জানুয়ারির শুরুতেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের শীতে কাঁপছে রাজধানীসহ সারাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য শীত নেই বলে আফসোস করা নেটিজেনরাও মজেছেন শীত উদযাপনে। তবে শীতে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন ফুটপাথে বসবাস করা ছিন্নমূল মানুষেরা। শীতল বাতাসে পাতলা কম্বল জড়িয়ে কোনো রকম শীত নিবারণে চেষ্টা করছেন তারা। অনেকের কপালে তাও জুটেনি।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি ঘুরে মানবেতর এ চিত্র দেখা যায়। অনেকেই রাতে না ঘুমিয়ে আগুনের পাশে বসে রাত কাটাচ্ছেন আর ঘুমাচ্ছেন দিনের বেলা।
বিজ্ঞাপন
বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাব সামনে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় সেলিম মিয়া নামে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, টুকটাক কাজ করি, কখনও রাস্তায় আবার কখনও গোলাপ শাহর মাজারের সামনে ঘুমাই। গত কয়েক দিন যাবত অনেক ঠান্ডা। বাতাসে রাতে ঘুমানো যায় না। তাই দিনের বেলা স্টেশনের নিচে ছালা পেতে ঘুমিয়েছি।
ময়লা কম্বল দেখিয়ে তিনি বলেন, এটা একজন দিয়েছে, আরেকটা ময়লার পাশে পেয়েছি। এগুলো দিয়ে কোনো রকম কাটাচ্ছি।
এদিকে পল্টন মোড়েও রোড ডিভাইডারের পাশে বেশ কয়েকজনকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের আপাদমস্তক কম্বল মুড়িয়ে রেখেছেন। যদিও স্থানীয়দের ভাষ্য, এদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত।
বিজ্ঞাপন
মৌচাক-মগবাজারের মাঝামাঝি আউটার সার্কুলার রোডে ভিক্ষা করছেন আছিয়া বেগম। একটা পাতলা কম্বল গায়ে দেওয়া সত্তোরোর্ধ্ব এই নারী বলেন, কারওয়ান বাজার বস্তিতে থাকি। সাথে ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিরা থাকে। আগে কাজ করতে পারতাম, এখন পারি না। তাই আশেপাশের রাস্তায় ভিক্ষা করি। এই কম্বলটা গত বছর পেয়েছিলাম। এবার কেউ দেয়নি।
শীতের প্রকোপ নিয়ে তিনি বলেন, ছোট একটা ঘরে সবাই থাকি। গত বছর ও তার আগে পাওয়া কয়েকটা কম্বল আছে। ওইগুলো আর কাঁথা নিয়ে কোনো রকম ঘুমাই। তবে শীত বেশি হওয়ায় ওইগুলো আর শীত মানে না।
পৌষের মাঝামাঝি অবস্থায় তীব্র শীত, কনকনে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে— কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা বাড়লেও দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি বেড়েই চলেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আজ কিছুটা কমে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। ঢাকায় আজ তাপমাত্রা ছিল ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেটে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে ১৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এমএইচ/জেবি