ভোর হতেই শুরু হয় ওদের কর্মব্যস্ততা। কেউ কেউ ঠেলা জাল নিয়ে, আবার কেউবা বিশেষ একধরনের গোলাকৃতির চালুনি নিয়ে নেমে পড়েন নদীতে। সন্ধ্যা অবধি পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা কয়লা আর পাথর মিশ্রিত জল সেচে ঠেলাজালে তুলে ধুয়ে আলাদা করেন তারা। আর এসব কয়লা আর পাথর বেচে পরিবারের সদস্যদের মুখে দু-বেলা আহারের জোগান দেন এসব মানুষেরা।
বলছিলাম ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর এলাকার মানুষের কথা।
বিজ্ঞাপন
বর্ষার সময়ে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এ অঞ্চলের যাদুকাটা নদী ও তার শাখা নদীতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এসব কয়লা আর পাথর তুলে যুগ যুগ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। যদিও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকটাই আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তারা।
তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকের ঘাট এলাকার ৩৩ বছর বয়সী বাদশা মিয়া। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বটছড়া নদীতে পাথর আর কয়লা তুলে ৫ সদস্যের পরিবারের যোগান দিচ্ছেন তিনি। তার এই কাজের সাথে সামিল হয়েছেন স্ত্রী মমিনা বেগম ও ছেলে মিজানুর রহমান। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে তিনজনের সংগ্রহ ১ ট্রলি পাথর। এই এক ট্রলি পাথরের জন্য তিনি পান মাত্র ৫০০ টাকা। তবে এই পাথর মহাজনরা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন প্রায় ৪ হাজার টাকা।
বাদশা মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সারাদিন কষ্ট করে ১ ট্রলি পাথর পাই। এই পাথরের জন্য মহাজন আমাদের অনেক সময় ৪০০ ও দেয় আবার মাঝেমধ্যে ৫০০ টাকাও দেয়। তারা এই পাথর ১০০ টাকা ফুট বেচে। আমরা তো ৪ ভাগের একভাগও দাম পাই না।
বিজ্ঞাপন
বাদশা মিয়ার মতোই এখানে পাথর সংগ্রহ করেন মাসুদ মিয়া (৩৫)। তিনি বলেন, যখন শ্রমিক খাটন না পাই তখন এই নদীতে পাথর তুলি। তবে আমরা ভালো দাম পাই না। কোনোমতে পরিবার চালাই। ভালো দাম পাইলে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলতো।
ময়না নামের চল্লিশোর্ধ্ব আরেক কয়লা তোলা নারী শ্রমিক বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে কয়লা তুলে সংসার চালাই। সারাদিন ১ ঝুড়ি কয়লা তুলতে পারি। ১ ঝুড়ি কয়লা ২০০ টাকা দাম। তবে বৃষ্টি হইলে বেশি কয়লা পাওন যায়। এই কয়লা তুলেই দুই বেটি আর আমার সংসার চলে।
প্রতিনিধি/এইচই