images

ইসলাম

চাঁদাবাজি শুধু আইনভঙ্গ নয়, ইসলামেও মারাত্মক অপরাধ

ধর্ম ডেস্ক

২৯ মে ২০২৫, ০১:২৯ পিএম

চাঁদাবাজি আমাদের সমাজের একটি ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষত কোরবানির পশুর হাট, পরিবহন খাত, দোকানপাট কিংবা নির্মাণসাইট—প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসাধু লোকজন জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে সাধারণ মানুষের জীবনে দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরি করছে। অনেকেই এটিকে কেবল “আইন ভঙ্গ” বলে মনে করলেও ইসলামের দৃষ্টিতে চাঁদাবাজি একটি মারাত্মক গুনাহ, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়।

চাঁদাবাজি নিয়ে ইসলাম কী বলে

ইসলামে জুলুম, জবরদস্তি, জালেমের সাহায্য কিংবা অন্যের হক নষ্ট করার বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে বাজার ব্যবস্থা পবিত্র ও সতঃস্ফূর্ত থাকে।

কোরআনের সতর্কবার্তা

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, “তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং বিচারকের কাছে পৌঁছানোর জন্য (মিথ্যা) সুপারিশ করো না, যাতে অন্যের সম্পদ জেনে-বুঝে আত্মসাৎ করতে পারো।” (সুরা বাকারা: ১৮৮)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, কারও অনুমতি ছাড়া বা জালিয়াতি ও শক্তি প্রয়োগ করে সম্পদ নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

আরও পড়ুন: বাজার নিয়ন্ত্রণে হাদিসের নির্দেশনা

চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নবীজির (স.) অবস্থান

রাসুলুল্লাহ (স.) অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে হুঁশিয়ার করে বলেছেন- ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ না করে। কোনো ব্যক্তির সম্পদ তার স্বীকৃতি ছাড়া হালাল হয় না।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৩৩১)

অন্য এক হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারও এক বিঘত জমিও নেয়, কিয়ামতের দিন তাকে সাত জমিন পর্যন্ত গলার শেকল বানিয়ে পরানো হবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৪৫৩)

এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ ও সম্পদ দখল চরম গুনাহের কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ইসলামে ব্যবসায়িক লেনদেনে স্বচ্ছতার গুরুত্ব

চাঁদাবাজি কেবল অন্যের হক হরণই নয়, বরং এটি ব্যবসা-বাণিজ্যে ফিতনা সৃষ্টি করে। চাঁদাবাজরা সাধারণত ক্ষমতাবান হয়। চাঁদা না দিলে প্রশাসনকেও তারা এই অন্যায়ে কাজে লাগায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সাবধান করে বলেন, আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ করো না। (সুরা বাকারা: ১৮৮)

আরও পড়ুন: ব্যবসায় সফল হতে চাইলে নবীজির ৭ নির্দেশনা মানুন

অথচ লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ। এখানে কোনো চাঁদাবাজি থাকবে না, জালিয়াতি ও ফাঁকিবাজি থাকবে না। ইসলাম ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওজন ও মাপে কম দিও না।’ (সুরা শুআরা: ১৮১)

রাসুলুল্লাহ (স.) স্পষ্ট ঘোষণা করেন ‘যে ধোঁকা ও প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম : ১৪৬)

এসব দলিলেও ইঙ্গিত রয়েছে—আর্থিক লেনদেনে অসদাচরণ আল্লাহর গজব ডেকে আনে।

হাটে চাঁদাবাজি: রাসুল (স.)-এর সুন্নাহবিরোধী

নবীজি (স.) মদিনায় হাট চালু করেন কিন্তু সেখানে কোনো কর বা অতিরিক্ত চাঁদা নির্ধারণ করেননি। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (স.) একটি বাজার স্থাপন করেন এবং বলেন, এখানে কেউ কর আদায় করবে না।’ (সুনান ইবনু মাজাহ: ২২৪২)

অথচ আজ আমরা তার উল্টো চর্চা করছি। হাটে-পথে গরিব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা শুধুই অবিচার নয়—এটি সুন্নাহবিরোধী কাজ।

চাঁদাবাজদের পরিণতি কী

চাঁদাবাজরা সাধারণত দুনিয়াতে শক্তিমান হলেও কেয়ামতের দিনে তারা চরম অপমান ও আজাবের শিকার হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘যারা জুলুম করে, তারা জানতে পারবে তাদের কেমন পরিণাম অপেক্ষা করছে।’ (সুরা শুআরা: ২২৭)

আরও পড়ুন: বাজারে সিন্ডিকেটকারীদের পরিণাম জানিয়ে দিলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

করণীয় কী

  • চাঁদাবাজিকে ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা।
  • আলেম, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে একসাথে সচেতন হওয়া।
  • হাট-বাজারে নিরপেক্ষ ও ধর্মীয় নীতিতে পরিচালিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
  • চাঁদাবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করা ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।

শেষ কথা, চাঁদাবাজি কেবল প্রশাসনিক দুর্নীতি বা সামাজিক সমস্যা নয়—এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও পাপ। এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে কেবল আইনি নয়, আখিরাতের ভয় থেকেও সচেতন হতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করাই এখন সময়ের দাবি।