ইলম বা দ্বীনি জ্ঞান আল্লাহ তাআলার মহান নেয়ামত। এই নেয়ামত দিয়ে তিনি তাঁর পছন্দের বান্দাদের সুশোভিত করেন। তাই আলেমে দ্বীনের মর্যাদা অতুলনীয়। পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الَّذِیْنَ یَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ ‘বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সুরা জুমার: ৯)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন না। যাদের কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন, শুধুমাত্র তাদেরকেই দান করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- مَنْ يُرِدِ الله بِهِ خَيْراً يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ ‘আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের বিশুদ্ধ বুঝ দান করেন।’ (সহিহ বুখারি: ৭১; সহিহ মুসলিম: ১০৩৭)
বিজ্ঞাপন
কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় আলেমে দ্বীনের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- یَرْفَعِ اللهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجٰتٍ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন।’ (সুরা মুজদালাহ: ১১)
আরও পড়ুন: আলেমের মর্যাদা ও বিদ্বেষপোষণের পরিণতি
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- لاَ حَسَدَ إِلّا فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَسُلِّطَ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الحَقِّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الحِكْمَةَ فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا ‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো ব্যাপারেই হিংসা হতে পারে না। ১. আল্লাহ পাক যাকে সম্পদ দান করেছেন আর সে ন্যায়ের পথে খরচ করতে থাকে। ২. যাকে দ্বীনি জ্ঞান দান করেছেন আর সে তা দিয়ে বিচার করে এবং তা মানুষকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি: ৭৩; সহিহ মুসলিম: ৮১৬)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا، سَهّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنّةِ ‘যে ব্যক্তি ইলম তলবের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ পাক এর বদৌলতে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯)
বিজ্ঞাপন
হজরত সাফওয়ান ইবনে আসসাল (রা.) বলেন, আমি নবীজি (স.)-এর কাছে ছিলাম। তখন তিনি মসজিদে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি এসেছি ইলম শিক্ষা করার জন্য। তিনি বললেন, তালেবে ইলমকে মারহাবা। নিশ্চয় তালেবে ইলমকে ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে রাখে এবং তাঁদের ডানা দিয়ে তাকে ছাঁয়া দিতে থাকে। অতঃপর তাঁরা সারিবদ্ধভাবে প্রথম আসমান পর্যন্ত মিলে মিলে দাঁড়িয়ে যায়। এসব কিছু তাঁরা সে যা অন্বেষণ করছে তার ভালবাসায় করে। (আখলাকুল উলামা, আর্জুরি: ১/৩৭; তবারানি কাবির: ৭৩৪৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫৫০)
আরও পড়ুন: সন্তান বিখ্যাত আলেম হওয়ার কোনো আমল আছে?
হাদিস শরিফে ইলম অন্বেষণের রাস্তাকে আল্লাহর রাস্তা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى يَرْجِعَ ‘যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের জন্য বের হলো সে আল্লাহর রাস্তায় বের হলো।’ (জামে তিরমিজি: ২৬৪৭)
অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে- مَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا، لَمْ يَأْتِهِ إِلّا لِخَيْرٍ يَتَعَلّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে আসলো শুধু এ কারণে যে, সে কোনো কল্যাণের বাণী শিখবে অথবা শেখাবে, সেই ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায় ‘ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৭; মুসনাদে আহমদ: ৯৪১৯)
অপর এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি রাস্তা খোলা থাকে। ১. ছদকায়ে জারিয়া। ২. এমন ইলম, যা থেকে (মানুষ) উপকৃত হয়। ৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬৩১)
আরো ইরশাদ হয়েছে- خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন মাজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) হজরত আবু জর (রা.)-কে সম্বোধন করে বলেছেন, হে আবু জর, কোরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা তোমার জন্য একশ রাকাত নফল নামাজ পড়ার চেয়েও উত্তম। ইলমের একটি অধ্যায় শিক্ষা করা তোমার জন্য এক হাজার রাকাত নফল নামাজ পড়ার চেয়েও উত্তম। চাই এর উপর আমল করা হোক বা না হোক।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২১৯)
উল্লেখিত কোরআন-হাদিসের দলিলাদির আলোকে যে কারো বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমল। আমি আপনি যদি আজ থেকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের চেষ্টায় রত হই, বুঝতে বাকি রইবে না যে, আল্লাহ অবশ্যই আমাদের কল্যাণ চাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, প্রত্যেক বিষয়ে নিয়ত বিশুদ্ধ করা জরুরি। ইলম অর্জনেও নিয়ত সহিহ করতে হবে। যদি পার্থিব উদ্দেশ্য সামনে চলে আসে, তাহলে এত বড় আমল বিফলে যাবে। এ বিষয়ে সতর্ক করে প্রিয়নবী (স.) বলেছেন- مَنْ تَعَلّمَ عِلْمًا مِمّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزّ وَجَلّ لَا يَتَعَلّمُهُ إِلّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِي رِيحَهَا ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শিক্ষা করা হয় এমন ইলম যেই ব্যক্তি পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শিক্ষা করবে, কেয়ামতের দিন সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮৪৫৭; সুনানে আবু দাউদ: ৩৬৬৪)
অন্য হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন- لَا تَعَلّمُوا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ الْعُلَمَاءَ، وَلَا تُمَارُوا بِهِ السّفَهَاءَ، وَلَا تَخَيّرُوا بِهِ الْمَجَالِسَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنّارَ النّارَ ‘তোমরা এই উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করো না যে, এর মাধ্যমে আলেমদের সাথে গর্ব করবে বা মূর্খদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হবে। কিংবা মজলিসের অধিকর্তা হবে। যে এমন করবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৭৭)

