ধর্ম ডেস্ক
১৫ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০০ পিএম
মুমিন বান্দার লক্ষ্য থাকে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাই স্বভাবগতভাবেই আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ জেনে সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করে। কেননা একজন মুমিনের সার্থকতা তার প্রভুর সন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত। প্রত্যেক মুমিনের উচিত যেভাবে ইবাদত করলে আল্লাহ খুশি হন সে সম্পর্কে ধারণা রাখা।
অনেক ইবাদত একসঙ্গে নয়, বরং ধারাবাহিক আমলের প্রতি উৎসাহিত করেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। কেননা আল্লাহ তাআলার কাছে নিয়মিত ইবাদতই অধিক পছন্দনীয়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) শাবান মাসে যত সিয়াম পালন করতেন, সারা বছরে অন্য কোনো মাসে তিনি এত অধিক সিয়াম পালন করতেন না। আর তিনি (লোকদের উদ্দেশে) বলতেন, তোমরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যত বেশি পারো আমল করো।
আরও পড়ুন: কঠিন ফিতনার দিনে ঈমান রক্ষার আমল
কেননা আল্লাহ তাআলা (তোমাদের সওয়াব দানে) ক্লান্ত বা বিরক্ত হবেন না, যতক্ষণ তোমরা অক্ষম হয়ে না পড়বে। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে, যা কোনো বান্দা অব্যাহতভাবে করে থাকে— যদিও তা পরিমাণে কম হয়। (মুসলিম: ২৬১৩)
জীবনে সফলতা অর্জনেও গুণ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। যারা একসঙ্গে অনেক কাজ হাতে নেয়, দেখা যায় অল্পদিন পর বিরক্ত বা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাদের পক্ষে সফল হওয়া সহজ হয় না। বরং নিয়মমাফিক চেষ্টা এবং নিশ্ছিদ্র সাধনা মানুষকে উচ্চতার শিখরে নিয়ে যায়। সে কাজেই বরকত নিহিত যা নিয়মমাফিক করা হয়। একইভাবে অধিক পরিমাণে আমলের চেয়ে অল্প ধারাবাহিক আমলই আল্লাহর কাছে প্রিয়। এই ধারাবাহিকতার মাধ্যমে বান্দা বিশেষ স্তরে পৌঁছার সুযোগ পায়। অন্যথায় গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হয় না।
তাই ধৈর্য আর ধারাবাহিক চেষ্টায় যেকোনো অসম্ভবকে হাতের নাগালে আনার চেষ্টা করতে হবে। অধ্যবসায় যাদের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে তারাই সফলতার সিঁড়িতে আরোহণ করেছে। যেকোনো জিনিস অর্জন করতে হলে সে কাজে অধ্যবসায় থাকতে হবে। আর তখনই তার লক্ষ্য অর্জিত হবে।
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে এমন আমল সবচেয়ে প্রিয় যা কম হলেও স্থায়ীভাবে করা হয়। হাদিসের বর্ণনাকারী কাসেম ইবনে মুহাম্মদ বলেছেন, আয়েশা (রা.) কোনো আমল শুরু করলে তা স্থায়ী ও অবশ্যকরণীয় করে নিতেন। (মুসলিম: ১৭১৫)
আরও পড়ুন: নবীজির চরিত্র সম্পর্কে আয়েশা (রা.) যা বলেছেন
সুতরাং কোনো আমল যেন ছেড়ে দিতে না হয়, সেজন্য প্রথমে অল্প অল্প করার মাধ্যমে ধারণক্ষমতায় নিয়ে আসতে হবে। যাতে আমলটি সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, কোনো অবস্থায় নেক আমল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। প্রিয়নবী (স.) সাহাবিদের আমল শুরু করে আবার ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) আমাকে বলেন, হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদত করত, পরে রাত জেগে ইবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। (সহিহ বুখারি: ১১৫২)
অথচ আমরা জানি যে, ছোট ছোট অনেক আমল আছে, যা নিয়মিত করলে জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। যেমন— (১) ‘যে ব্যক্তি সময়মতো নামাজ আদায়ে যত্নবান হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর প্রতিশ্রুতি’ (আবু দাউদ: ১৪২০)। (২) ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে এবং একাগ্রচিত্তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত’ (আবু দাউদ: ১৬৯)।
(৩) ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা নেই’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি: ৯৮৪৮)। (৪) নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ (জিহ্বা) ও দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জা স্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করব’ (বুখারি: ৬৪৭৪)।
আরও পড়ুন: ফরজ নামাজের পর যে আমলে জান্নাত
এছাড়াও রাসুল (স.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের লালনপালনকারী জান্নাতে একসঙ্গে এমনভাবে থাকব..’ (বুখারি: ৫৩০৪)। সুতরাং নিয়মিত এতিমের লালন করার দায়িত্বও নেওয়া যায়। দান-সদকা, মা-বাবার সেবা, ইলম অর্জন এবং আসমাউল হুসনা আয়ত্ত করাও জান্নাতের পথকে সুগম করে।
আল্লাহর কাছে নিয়মিত আমলের এত গুরুত্ব তাঁরই মহান কুদরতের অংশ। আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে এ নামাজ একসঙ্গে অথবা দুই ওয়াক্তে ফরজ করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নামাজকে পাঁচ সময় ভাগ করে দিয়েছেন; যাতে বান্দা কিছুক্ষণ পরপর আল্লাহকে স্মরণ করে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে সে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যেকোনো আমলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।