মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
১৩ মে ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম
ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি। মূল সড়কে পেলেই গুঁড়িয়ে দিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে সেগুলো। কান্নাকাটি করেও ছাড় পাচ্ছেন না ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ থেকে আসাদগেট পর্যন্ত এলাকায় ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা চলাচল বন্ধে পরিচালিত অভিযান চলাকালে এমন কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে।
তেমনই একটি দৃশ্যে ব্যাটারি চালিত এক রিকশাচালককে অনুনয় বিনয় করে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই, ও ভাই, ভাই, মাইরালান, তাও রিকশা লইয়েন না। আল্লাহ গো, আল্লাহ আমি খামু কী? ভাই আমরা রিকশাটা ছেড়ে দেন। আমি মেইন রোডে আহি না। দয়া করে আমার রিকশা নিয়েন না। রিকশা লইয়া গেলে করমু কী? বাড়িতে আমার চারজন মানুষ। ভাত না খাইয়া মইরা যামু।’
আরও পড়ুন: সংকটেও বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে ব্যাটারি রিকশা
এভাবে বলতে বলতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন ওই রিকশা চালক। তিনি বলেন, ‘মাত্র ২ মাস হয়েছে নতুন রিকশা নিয়েছি। এটা নিয়ে গেলে বউ-বাচ্চাদের খাওয়াবো কী? আমাদের পেটে এভাবে লাথি মারবেন না। নতুন রিকশা বা কাজ দিয়ে এটা নিয়ে নেন। কিন্তু এভাবে আমাদের ওপর জুলুম করবেন না। রিকশা না থাকলে আমরা মরে যাবো।’
সরেজমিনে দেখা য়ায়, মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডি-২৭ মোড় থেকে আসাদগেট পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এসময় প্রায় শতাধিক রিকশা জব্দ করে ডাম্পিং করা হয়।
আরও পড়ুন: ব্যাটারি রিকশার চালকরা হাত তুলছেন অহরহ, অসহায় এলিটরাও
অভিযানে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা এই ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শহরের নারী ও শিশুরা। এগুলো কোনো নীতিমালা বা যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। প্রায়ই দেখা যায় পথচারীদের ওপর উঠে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ও সড়কে গণপরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। বুয়েটের সহায়তায় এরইমধ্যে ব্যাটারিচালিত নিরাপদ রিকশার নকশা করে কয়েকটি কোম্পানিকে প্রস্তুতের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই মাসের মধ্যে ডিএনসিসি রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। প্রশিক্ষণ শেষে উত্তীর্ণরাই বৈধ লাইসেন্স পাবে এবং অনুমোদিত কোম্পানির তৈরি রিকশা শহরের নির্দিষ্ট এলাকায় চালাতে পারবে। এক এলাকার বৈধ রিকশা অন্য এলাকায় যেতে পারবে না। যাত্রী ভোগান্তি কমাতে ভাড়াও নির্ধারিত থাকবে।’
এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের দাবি, তাদের জন্য একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এটি নিষিদ্ধ করতে হবে। রিকশার উপার্জন দিয়ে তাদের সংসার চলে। ফলে এমন হুট করে সিদ্ধান্ত দিলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। নতুন যে রিকশা রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পাবে, সেটা দিয়ে বর্তমান রিকশা পরিবর্তন করে নিলে ভালো হয়।
নাসির মিয়া নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘বললেই হবে! আমরা রিকশা না চালালে খাবো কী? দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। আমাদের নতুন কাজ দিলে এটা বাদ দিতে পারবো।’
সাইদুল ইসলাম নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা অসহায়। কষ্টের টাকা দিয়ে রিকশা কিনেছি। এভাবে আমাদের রিকশা ভেঙে দিলে আমরা মরে যাবো। আমাদের জন্য বিকল্প কোনো কাজ বা গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।’
আরও পড়ুন: ১৫ লাখ আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুৎ যাচ্ছে রাজধানীর অটোরিকশায়
সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রাজধানীতে গত কয়েক বছরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। সাধারণ মানুষ অল্প দূরত্বের রাস্তায় চলাচলে সবচেয়ে বেশি এই রিকশা ব্যবহার করেন। তবে এটি অনেক বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। অল্প সময় ও টাকায় বেশি পথ চলার জন্য রাজধানীবাসী প্রতিনিয়ত এই বাহনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এতে সড়কে বাড়ছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ও ভোগান্তি।
তাই এই রিকশা চলাচলের নিয়মনীতি তৈরির দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছিল ঢাকাবাসী। তবে মঙ্গলবার রিকশা উচ্ছেদ অভিযানের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: সরকার বদলের পর ব্যাটারিচালিত রিকশায় ‘মোটা অংকের বিনিয়োগ’
আসাদ আলম নামে একজন লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই অটোরিকশামুক্ত সড়ক আমরা চাই, কিন্তু মূল সড়কে এটি চলাচল যে নিষিদ্ধ, তার সঠিক ঘোষণা বা জোরালো নিষেধাজ্ঞা প্রচার করা জরুরি ছিল অভিযান চালানোর আগে। এক-দুইটা সড়কে অভিযান চালিয়ে কোনো কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না। কারও কোনো আর্থিক ক্ষতি বা জুলুম হোক, সেটাও কাম্য নয়।’
আরিফুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘মহাসড়কে অটো ভয়াবহ রিস্ক ডেকে আনে। আমি হাইওয়েতে ড্রাইভ করি- আমি বুঝি । এদের বারবার নিষেধ করে কাজ হয়নি। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ সড়কের জন্য সরকারের পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন করি।’
সাকিলা বেগম নামে একজন লিখেছেন, ‘লাস্ট ওরার্নিং দিয়ে রিকশাটা ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল। বেচারা গরিব মানুষ, এটাই হয়তো তার একমাত্র উপার্জনের পথ ছিল।’
এএসএল/এএইচ