মহিউদ্দিন রাব্বানি
০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫১ এএম
শীতের মাস পৌষ শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীত শুরু হলেও রাজধানী ঢাকায় সেই তীব্রতা এখনো দেখা যায়নি। তবে গত দুই দিন ধরে রাজধানীতে হালকা কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ার কিছুটা ছোঁয়া অনুভূত হচ্ছে।
শীতের আগমনী বার্তায় দোকানগুলো সেজেছে গরম কাপড়ে। শপিং মলগুলো যেমন সেজেছে, ঠিক তেমনি পিছিয়ে নেই রাজধানীর ফুটপাতও। গুলিস্তান থেকে মিরপুর, বাড্ডা থেকে যাত্রাবাড়ী- সব এলাকার ফুটপাতজুড়ে সাজানো আছে জ্যাকেট, হুডি, সোয়েটার, কম্বল আর উলের টুপিসহ নানা রঙিন শীতবস্ত্রে।
দাম কম, মান ভালো, ক্রেতা থাকলেও ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতা ও বেচাবিক্রি ভালো হলেও এখনো শীতের ‘আসল ভিড়’ শুরু হয়নি। পুরোপুরি শীত পড়লে কয়েকদিনের মধ্যে বাজার জমজমাট হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতগুলোতে সাজানো আছে জ্যাকেট, হুডি, কম্বল, উলের গ্লাভস, স্কার্ফ, সোয়েটার আর কৃত্রিম ফারের টুপি থেকে শুরু করে নানা পোশাক। দোকানিরা কেউ পণ্য ধরে দেখাচ্ছেন, কেউ দাম বলছেন, আবার কেউ ব্যস্ত দরদাম সামলাতে।
ফুটপাত এখন শুধু নিম্নবিত্তের নয়
ফুটপাতের বাজার বরাবরই নিম্নবিত্ত মানুষের ভরসা ছিল। তবে এখন শহরের বাস্তবতা পাল্টেছে। দামের পাশাপাশি সুবিধা, বৈচিত্র্য ও সময় বাঁচানোর কারণে ফুটপাত হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের ‘ফার্স্ট চয়েস’।
গুলিস্তানে ক্যাজুয়াল জ্যাকেট কিনছিলেন বেসরকারি কোম্পানির কর্মী মেহেদী হাসান। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, দোকানের অর্ধেক দামে এখানে জিনিস পাওয়া যায়। ফ্যাশনও খারাপ না। একই মাল শোরুমে ১৮০০-২০০০, আর এখানে ৮০০-৯০০ টাকা। অফিস ফেরার পথে থেমে কেনার সুবিধাও হয়।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাংকের কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বলেন, ‘এখন ফ্যাশন, বাজেট-সব দিক থেকেই ফুটপাত প্রতিযোগিতা করছে। রাস্তায় রাস্তায় এত শীতের পোশাক সাজানো থাকে যে, না থেমে থাকা যায় না।’
দামেই আকর্ষণ, মানেও মিলছে বিশ্বাস
ফুটপাতের বড় শক্তি হলো সাশ্রয়ী দাম। তবে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শুধু সস্তা নয়, মানও ভালো রাখার চেষ্টা করেন তারা।
প্রায় এক যুগ ধরে শীতবস্ত্র বিক্রি করা বাড্ডার ফুটপাতের ব্যবসায়ী রায়হান হেসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখন ক্রেতারা খুব সচেতন। তারা কাপড় দেখেন, সেলাই দেখেন, চেইন টানে। তাই ভালো মাল না রাখলে বিক্রি হয় না। আমরা পাইকারি থেকে ভালো মাল উঠাই।’
তিনি আরও জানান, শীত পুরোপুরি শুরু না হলেও এখনো প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকার বিক্রি হয়ে যায়। এবার দামদরও তেমন বাড়েনি৷ ক্রেতারা অনেকে দাম জেনে যাচ্ছেন।
রায়হান হোসেন আরও বলেন, ‘যে দিন একটু ঠাণ্ডা বেশি পড়ে, সেদিন ভিড় বেশি হয়।’
মিরপুর ১০ নম্বরে উলের সোয়েটার হাতে নিয়ে দেখছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মারিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘মার্কেটে গেলে তো বাজেট বাড়াতে হয়। এখানে দরদাম করে নিজের মতো বেছে নেওয়া যায়। বরং অনেক সময় ভালো মানের জিনিসই পেয়ে যাই।’
স্টাফ-কোয়ার্টারের ফুটপাতে বাচ্চাদের জন্য পোশাক কিনতে আসা রিকশাচালক নাসির উদ্দিন বলেন- ‘দোকানে গেলে সময়ও লাগে, টাকা লাগেও বেশি। এখানে যা চাই, হাতের কাছে পাই। দিনের ভাড়াটা হাতে নিয়েই বাজার করে ফেলি।’
শীত বাড়লে বিক্রি বাড়ার আশা ব্যবসায়ীদের
ফুটপাতে এখনো মানুষের ভিড় থাকলেও শীত আরও বিক্রি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
২০ বছর ধরে গুলিস্তানে ফুটপাতে ব্যবসা করা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের একেকটা দিন আমাদের জন্য উৎসবের মতো। ডিসেম্বরের শেষ আর জানুয়ারির শুরু-এই দুই সপ্তাহই সবচেয়ে জমে ওঠে ব্যবসা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সব শ্রেণির মানুষ ফুটপাতে কেনাকাটা করতে আসে। শীতের সময় ফুটপাতেই সবচেয়ে বেশি ক্রেতা হয়।’
ফ্যাশনে পরিবর্তন, ফুটপাতেও নতুনত্ব
আগের ফুটপাতের চেয়ে এখনকার ফুটপাত অনেক বেশি সাজানো-গোছানো। মৌসুম অনুযায়ী ডিজাইনের পোশাক, কোরিয়ান স্টাইলের জ্যাকেট, ওভারসাইজ হুডি, উলের টুপি-সবই পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ‘ঠান্ডার চিন্তায় ঘরে থাকলে খাব কী’
যাত্রাবাড়ীর দোকানি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাজার বুঝে মাল আনি। এখন তরুণরা হুডি বেশি চায়, আবার পরিবারগুলো সোয়েটার আর কম্বলের দিকে ঝোঁকে। তাই সব ধরনের মালই রাখি।’
তিনি জানান, ‘এবার পাইকারি বাজারে আগেই প্রচুর পোশাক এসেছে। চাহিদা বাড়বে ধরে সবাই প্রস্তুতি নিয়েছেন।’
এমআর/এমআর