বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফরজ নামাজের পর যে আমলে জান্নাত 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২, ০২:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ফরজ নামাজের পর যে আমলে জান্নাত 

প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর উম্মতের জন্য জান্নাতে যাওয়ার অনেক আমলের বর্ণনা দিয়েছেন। এসব আমল বান্দার অপরাধ ও পাপ থেকে মুক্ত থাকার মাধ্যম হয়। ফলে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। তেমনই এক আমল হচ্ছে ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতটিকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। 

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পবিত্র আয়াতটি পাঠ করা সুন্নত।  প্রসিদ্ধ এই আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন—


বিজ্ঞাপন


‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান: ২৩৯৫; নাসায়ি: ৯৪৪৮, তাবারানি: ৭৮৩২)

আয়াতুল কুরসি

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।


বিজ্ঞাপন


আয়াতুল কুরসির অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

পার্থিব নিরাপত্তালাভে আয়াতুল কুরসি
পার্থিব নিরাপত্তায়ও এই আয়াতে কারিমার বিশেষত্ব আছে। সেরকমই একটি ঘটনা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসুল (স.) আমাকে জাকাতের সম্পদ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন দেখতে পেলাম একজন আগন্তুক সদকার মাল চুরি করছে। তখন আমি তার হাত ধরে ফেললাম এবং বললাম- আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলল, আমি খুব অভাবী আর আমার অনেক প্রয়োজন। তার এ কথা শুনে দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম।

পরদিন সকালে রাসুল (স.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসুল, লোকটি নাকি অনেক অভাবী তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (স.) বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আমি আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল, তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি খুব অভাবী, আমার পরিবার আছে, আমি আর আসব না। তখন আমি তাকে দয়া করে এবারও ছেড়ে দিলাম।

পরদিন আবারও রাসুল (স.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি এবারও উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসুল, লোকটি নাকি অনেক অভাবী— তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (স.) এবারও বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, আর সে আবার আসবে। তৃতীয় দিনও আমি চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল, তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব, তুমি বার বার প্রতিশ্রুতি করেও চুরি করতে এসে থাকো। তখন (অবস্থা বেগতিক দেখে) সে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু কথা জানাবো— যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আমি বললাম, সেগুলো কী? তখন সে বলল, যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, যে তোমার সঙ্গে থাকবে। আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন।

পরদিন রাসুল (স.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (স.)  বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে । রাসুল (স.) আবু হুরায়রা (রা.)-কে আরো বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (স.) আবু হুরায়রাকে বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহিহ বুখারি: ২৩১১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর