ধর্ম ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
মানুষের জীবন পরিকল্পনা, আশা-নিরাশা, সাফল্য- ব্যর্থতায় ভরা। কিন্তু এক বিশ্বাস মুমিনকে সব ভয় থেকে মুক্ত করে। তা হলো- আল্লাহ যদি কারো জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করেন, বিশ্বের কোনো শক্তি তা থামিয়ে দিতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহকে রোধ করার মতো কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস: ১০৭)আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যা মানুষের জন্য উন্মুক্ত করেন তাঁর রহমত থেকে, তা কেউ রোধ করতে পারে না।’ (সুরা ফাতির: ২)
এই আয়াতগুলো মুমিনের হৃদয়কে পরিষ্কার বার্তা দেয়- মানুষ নয়, সিস্টেম নয়, ভাগ্য নয়, কল্যাণ শুধুই আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
‘আল্লাহর সিদ্ধান্তের পরিবর্তন নেই।’ (সুরা ইউনুস: ৬৪) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার যে কল্যাণ হয়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়।’ (সুরা নিসা: ৭৯) অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে হাজার বাধাও কল্যাণ থামাতে পারে না।
আরও পড়ুন: আল্লাহ যাদের দ্বীনি জ্ঞান দান করেন
রাসুল (স.) বলেন, ‘সব মানুষ একত্র হলেও তোমাকে উপকার করতে পারবে কেবল সেইটুকু, যা আল্লাহ লিখে দিয়েছেন… এবং ক্ষতি করতে পারবে শুধু সেটুকুই, যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।’ (তিরমিজি: ২৫১৬)
অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীতে কারো ক্ষতি বা কল্যাণ কিছুই করতে পারবেন না। এই হাদিস ভয়, দুশ্চিন্তা ও মানুষের ওপর নির্ভরতা দূর করে দেয়।
মুমিনের জন্য জরুরি যে, সব বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্ত, হুকুম, ফায়সালা মেনে নেওয়া এবং তাতে সন্তোষ প্রকাশ করা। এটাই হলো আনুগত্য। আর আনুগত্য পূর্ণতা লাভ করে আল্লাহ বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষা নিলে ধৈর্য ধারণ, অনুগ্রহ করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, তাঁর নির্ধারিত ভাগ্য, ফায়সালা, দান ও ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতি সন্তোষ প্রকাশের মাধ্যমে। মুমিন সর্বাবস্থায় ইসলামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে এবং রীতিনীতি, শিষ্টাচার, আদর্শ, নৈতিকতা, জীবনযাপন, দুনিয়াবিমুখতা ও পরকালীন কল্যাণ লাভে সচেষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যথাযথ আনুগত্য করবে।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ: ৬/২৪৯১)
‘আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের বিশুদ্ধ বুঝ দান করেন।’ (সহিহ বুখারি: ৭১; সহিহ মুসলিম: ১০৩৭) অর্থ: আল্লাহর কল্যাণ শুধু দুনিয়া নয়, আখেরাতের পথও খুলে দেয়।
আরও পড়ুন: যেসব আমলে দৃঢ় থাকলে নিশ্চিত সুখী হবেন
ইবরাহিম (আ.): নমরুদের বিশাল অগ্নিকুণ্ডও বাধা হতে পারেনি। ‘হে আগুন! ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৯)
মুসা (আ.): ফেরাউন সেনাবাহিনীসহ চেষ্টা করেও বাধা দিতে পারেনি। আল্লাহ সমুদ্রের মাঝে পথ তৈরি করে দিয়েছেন।
ইউসুফ (আ.): কূপে ফেলা হয়েছিলেন, শেষে মিশরের মন্ত্রী। এটাই আল্লাহর ইচ্ছার শক্তি।
আরও পড়ুন: আমল কবুলের ৭ লক্ষণ: কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশ্লেষণ
১. রিজিক: ‘প্রতিটি প্রাণীর রিজিক আল্লাহর দায়িত্বে।’ (সুরা হুদ: ৬) চাকরি হারানো, ব্যবসায় ক্ষতি এসবের পরও মুমিন জানে- আল্লাহ চাইলে আরও ভালো কিছু আসবেই।
২. সম্মান–মর্যাদা: ‘সম্মান আল্লাহর হাতে।’ (সুরা আলে ইমরান: ২৬) মানুষ অপমান করলেও আল্লাহ চাইলে সম্মানে রূপ দেয়।
৩. শত্রু: ‘তারা ষড়যন্ত্র করে, আর আল্লাহও পরিকল্পনা করেন; আর আল্লাহই শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।’ (সুরা আনফাল: ৩০) যারা ক্ষতি করতে চায়, তারা আসলে আল্লাহর পরিকল্পনার বাইরে কিছুই করতে পারে না।
ভয় দূর হয়: কারণ মানুষ ক্ষতি করতে সক্ষম নয় আল্লাহর অনুমতি ছাড়া।
দুশ্চিন্তা কমে: কারণ কল্যাণ নির্ধারিত হলে কেউ আটকাতে পারবে না।
দোয়া শক্তিশালী হয়: কল্যাণের দরজা তিনিই খোলেন।
আশা থাকে অটুট: একটি দরজা বন্ধ হলে আল্লাহ আরও ভালো দরজা তিনিই খুলে দেন।