পাটের বস্তা জব্দ করা হয়। ওই সময় বস্তাগুলোসহ বাসভবনটি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এরপর রোববার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ বাজারের ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকে দোকান কর্মচারী সজিব ছৈয়ালকে ভাড়া করে এনে খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনের উত্তর দিকের জানালার ৪টি রড বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে কেটে ভেতরে প্রবেশ করে খাদ্য গুদামের নৈশ প্রহরী আবু হানিফ। আবু হানিফ প্লাস্টিক ও পাটের বস্তাসহ বেশ কিছু সুতা সরিয়ে ফেলেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন টের পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে খাদ্য কর্মকর্তাসহ বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন পরিচালনাকারী সজিব ছৈয়ালকে আটক করেন। এসময় নৈশপ্রহরী আবু হানিফ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

shariyatpur


বিজ্ঞাপন


বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন পরিচালনাকারী সজিব ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার দোকানের মহাজন আমাকে ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে আসতে বলেছিল। এসে তার কথামত খাদ্যগুদামের বাসভবনের জানালার গ্রিল কেটে দিয়েছি। কাটার পর একজন কিছু বস্তা ও সূতা সরিয়ে ফেলেছে। কথা ছিল বস্তাগুলো সরানোর পরে জানালার গ্রিলটি আবার জোড়া লাগিয়ে দেব। কিন্তু এর আগেই ইউএনও স্যার চলে এসেছেন।

এ বিষয়ে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধীকারী বিল্লাল হাওলাদার ঢাকা মেইলকে বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ আমাকে বলেছিল তালুকদার বাড়ির একটি বাড়ির গ্রিল কাটতে হবে। কথা অনুযায়ী আমার কর্মচারী সজিবকে পাঠাই ওখানে। পরে জানতে পারি সজিবকে তিনি খাদ্য গুদামের বাসভবনের গ্রিল কাটতে নিয়ে এসেছেন।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, জানালার গ্রিল কাটার বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা আসলে লজ্জিত। গতকালের ঘটনার পর তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তারপর আজ যা ঘটিয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, গতকাল শনিবার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১৩ বস্তা চালসহ এক হাজার একশত খালি বস্তা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবন থেকে জব্দ করে বাসভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে মুঠোফোনে জানতে পারি, খাদ্য কর্মকর্তা জানালার গ্রিল কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দ করা জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করতেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা এসে খাদ্য কর্মকর্তাকে হাতে নাতে ধরেছি। তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ দুদককে জানানো হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন