সালমান ইসলাম, স্পোর্টস ডেস্ক
৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৩৮ পিএম
ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ২০২২ সাল ছিল স্বপ্নের মতো। কি ছিলনা এই বছরে? ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর ছাড়াও নানান খেলায় বুঁদ হয়েছিল ক্রীড়াপ্রেমীরা। বছর শেষ হওয়ার সায়াহ্নে এসে ফুটবলের বরপুত্র লিওনেল মেসির হাতেও উঠেছে বিশ্বকাপের অধরা শিরোপা। এর বাইরেও অনেক তারকাই নিজের রঙে রাঙিয়ে রেখেছেন বছরটিকে।
দেখে নেওয়া যাক, ২০২২ সালে সেইসব তারকাদের স্বপ্ন যাত্রার নানা ঘটনাগুলো।
লিওনেল মেসি
ফুটবল ক্যারিয়ারের এমন কোনো ট্রফি নেই যেটি লিওনেল মেসির আলমারিতে নেই। নিজের প্রাচুর্যময় ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতা ছিল ফুটবল বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা। আর সেটিও কাতারে এসে নিজের ঝুলিতে তালাবদ্ধ করলেন বিশ্বের সেরা এই ফুটবলার।
দলকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন ফাইনালে ও এনে দিয়েছেন ৩৬ বছর পর শিরোপার স্বাদ। এর সঙ্গে হয়েছেন কাতার আসরের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়। সেই অর্জনে মেসি এখন সর্বকালের সেরাদের কাতারে চলে গেছেন।
আরও পড়ুন- রোনালদোর নতুন ক্লাব আল নাসেরের জানা-অজানা নানা তথ্য
লিটন দাস
ব্যাট হাতে ২০২২ সালটি দারুণ কেটেছে লিটন দাসের। বাংলাদেশের ব্যাটারদের ইতিহাসে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। পুরো বিশ্বের মধ্যে এক বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করে নতুন আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে চলতি বছরে তার রান এখন ১ হাজার ৯২১। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লিটনের উপরে ২ হাজার ৪২৩ রান নিয়ে আছেন কেবল পাকিস্তানের বাবর আজম। চলতি বছর ১৩টি ফিফটির সাথে লিটন দাস করেন ৩টি সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে ১৬টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেও নতুন ইতিহাস গড়েন তিনি।
মেহেদী মিরাজ
২০২১ সাল থেকেই ‘অলরাউন্ডার’ মেহেদী হাসান মিরাজের জাদু দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ২০২২ সালে সেটি যেন রূপ নিয়েছে ধারাবাহিকতায়। সেই ধারা বজায় রেখে মিরাজ জাদু আরো কয়েকবার দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। বছরের শেষে এসে ওয়ানডেতে ভারত বধের একমাত্র নায়ক ছিলেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে প্রথম দুটি ওয়ানডে ম্যাচ তার ব্যাটেই ভর করে জিতেছে টাইগাররা। দ্বিতীয় খেলায় তিনি তুলে নিয়েছেন তার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ৮৩ বল মোকাবিলায় মিরাজ খেলেছেন ১০০ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন দারুণ সব শট। এছাড়াও তিনি দ্বিতীয় টেস্টে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে বল হাতে ৫টি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- উইজডেনের বর্ষসেরা একাদশে মিরাজ
জাকির হাসান
চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেকের আগেই জাকির খেলেছিলেন ৬৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। তামিম ইকবালের চোট ও মাহমুদুল হাসানের ফর্মহীনতা সুযোগ করে দিয়েছে ২৪ বছর বয়সী এই ওপেনারকে। টেস্ট দলে জাকির এসেছিলেন দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে।
সেই সম্ভাবনার দ্বার খুলে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েন তিনি। তাও আবার টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে। মিরপুরের কঠিন কন্ডিশনে টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ফিফটি করে নিজের টেম্পারামেন্টের ছাপ রেখেছেন জাকির হাসান।
উমরান মালিক
কাশ্মীরের নেট বোলার থেকে ভারত ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়ের নাম উমরান মালিক। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের শেষ আসরে সবচেয়ে বড় গল্প ছিল উমরান মালিকের উত্থান। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি জোরে বল করেন তিনি। অথচ যিনি উঠে এসেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মতো ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধময় এলাকা থেকে। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উমরান মালিক ভারতের স্কোয়াডের সঙ্গে গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
সেখানে তিনি ছিলেন নেট বোলার। মাত্র দুইটি ঘরোয়া ম্যাচ খেলেই উমরান মালিক ২০২১ সালে বিরাট কোহলির নজরে আসেন। কোহলির চাওয়াতেই তাকে নিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ দল সংযুক্ত আরব আমিরাতে যায়। গত আইপিএলে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ বল ১৩০ কিলোমিটার গতির নিচে করেছেন তিনি। তাই ভারতের সাবেক সফল পেসার ইরফান পাঠান, উমরান মালিককে গতির রাজা বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণের অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব
গাভি
একঝাঁক তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে আসা স্পেন দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন গাভি। বার্সেলোনার একাডেমি থেকে উঠে আসা গাভি দলটির নিয়মিত একাদশে সহজেই নিজের জায়গা করে নেন।
মাত্র ১৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার ক্লাবের হয়ে নজরকাড়া পারফর্ম করে কিছুদিন আগেই জিতেন তরুণ ফুটবলারদের শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার গোল্ডেন বয় অ্যাওয়ার্ড। পাসিং নির্ভর স্পেন দলে তার ভূমিকা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের। দারুণ পাসিং আর প্লেমেকিং করার ক্ষমতা, এই দুই মিশেলে গাভির মধ্যে স্পেনের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্দেজের ছায়া দেখছেন অনেকেই।
ইয়াসিন বুনু
মরক্কোর ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ অর্জন বিশ্বকাপের মঞ্চে চতুর্থস্থান অর্জন। আর এই সাফল্যের পেছনের কারিগর কেবলই গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। তিনি কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী বেলজিয়ামকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারানোর পর শেষ আটে রুখে দেন ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল স্পেনকে।
সেদিন টাইব্রেকারে স্পেনকে একটিও গোল করতে দেননি ৩১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। অথচ আফ্রিকার দেশটির হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করার আগে ইউরোপের দেশ কানাডার হয়ে খেলার সুযোগ ছিল তার। তিনি সেই সুযোগ না নিয়ে মরক্কোর লাল জার্সিতেই নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে হাঁটেন। সেই পথে তিনি আজ আফ্রিকার দেশটির ফুটবল কিংবদন্তিদের তালিকায়।