images

জাতীয়

তফসিলের ৭২ ঘণ্টা পরও ঝুলছে প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন

আব্দুল হাকিম

১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

    • কর্মীদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন প্রার্থীরা
    • ইসির নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন মাঠে নাই
    • আচরণবিধি বাস্তবায়ন নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
    • আচরণবিধি ভাঙলে ছাড় নয়—ইসি

সারাদেশে নির্বাচনি আমেজ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট এবং গণভোট একসঙ্গে। সেই লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঘোষণা করা হয় তফসিল। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা ছিল, তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টার অপসারণ করতে হবে।  

তবে সেই সময়সীমা পেরিয়ে ৭২ ঘণ্টা পার হলেও ঢাকা-১৪ ও ঢাকা-১৬ আসনে এখনো ঝুলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার। ফলে ইসির নির্দেশনার প্রতিফলন বাস্তবে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে এই দুই আসনে বিএনপি মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার ও পোস্টারের আধিক্য চোখে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, প্রধান সড়ক, অলিগলি, গলির মোড়, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, বিদ্যুতের খুঁটি, সড়কের পিলার, ভবনের দেয়াল, এমনকি গাছের ডালে এখনো ঝুলছে পোস্টার ও ফেস্টুন। 

1

ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির পোস্টার ও ব্যানার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে। মিরপুর ৬ ও মিরপুর ২ এলাকার প্রধান সড়ক ছাড়াও প্রতিটি গলির মোড়ে তার নাম ও ছবি সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে। মিরপুর-১ নম্বর এলাকার বিভিন্ন গলিতেও তার পোস্টার দেখা গেছে।

একই চিত্র ঢাকা-১৬ আসনেও। এই আসনে বিএনপি মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থী আমিনুল ইসলামের পোস্টার ও ব্যানার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঝুলতে দেখা গেছে। দেয়াল, পিলার, বিদ্যুতের খুঁটি ও খোলা স্থানে থাকা এসব প্রচারসামগ্রী এখনো অপসারণ করা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর নতুন করে পোস্টার না লাগানো হলেও আগের লাগানো পোস্টারগুলো সরানোর ক্ষেত্রে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ঢাকা-১৪ ও ঢাকা-১৬ আসনের বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব এলাকায় দেয়াল লিখন ও পোস্টারের জঞ্জালে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। নির্বাচন এলেই এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে অন্তত নির্বাচনকালীন সময়ে এই ভোগান্তি কমবে বলে তারা আশা করছেন।

2

নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও মাঠপর্যায়ে পোস্টার-ব্যানার পুরোপুরি অপসারণ না হওয়ায় নির্বাচন আচরণবিধি বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে ঢাকা-১৪ ও ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের প্রচারসামগ্রীর আধিক্য থাকায় বিষয়টি আরও বেশি আলোচনায় এসেছে। 

নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর নগরের সড়ক, ফুটপাত, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ, দেয়াল বা কোনো সরকারি স্থাপনায় কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো আইনসিদ্ধ নয়। এসব প্রচারসামগ্রী নগরের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান আইন ও বিধিমালাও লঙ্ঘন করে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগের তুলনায় ব্যানার ও পোস্টারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও পুরোপুরি অপসারণ হয়নি। অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ উদ্যোগে পোস্টার সরাচ্ছেন বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই উদ্যোগ চোখে পড়েনি। প্রার্থী নিজে মাঠে না নেমে শুধু কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ায় কাজের অগ্রগতি ধীরগতির হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

3

বিএনপির দলীয় নেতারা দাবি করেছেন, কর্মীরাই নিজ উদ্যোগে আগে এসব ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এখন নির্বাচন আচরণবিধি মেনে দ্রুত সেগুলো সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় ও এলাকার বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে প্রার্থীরা নিজেরা উপস্থিত থেকে পোস্টার অপসারণের কাজ করতে পারছেন না বলে জানান তারা।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও পোস্টার অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দ্রুত ব্যানার ও পোস্টার সরিয়ে নিতে বললেও মাঠ পর্যায়ে সেই নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায়নি। ঢাকা-১৪ আসনে জামায়াতের ব্যানার-ফেস্টুন তেমন চোখে না পড়লেও ঢাকা-১৬ আসনের মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুল বাতেনের কিছু পোস্টার দেখা গেছে। যদিও সংখ্যায় তা অনেক কম।

নির্বাচন কমিশন জানায়, তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠিও দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন।

4

চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ওই নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচারসামগ্রী ও নির্বাচনি ক্যাম্প থাকলে তা সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য প্রার্থী বা ব্যক্তিদের তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ খরচে ও দায়িত্ত্বে অপসারণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে প্রচারণা সামগ্রীগুলো অপসারণসংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ জানায় ইসি।

নির্দেশনা মোতাবেক ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আগাম প্রচারসামগ্রী অপসারণ করতে বলা হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের। অন্যথায় নির্বাচনি আচরণবিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হলেও অপসারণ হয়নি নির্বাচনি পোস্টার-ব্যানার।

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট পরিপত্র জারি করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। মাঠপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ শুরু করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তায় প্রচারসামগ্রী অপসারণ করা হচ্ছে।

5

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা বা সংশ্লিষ্ট দল নিজ উদ্যোগে এসব ব্যানার–ফেস্টুন অপসারণ না করলে সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেগুলো সরিয়ে ফেলবে। সে ক্ষেত্রে অপসারণ ব্যয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলের কাছ থেকে আদায় করা হবে এবং প্রয়োজন হলে জরিমানা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএনসিসি আরও বলেছে, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে নগর পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পরিচ্ছন্নতা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট জোন অফিসগুলোর মাধ্যমে অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন শনাক্ত করে অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের দুটি টিম কাজ করছে। ঢাকা-১৪ এবং ১৬ আসনের আলাদা আলাদা ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তারা কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে একটু আলাপ করেন। তারা মোটামুটি সেরে ফেলছেন। কালকে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ঘুরে ঘুরে সবগুলো দেখে আসছেন।

এএইচ/এএইচ