কারও বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ। অপবাদকে বলা হয় মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায়। যে দোষ কারও ভেতর নেই, এমন দোষ তার জন্য সাব্যস্ত করাকে অপবাদ বলা হয়। কিছু অপবাদ কুফরির অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ, তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে অপবাদ। এমনকি মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে যারা অপবাদ দেয়, তাদের ব্যাপারেও কঠিন হুঁশিয়ারি রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) আছে মহা শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
অপবাদকে অনেকে ছোট গুনাহ মনে করে থাকেন। তাদের ধারণা- কারও বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা কথা বললাম- এ আর এমন কী! কিন্তু এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কী বলছেন সেটা চিন্তা করা উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর অপরাধ।’ (সুরা নুর: ১৫)
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কথা কেউ কেউ বলে, অথচ সে জানে না এটা কতদূর গিয়ে গড়াবে (অর্থাৎ সে কোনো গুরুত্বের সঙ্গে বলেনি) অথচ এর কারণে সে জাহান্নামের আসমান ও জমিনের দূরত্বের চেয়েও বেশি গভীরে পৌঁছবে।’ (বুখারি: ৬৪৭৮; মুসলিম: ২৯৮৮)
পবিত্র কোরআনে এ ধরণের মিথ্যা কথাকে মূর্তিপূজার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘...সুতরাং তোমরা বর্জন করো মূর্তি পূজার অপবিত্রতা এবং মিথ্যা কথা থেকে দূরে থেকো।’ (সুরা হজ: ৩০)
অপবাদ দুই ধরনের। ১) যে অপবাদে ইসলামে নির্দিষ্ট পরিমাণের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। যেমন—ব্যভিচারের প্রকাশ্য অপবাদ অথবা কারো বংশীয় পরিচয় অস্বীকার করা। ২) যে অপবাদে ইসলামে নির্দিষ্ট পরিমাণের কোনো শাস্তি নেই। এমন অপবাদের ক্ষেত্রে অপবাদকারীকে শিক্ষামূলক কিছু শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে।
তবে যেসব অপবাদের শাস্তি হিসেবে বেত্রাঘাত করতে হয় না, সেগুলো চার ধরনের। যেমন— ১. যাকে অপবাদ দেওয়া হলো, সে ক্ষমা করে দিলে। ২. যার বিরুদ্ধে যেই অপবাদ দেওয়া হয়েছে, অপবাদকে সে স্বীকার করলে। ৩. অপবাদকারী তার অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে সঠিক প্রমাণ দাঁড় করালে। ৪. পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে নিজেকে লানত করতে রাজি হলে।
বিজ্ঞাপন
অপবাদ থেকে বাঁচার উপায় হলো, সাধারণভাবে মানুষের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা এবং অনুমান থেকে দূরে থাকা। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থেকো...।’ (সুরা হুজরাত: ১২)
অপবাদ দেওয়া হয় কাউকে হেয় করার জন্য; মানুষের কাছে তার চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে। অথচ হাদিস অনুযায়ী, প্রকৃত মন্দলোক হচ্ছে অপবাদকারী নিজে। রাসুল (স.) বলেন, ‘একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। ’ (মুসলিম: ৬৪৩৫)
কারও ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হলে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না। কেননা অপবাদ বান্দার হক। তাই জীবনে কাউকে গালি দিয়ে থাকলে, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে থাকলে, অন্যায়ভাবে প্রহার, রক্তপাত করে থাকলে তাদের কাছ থেকে ক্ষমা নেওয়া জরুরি। তা না হলে অত্যাচারিতদের গুনাহগুলো তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হাদিসে ওই ব্যক্তিকে মুফলেস বা নিঃস্ব বলা হয়েছে। (মুসলিম: ২৫৮১, তিরমিজি: ২৪১৮,২৪১৯; আহমদ: ৭৯৬৯, ৮২০৯)
মনে রাখতে হবে, রাসুল (স.) ভিত্তিহীন কথা বলতে যেমন নিষেধ করেছেন, যেকোনো কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেও নিষেধ করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, যা শুনে তা-ই বলতে থাকা কারও মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (মুসলিম: ৫)
তাই কোনো কথাই ভালোভাবে যাচাই না করে বলে বেড়ানো উচিত নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। এতে অন্যরাও বিপথগামী হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সত্য কল্যাণের পথে পরিচালিত করে, আর কল্যাণ জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের ওপর অবিচল থেকে অবশেষে সিদ্দিকের মর্যাদা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহা মিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়। (বুখারি: ৬০৯৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অপবাদের মতো কঠিন গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।