মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মেডিক্যালে চান্স পেয়েও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৩৪ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ছবি: ঢাকা মেইল

বরিশালে ভ্যানে সবজি বিক্রেতা হতদরিদ্র মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারের মেয়ে সাদিয়া আফরিন হারিসা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছেন। প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তি, অদম্য মেধা ও পরিশ্রমের ফলে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে জন্ম নিয়েও দমে যাননি তিনি। পড়ালেখার মাধ্যমে মেধার স্ফূরণ ঘটিয়েছেন। তবে মেডিকেলে চান্স পেয়েও তার মুখের হাসি মলিন। পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। এবার তাকে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তার মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সাদিয়া আফরিন হারিসা বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারের তৃতীয় কন্যা। সাদিয়া ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছেন অভাবের সংসারে। 


বিজ্ঞাপন


সাদিয়া বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এছাড়া সে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ছোট থেকেই তিনি লেখাপড়ায় খুব আগ্রহী ছিলেন। কৃতিত্বের সঙ্গে সব পথ পাড়ি দিয়ে পড়াশোনায় সাফল্য এনেছেন তিনি।

পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণেই শিক্ষার এ দুর্লভ সুযোগ পেয়েছেন সাদিয়া। তাদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছয়জন। মিজানুর রহমান বানারীপাড়া পৌর শহরে ঘুরে ঘুরে ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন। সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমানের সামান্য আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলে সংসার। এ অবস্থায় মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। 

চার বোনের মধ্যে সাদিয়া তৃতীয়। অসুস্থ মা রাজিয়া বেগমের চিকিৎসক করাতেও বেগ পেতে হয়েছে বহুবার। সেই থেকেই সাদিয়া মনে মনে জেদ পোষেন ডাক্তার হবেন তিনি। 

সাদিয়া বলেন, 'অনেক আগে থেকেই টিউশনি করাতাম। টিউশনির টাকা জমিয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করেছি। আর মেডিকেলে পড়ার জেদ সেই ২০১৪ সাল থেকে। তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মার চিকিৎসা করাতে অনেক হিমসিম খেতে হয়েছে বাবাকে। তখন থেকেই মনে মনে জেদ পুষেছিলাম ডাক্তার হবার। দেশের সেবা করার।


বিজ্ঞাপন


নিজের জেদকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় তাক লাগিয়ে সাদিয়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন সাদিয়া। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) ২০২১-২২ শিক্ষা বর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৮ নম্বর পেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার এই সাফল্যের সংবাদে আনন্দ উৎসবের আমেজ বইছে বানারীপাড়ার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন সাদিয়া। 

তিনি আরও বলেন, আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, আমি যেন পড়াশোনা শেষ করে ভালো একজন চিকিৎসক হতে পারি।

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস নিজ বাড়িতেই রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন সাদিয়া। তার সাফল্যে খুশি পরিবারের সবাই।

এদিকে মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য সুযোগ পেলেও ভর্তির টাকা ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে আরো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাদিয়ার মা রাজিয়া বেগম। 

তিনি বলেন, মেয়ে অনেক কষ্টে পড়ালেখা করে মেডিকেলে চান্স পেল। কিন্তু এখন মেয়ের পড়ালেখার খরচ কিভাবে জোগাড় করব?

সাদিয়ার বাবা মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, ছোটবেলা থেকেই সাদিয়া পড়াশুনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী ছিলো। ও একান্ত নিজের প্রচেষ্টায় মেডিকেলে ভর্তির জন্য সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যতে সাদিয়া যেন একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে সবার সেবা করতে পারে।

এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন