ব্যবসা-বাণিজ্য ইসলামের দৃষ্টিতে একটি মহৎ পেশা। ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে শুধু বৈধ বলেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং এ ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছে। মহানবী (স.) নিজেও নবুয়তের আগে বড় পরিসরে ব্যবসা করেছেন এবং সফল হয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা ও বরকতলাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলের কথা হাদিসে বলা আছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো—
১) হালালভাবে ব্যবসা করা
হালালভাবে এবং হালাল পণ্যের ব্যবসা না করলে আপনি হয়ত সাময়িক লাভবান হতে পারবেন, কিন্তু ওই লাভে বরকত মিলবেন না। হারাম ব্যবসায় বাহ্যত অনেক মুনাফা দেখা গেলেও দিনশেষে দুশ্চিন্তা, হতাশা ও বিপদাপদ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। আবু সাইদ আল খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) দাঁড়ালেন, অতঃপর লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, হে লোক সকল, ‘...আর যে ব্যক্তি অসৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে—সে অনেক খাচ্ছে কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারছে না।’ (মুসলিম: ২৩১১)
বিজ্ঞাপন
২) ব্যবসার কাজে ভোরবেলায় বের হওয়া
সবচেয়ে বরকতপূর্ণ সময় হচ্ছে ভোরবেলা। নবীজি (স.) উম্মতের জন্য ভোরবেলাকে বরকতপূর্ণ করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। তাই ব্যবসায় বরকত পেতে ভোরবেলায় কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করা উচিত। নবীজি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।’ (আবু দাউদ: ২৬০৬)
৩) পারিশ্রমিক প্রদানে অবহেলা না করা
ব্যবসায় বরকত লাভের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, কর্মচারীর অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। যারা কর্মচারীর হক নষ্ট করে তার বিরুদ্ধে স্বয়ং আল্লাহ বাদী হবেন। (বুখারি: ২২২৭)। আল্লাহ তাআলা নিজেই কারো প্রতি ক্ষুব্ধ হলে, তার দুনিয়া-আখেরাত দুটাই নিষ্ফল হয়ে যায়।
৪) আল্লাহর ইবাদতে গাফেল না হওয়া
যারা কাজের চাপে কিংবা ব্যবসার ব্যস্ততায়ও মহান আল্লাহর স্মরণকে ভুলে যাবে না, মহান আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্ট প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেই সব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের কর্মের উৎকৃষ্টতম প্রতিদান দেবেন। অর্থাৎ শুধু কর্মের প্রতিদানই শেষ নয়; বরং আল্লাহ নিজ কৃপায় তাদের বাড়তি নেয়ামতও দান করবেন।’ (সুরা নুর: ৩৭-৩৮)
৫) সততা ও তাকওয়া অবলম্বন করা
সততা ও তাকওয়ার সঙ্গে ব্যবসা করলে তা যেমন কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসাবে, তেমনি এগুলো পরিত্যাগ করলে কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বড় পাপিষ্ঠরূপে উঠতে হবে। তাই ব্যবসায় সততা ও তাকওয়া অবলম্বন করা আবশ্যক। (তিরমিজি: ১২১০)। তাছাড়া রাসুল (স.) বলেছেন, মিথ্যা কসম পণ্য চালু করে দেয় বটে, কিন্তু বরকত নিশ্চিহ্ন করে দেয়।’ (বুখারি: ২০৮৭)
বিজ্ঞাপন
৬) যৌথ ব্যবসায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা
যৌথ ব্যবসায় সততা বজায় রাখলে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ বলেন, আমি দুই অংশীদারের মধ্যে তৃতীয় অংশীদার, যতক্ষণ তারা একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাঘাতকতা না করে। যখন এক অংশীদার অপরের সঙ্গে খেয়ানত করে, তখন আমি তাদের থেকে সরে যাই।’ (আবু দাউদ: ৩৩৮৩)
৭) ব্যবসাসংক্রান্ত ইসলামি বিধান মেনে ব্যবসা করা
হালালভাবে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই ইসলামের ব্যবসাসংক্রান্ত বিধানগুলো জেনে সে মোতাবেক ব্যবসা করার চেষ্টা করা মুমিনের দায়িত্ব। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে করা আবশ্যক। নইলে রিজিকে হারামের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ওমর (রা.) বলেছেন, ‘যার দীন প্রসঙ্গে সঠিক জ্ঞান আছে শুধু সে-ই যেন আমাদের বাজারে ব্যবসা করে।’ (তিরমিজি: ৪৮৭) ব্যবসায় বরকত নষ্টের এটাও একটি কারণ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা করার তাওফিক দান করুন এবং ব্যবসায় সফল করে দিন। আমিন।