ধর্ম ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৫ পিএম
সাতটি বিধ্বংসী গুনাহ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন নবীজি (স.)। অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এ কাজগুলোর ব্যাপারে অলসতা করে। অথচ কাজগুলো মুমিন মুসলমানের ঈমান-আমল ধ্বংসকারী, হারাম ও কবিরা গুনাহ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি সর্বনাশা কর্ম হতে দূরে থাকো। সকলে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তা কী কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, জাদু করা, ন্যায় সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) যুদ্ধের দিন পলায়ন করা এবং সতী উদাসীনা মুমিন নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি: ২৭৬৬, ৬৮৫৭, মুসলিম: ২৭২)
হাদিসে বর্ণিত উল্লেখিত ৭টি গুনাহের ভয়াবহতা সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
১. শিরক
এটি ঈমান বিধ্বংসী পাপ। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (স.) এটিকে ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। এটি ছাড়া যাবতীয় গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।’ (সুরা নিসা: ১১৬)
২. জাদু
জাদুকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাদু ঈমান ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে পরিচিত। কারণ জাদুবিদ্যাকে ভবিষ্যৎ জ্ঞানের সংবাদবাহী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ ভবিষ্যতের জ্ঞান শুধু মহান আল্লাহই জানেন। অন্য কেউ নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুলায়মান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত..।’ (সুরা বাকারা: ১০২)
আরও পড়ুন: সুলাইমান (আ.)-এর কি জাদুর আংটি ছিল?
৩. হত্যা
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ইসলামে হারাম ও মহাপাপ। সর্বনাশা কাজের মধ্যে অন্যতম। কেননা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মানবতা হত্যার শামিল। যারা অন্যায়ভাবে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে, জাহান্নামই তাদের নিশ্চিত ঠিকানা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আজাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)
আরও পড়ুন: অনর্থক হত্যা কেয়ামতের আলামত, নিহত ব্যক্তিও জাহান্নামি!
৪. সুদ
ইসলামে সুদ একটি ভয়াবহ ও বিধ্বংসী গুনাহ। সুদখোর স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না করো তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও..।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)
৫. এতিমের সম্পদ খাওয়া
এতিমের অধিকার নষ্ট করা হারাম ও ইসলামে সর্বনাশা পাপের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সুরা নিসা: ১০)
আরও পড়ুন: মেরাজে নবীজির দেখা কিছু পাপের ভয়ঙ্কর শাস্তি
৬. যুদ্ধ থেকে পালানো
ইসলামে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজ। পবিত্র কোরআনে এ কাজের শাস্তি জাহান্নাম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের মুখোমুখি হবে, তখন পশ্চাৎপসরণ (পলায়ন) করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাৎপসরণ করবে (পালিয় যাবে), অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের কাছে আশ্রয় নিতে আসে, সে ব্যতীত অন্যরা আল্লাহর গজব সঙ্গে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হলো জাহান্নাম। বস্তুত সেটা হলো নিকৃষ্ট অবস্থান। (সুরা আনফাল: ১৫-১৬)
৭. সতী নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ
ইসলামে সতী নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ মারাত্মক ও বিধ্বংসী গুনাহের মধ্যে অন্যতম। কেননা কোনো নারীর প্রতি অপবাদ তার সংসার ও সামাজিক সুনাম আত্মীয়তার সব সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) আছে মহা শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
আরও পড়ুন: অপবাদের শাস্তি ভয়ংকর
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয়নবী (স.) ঘোষিত উল্লেখিত ৭টি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। হাদিসের নির্দেশনা মেনে আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস গ্রহণ করা, জাদুটোনা থেকে বিরত থাকা, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা, সুদের সঙ্গে জড়িত না হওয়া, এতিমের সম্পদ গ্রাস না করা, ঈমান ও ইসলামের প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে না যাওয়া এবং মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।