নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৫৪ পিএম
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে সরকার দায়ী থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতদিন নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান দেখালেও এবার স্থানের বিষয়ে কিছুটা ‘নমনীয়’ ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিকল্প কোনো ভেন্যু থাকলে আমাদের বলুন, সেটা গ্রহণযোগ্য হলে আমরা বিবেচনা করব।’
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে দেশের নয়টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে বিএনপি। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কথা রয়েছে দলটির। অন্যান্য সমাবেশগুলো শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও ঢাকার কর্মসূচি ঘিরে বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: থমথমে নয়াপল্টন, জনমনে আতঙ্ক
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হলেও নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে আছে বিএনপি। এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। একে গুলিতে প্রাণ হারান একজন।
সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে দলটির মধ্যসারির কয়েকজন নেতাসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সমাবেশ নিয়ে বিএনপির অবস্থানসহ নানা বিষয়ে কথা বলে বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। সেখানে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশ করবেই বলে জানান তিনি। তবে সমাবেশের স্থান নিয়ে কিছুটা নমনীয় সুরে কথা বলতে দেখা যায় বিএনপি মহাসচিবকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা বলেছি এবং সরকারের কাছে বলেছি বিকল্প কোনো ভেন্যু থাকলে সেটা আমাদের বলুন। সেটা যদি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে আমরা ভেবে দেখব।
বোমা নিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে ঢোকে পুলিশ
সংবাদ সম্মেলনে গতকালের সংঘর্ষের সময় বোমা উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাত বোমা নিয়ে যায় এবং সেখানে রেখে আসে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এরপর দলীয় কার্যালয়ে তারা ন্যাক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচতলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙে প্রবেশ করে এবং সকল আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তছনছ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স এবং এমনকী দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বোম ডিস্পোজাল ইউনিট
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গতকাল প্রতিদিনের ন্যায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমবেত হয়। আকষ্মিকভাবে বেলা ২টা থেকে সমবেত নেতাকর্মীদের বিনা উস্কানিতে ক্র্যাকডাউন শুরু করে পুলিশ। তারা নির্বিচারে গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড, ককটেল, লাঠিচার্জ করতে থাকে। যা আপনাদের চোখের সামনেই ঘটেছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এই কাপুরোষোচিত ও লোমহর্ষক ঘটনা স্বাধীন দেশে কল্পনাতীত।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন এবং অসংখ্য নেতা-কর্মী ও পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। যাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা যানি। পুলিশের হামলায় অনেক সাংবাদিক বন্ধুও আহত হন। পুলিশ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেও বাধা দেয় এবং তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ও অশোভন আচরণ করে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিষ্ফোরণের নামে নাটক সাজায় ও মিথ্যাচার করে। আমার সামনেই পুলিশ সেখানে অসংখ্য বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সঙ্গে ডিবি, সোয়াত বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গতকাল সমগ্র ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের সশস্ত্র ও উশৃঙ্খল কর্মীরা পাড়ায়-মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার পরিজনের ওপর হামলা করে। তারা ওয়ারী থানার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মাহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মিল্লাত হোসেনকে বেধড়ক পেটায়। যার ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে সংঘর্ষে ৩ থেকে ৫ মামলার প্রস্তুতি পুলিশের
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সকালেও দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমার অফিসে যেতে চেয়েছিলাম। আপনাদের সামনেই পুলিশ বিজয়নগর মোড়ে আমার গাড়িকে আটকে দেয় এবং আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দলীয় কার্যালয়সহ নয়াপল্টনের পুরো সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পুলিশ দাবি করছে বিএনপি কার্যালয়ে বিষ্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। তারা তা উদ্ধারের তল্লাষি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আইন হচ্ছে- কোন বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এই ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্স ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। উপরন্ত গতকাল আমাকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে বাইরে রেখে দীর্ঘ চার ঘণ্টা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করে, বোমা রেখে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার এ জেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালে প্রিন্স, বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, জহির উদ্দিন স্বপন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়ায় উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
এমই/এমআর