images

জাতীয়

পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ বেপরোয়া অপরাধীরা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম

গত বছরের জুলাই বিপ্লবের ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ। সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হলেও এখনো বাহিনীটির বড় অংশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। এই সুযোগে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বেশির ভাগ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন। পুলিশ কখনো কখনো দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে চোখের সামনে ঘটছে হত্যা ও খুনোখুনির মতো ঘটনা। বিশেষ করে গত তিন মাসে এমন কিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যার আগে পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেয়নি।

কয়েক মাসের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার বা ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চেয়েছে, কিন্তু তারা কোনো সাহায্য পায়নি। গত তিন মাসে শুধু কোনো অপরাধ না করেও সংঘবদ্ধ লোকজনের রোষানলে পড়ে প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের। আবার মাঝে মাঝে পুলিশ চড়াও হচ্ছে আন্দোলনকারী, সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীদের ওপর। এসব ঘটনাকে কেউ কেউ ‘মব’ বলছেন, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা বা রেষারেষি ও পূর্ব শত্রুতা বলছেন।   

গত ছয় মাসে রাজনৈতিক ঘটনার বাইরে চোর ও ছিনতাইকারী সন্দেহে অনেকের প্রাণ গেছে। এমন কিছু ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতারের খবর খুব একটা আলোচনায় না আসায় অন্য অপরাধীরা বেপরোয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

পুলিশকে ডেকেও সাহায্য পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা!

গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় এক ছিনতাইকারীকে ধরেন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক আরমান ভূঁইয়া। তিনি সেই সময় সংসদ ভবন এভিনিউ সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের হামলায় গুরুতর আহত হন। তার মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়।

আহত সাংবাদিক আরমান বলেন, রাত সোয়া ১২টার দিকে আমি ও আমার এক বন্ধু ছিনতাইকারী সন্দেহে একজনকে আটক করি। এরপর তার পরিচিত আরও তিনজন চলে আসেন। পরে আমরা তেজগাঁও থানার ওসিকে বিষয়টি জানাই এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে দেরি করায় তাদের আরও ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য চলে আসে। পরে তেজগাঁও থানা পুলিশের সামনেই তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাকে জখম করে।

এই সাংবাদিক বলেন, হামলার পর তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা ঘটনাস্থল থেকে জাহাঙ্গীর, শাহিন, রাব্বিসহ কয়েকজনকে আটক করে তেজগাঁও থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে নিয়ে আসেন। পরে চিকিৎসার জন্য পুলিশের একটি টিম আমাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্যদিকে থানা থেকে পুলিশ আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেয়। 

আরও পড়ুন

টার্গেট প্রবাসীরা: আতঙ্কের আরেক নাম বিমানবন্দর সড়ক

থেমে নেই অনলাইন জুয়ার রমরমা কারবার

এমনই আরেকটি ঘটনা ঘটে মতিঝিল এলাকায়। শনিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ডিবিসি রেদওয়ানুল হক ও কালবেলার রিপোর্টার আনাসসহ দুই সাংবাদিক বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় সেখানে কয়েকজন যুবক এসে তাদের সেখান থেকে উঠে যেতে বলে। তারা যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মারধর করা হয়। পরে তারা প্রাণে বাঁচতে দৌড় দিয়ে পাশের ভবনে আশ্রয় নেন। এরপর তাদের একজন পুলিশকে কল করেন। ওসি কল পেয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে পাঠালে ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা আট থেকে দশজন হয়ে যায়। ফলে পুলিশ তাদের না ধরে ফিরে আসে।

সবশেষ রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় এলাকাবাসীর সঙ্গে ছাত্রদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক শিক্ষার্থীকে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দেয় এলাকাবাসী। এছাড়াও দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা হামলার শিকার হওয়ার সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে ফোন করে একাধিকবার সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু পুলিশ এগিয়ে আসেনি। ফলে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে তাদের অভিযোগ।  

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, গত তিন মাসে শতাধিক মানুষ মবের শিকার হয়ে মারা গেছেন। সম্প্রতি একই দিনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এক কিশোরকে টাকা চুরির অভিযোগে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় চোর সন্দেহে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক শ্রমিককে এবং ‍কুমিল্লায় চাঁদাবাজির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এছাড়া গত ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্বজনেরা বলছেন, প্রদীপকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন রূপলাল। তারা দুজন বাড়ি ফিরছিলেন। প্রদীপ নিজের ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের হত্যা করা হয়। একই দিন মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনির পর একজনের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টার ঘটনাও ঘটে।

Police22
অপরাধ বাড়লেও নির্বিকার পুলিশ। ছবি কোলাজ: ঢাকা মেইল

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে গণপিটুনির ঘটনায় ৩৩ জন নিহত এবং ৯৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাস ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। শুধু এই এক মাসেই ৪১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১০ জন নিহত এবং ৪৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। একই সময়ে অন্তত ৩০ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

পুলিশের সামনে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হলেও তাদের নীরবতার নেপথ্যের কারণ হিসেবে জানা গেছে, বর্তমান পুলিশে বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদের বেশির ভাগই দলটির অনুগত ছিল। ৫ আগস্টের পর দেশে পরিবর্তন ঘটলেও তারা পরিবর্তন হয়নি। তাদের অনেকেই এখন প্রশাসনকে কাজে অসহযোগিতা করছে। কোনো নির্দেশ এলেও তারা তা মাঠে বাস্তবায়ন করছে না।

দেশে গুজব ছড়িয়ে মারধরের পর হত্যার ঘটনাও বেড়েছে। গত ছয় মাসে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

