images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

টি-টোয়েন্টির জৌলুশে কি হারিয়ে যাবে টেস্ট ক্রিকেট?

রেজওয়ান আহমেদ

০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৬ এএম

আশঙ্কাটা যে একেবারে নতুন তা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনাটা অনেকটা পরোক্ষভাবেই উসকে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। আর তাই ক্রিকেটের প্রাচীনতম সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেট এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠেছে।

আসছে ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। কিউইদের বিপক্ষে সেখানে দুই ম্যাচের একটি টেস্ট সিরিজ খেলবে প্রোটিয়ারা। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে ভারতকে হারানো দলের মাত্র তিনজন ক্রিকেটার আছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের জন্য ঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪ সদস্যের টেস্ট স্কোয়াডে। এই দলের অধিনায়কসহ ৭ জন ক্রিকেটার আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়।

373283

আসন্ন টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্ব দেয়ার ভার ওঠেছে নিল ব্র্যান্ডের কাঁধে। ক্রিকেটের কোনো সংস্করণেই এখনো পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেননি ব্র্যান্ড। ৫০ বছরের মধ্যে মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

আরও পড়ুন- ফিলিস্তিনের পক্ষে আওয়াজ তুলে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় ভাসলেন খাজা

নিউজিল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার এমন আনকোরা দল গঠনের কারণ কি? এর কারণ আগামী ১০ জানুয়ারী থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগ (এসএটি২০)। আর এতে অংশ নেয়ার কারণেই কিউইদের বিপক্ষে সিরিজে থাকবেন না কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, টেম্বা বাভুমা, এইডেন মার্করাম, ত্রিস্তান স্টাবস, মার্কো ইয়ানসেন, উইয়ান মুল্ডার, জেরাল্ড কোয়েৎজি, টনি ডি জর্জির মত ক্রিকেটাররা।

ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার এমন পদক্ষেপের কারণেই নতুন করে আলোচনা ওঠেছে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জাঁকজমকে হারিয়ে যাবে টেস্টের মত ঐতিহ্যবাহী সংস্করণ। অনেকে বলছেন, প্রাচীনতম এই ফরম্যাটকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন জাদুর কাঠি।

আরও পড়ুন- টাইগারদের সমান পয়েন্ট নিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা কেন শীর্ষে?

টেস্ট ক্রিকেটের চাহিদা একসময় কমে যাবে এমন আশঙ্কা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ছিল। তবে কল্পনার চেয়েও তা দ্রুত শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় হয়তো খুব দ্রুতই আসবে যখন তরুণ প্রজন্মের সামনে সর্বকালের সেরা ব্যাটার হিসেবে ডন ব্র্যাডম্যানের নাম উচ্চারণ করলে তারা জানতে চাইবে, ব্র্যাডম্যানের স্ট্রাইক রেট কত ছিল?  

373220

টেস্ট ক্রিকেটের চাহিদা কমে যাওয়ার পেছনে ক্রিকেটার, ক্রিকেট প্রশাসক এবং দর্শক সবারই দায় আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অনেকেই বলে থাকেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সাফল্যের মাঝেই বিনাশের বীজও রোপন করা আছে।

আরও পড়ুন- সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচকে ‘পিঙ্ক টেস্ট’ বলা হচ্ছে কেন?

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের টানটান উত্তেজনা, চার-ছয়ের বন্যা, খেলা আকর্ষনীয় করতে নতুন নতুন সব নিয়মের প্রবর্তন, সম্প্রচারকদের নানা কলাকৌশল, স্পন্সরদের লাভ, ক্রিকেট বোর্ডগুলোর পর্যাপ্ত আয়- সব মিলিয়েই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের অর্থের ঝনঝনানিই একে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আর তাই ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বোর্ডগুলোও এই সংস্করণের ক্রিকেটেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডও এর বিকল্প কিছু করেনি। আগেও একবার নিজেদের ঘরোয়া লিগ আয়োজন করে ব্যর্থ হওয়ার পর এবারও যেন তেমন কিছু না হয় সেই কারণেই নিজেদের মূল ক্রিকেটারদের ধরে রেখেছে।

তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের থাবা থেকে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে বিশেষ করে ক্রিকেটের তিন মোড়ল- ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকেই বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু এই তিন মোড়ল প্রাচীনতম এই সংস্করণ নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয় বলেই মনে করেন সাবেক অজি কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ।

373496

৭ অনভিষিক্ত ক্রিকেটারকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দল ঘোষণার পর ওয়াহ বলেন, ‘এটিই কি টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যুর একটি নির্ধারণী মুহূর্ত? আইসিসির পাশাপাশি ভারত, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার অবশ্যই খেলার বিশুদ্ধতম এই সংস্করণ রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত।’ তবে টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যু হলেও তিন মোড়লের কিছু যায় আসে না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন আশঙ্কার মাঝেও আশা জাগান মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, উসমান খাজাদের মত ক্রিকেটাররা। যারা প্রাচীনতম এই সংস্করণে খেলাকেই সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে বিবেচনা করেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কামিন্স বলেন, ‘আমি বেড়ে উঠেছি টেস্ট ক্রিকেটকে দারুণ ভালোবেসে। আমার মনে হয়, এটি বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। আমি জানি, দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের সেরা দলটি পাঠাচ্ছে না। আশা করি, এটি (বিচ্ছিন্ন) একটা ঘটনা হয়ে থাকবে।’

সেই সাথে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজের মতামতও দিয়েছেন তিনি। কামিন্স বলেন, ‘আদর্শগতভাবে এটি টিকিয়ে রাখতে গেলে ১৫ থেকে ২০টি টেস্ট খেলুড়ে জাতি থাকবে, যারা সত্যিই শক্তিশালী। আমি জানি, অনেক রকমের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় যে এটি প্রাধান্য পায়, সে কারণে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। যখনই খেলি, অনেক সমর্থন পাই। আমি জানি না, জাদুকরি সমাধান কী হতে পারে, তবে এমন কিছু থাকলে দারুণ হতো।’