ফেব্রুয়ারিতে গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে 'ছেলেধরা' একটি চক্র সক্রিয় হয়েছে। এই গুজবের ভিত্তিতে ঢাকার কেরানীগঞ্জে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে স্থানীয় জনতা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটাতে এই ধরনের গুজব ছড়িয়েছিল।

মার্চে বিচার চেয়ে বিক্ষোভ ও সহিংসতা

মার্চের শেষ দিকে ঢাকার সাভারে একটি ধর্ষণ মামলার আসামি জামিনে মুক্তি পেলে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে এবং একপর্যায়ে অভিযুক্তের বাড়ি ঘেরাও করে হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়। এই ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং অপরাধীর জামিন পাওয়ার কারণে সৃষ্ট হতাশা থেকেই এই ধরনের সহিংসতা ঘটেছে।

এপ্রিলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা

এপ্রিলের শুরুতে বাগেরহাটের একটি গ্রামে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ধর্মীয় অবমাননার গুজবের জের ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। উত্তেজিত জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় নেতারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

‘জুয়াড়ি’ ইকবাল বাহার গ্রেফতারের সময়ও জুয়া খেলছিলেন!

আ.লীগের নতুন ছক, দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা!

মে-তে ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে গণপিটুনি

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে খুলনার একটি বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে একজন অন্যজনকে মারতে শুরু করলে আশপাশের লোকজন যোগ দিয়ে তাকে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে ওই ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে জানা যায়, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ছোটখাটো ব্যক্তিগত বিরোধও কীভাবে গণপিটুনির মতো ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।

জুনের ডাকাতির অভিযোগে গণপিটুনি

জুনের মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরের একটি গ্রামে রাত ৩টার দিকে একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া করে একজনকে আটক করে। উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ এসে জানতে পারে, নিহত ব্যক্তি আসলে একজন স্থানীয় যুবক এবং তিনি ডাকাতির সঙ্গে জড়িত নন। গণপিটুনির কারণে একজন নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি আইনের প্রতি আস্থাহীনতা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

জুলাইয়ে পারিবারিক কলহ ও গণপিটুনি

জুলাইয়ের শেষ দিকে টাঙ্গাইলের একটি গ্রামে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা তার শ্বশুরবাড়িতে হামলা চালায়। তাদের সঙ্গে আরও কিছু স্থানীয় লোক যোগ দেয় এবং ওই নারীকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আহত নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। এই ঘটনাটি পারিবারিক সহিংসতার মধ্যেও গণপিটুনির প্রবণতার বিস্তার প্রমাণ করে।

Police33
জুলাই বিপ্লবের পর ব্যাপক রোষানলে পড়ে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ সদর দফতর যা বলছে

পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের এআইজি এএইচ এম সাহাদাত হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যেকোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। থানা ও ফাঁড়ি পর্যায়ে টহল বাড়ানো হয়েছে। আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও আইনবিরোধী ঘটনার প্রতিরোধে পুলিশ সদর দফতর থেকে মাঠ পর্যায়ের সকল ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

কী বলছেন অপরাধ বিজ্ঞানী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বর্তমানে মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার নামে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তার নেপথ্যে অতীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এটি একটি অন্যতম কারণ। আরেকটি হলো-বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে ঘাটতি রয়েছে এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির  স্বার্থান্বেষী মহল বা চক্র তারা নানাভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হত্যার পর তার সম্পত্তি দখলের জন্য এই কাজগুলো করছে।’

আরও পড়ুন

পল্লবীতে ভোল পাল্টে ফের সক্রিয় অপরাধী চক্র

মাদক অধিদফতরে বহাল ‘আওয়ামী চক্র’, পদোন্নতি পেতে মরিয়া

তিনি মনে করেন, ‘যখন সমাজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে বা আইনি ব্যবস্থা নিতে দেরি হয় তখনই যারা স্বার্থান্বেষী মহল বা চক্র এই সুযোগটিকে কাজে লাগায়। এখন যে পরিকল্পিত মব তৈরি করে মানুষকে হত্যা বা মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে, এটির নেপথ্যে মূলত দুটি কারণই দায়ী। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু রাজনৈতিক ঘটনা। এই রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর কারণে যা ঘটছে তা অতীতেও ঘটেছে। কোনো দেশে যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তখন কর্মীদের মনোভাব থাকে তিনি যেহেতু অতীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাই তিনি এখন আগের দলের লোকজনের ক্ষতি করে নিজের ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।’

বর্তমান অবস্থা থেকে কীভাবে উত্তরণ করা সম্ভব সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশ যে প্রেক্ষাপট বা পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, আইনের শাসনের মাধ্যমে সব ধরনের ক্ষোভ কিংবা ক্ষতিগ্রস্ততার বিচার হতে হবে। কেননা মানুষ যদি নিজের হাতে আইন তুলে নেয় তখন সমাজের মধ্যে নানা ধরনের অস্থিরতা, সংঘাত ও সহিংসতা প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এতে সমাজের যে শিষ্টাচার বা নিয়ম-নীতি, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যারা আজ বা অতীতে মব তৈরি করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, ইন্ধন দিয়েছেন বা মবের মাধ্যমে সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা ব্যক্তি এদের মুখোশ উম্মোচন করা বা আইনের আওতায় আনলেই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে। অন্যথায় একটি পক্ষ এটিকে বৈধ করে তোলার চেষ্টা করবে। যারা সামাজিক মাধ্যমে এসব মবকে বৈধতা দেওয়ার কাজ করছেন তারা মূলত এই অস্থিতিশীল প্রক্রিয়াকে দীর্ঘ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।’

এমআইকে/জেবি