দিনের আলোতে পাড়া-মহল্লার গলিতেই চলাচল করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই এসব অটোরিকশা চলে আসে মূল সড়কে। চিত্রটা রাজধানী ঢাকার। প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহরে ঠিক কি পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা চলাচল করছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই সরকারের কোনো দপ্তরে। অনেকের মতে, রাজধানীতে অবৈধ এই পরিবহনের আনুমানিক সংখ্যা ৮ থেকে ১০ লাখ। সঙ্গে রয়েছে আরও দেড় থেকে দুই লাখ ইজিবাইক। এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। বিদ্যুৎচালিত এই পরিবহনের ব্যাটারি চার্জ করতে যে পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন হয়, তা এসি ব্যবহার করেন না এমন প্রায় ১৫ লাখ আবাসিক গ্রাহকের চাহিদা পূরণ হতে পারে।
কয়েক বছর আগেও সম্পূর্ণরূপে অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হতো৷ তবে বিদ্যুৎ বিপণন সংস্থার তদারকিতে তা অনেকাংশে কমেছে। এখন মিটার ব্যবহার করে চার্জ দেওয়া হয় ব্যাটারিচালিত রিকশায়।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) আদাবর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ ঢাকা মেইলকে জানান, ব্যাটারির রিকশা চার্জ দেওয়ার জন্য মিটার দেওয়া হয়েছে৷ এসব চার্জিং স্টেশনকে তারা বাণিজ্যিক গ্রাহক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন।
এই প্রকৌশলী বলেন, অনেকেই এখনও অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করতে চায়। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। গতকালও একটা গ্যারেজে পেয়েছি। আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের ব্যাটারি নিয়ে এসেছি।
ডিপিডিসি এই কর্মকর্তার ভাষ্য মতে, আদাবর এলাকায় মিটার ব্যবহারকারী রিকশা চার্জের গ্যারেজ আছে অন্তত ৩০টি।
বিজ্ঞাপন
আদাবর এলাকার চাইতে বেশি রিকশার গ্যারেজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মোহাম্মদপুরের তুরাগ হাউজিং, নবীনগর, ঢাকা উদ্যান, সাত সমজিদ হাউজিং ও চাঁদ উদ্যান এলাকায়।
বসিলা, লাউতলা, ৪০ ফিট এলাকার গলিতে গলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ নজরে আসে।
হাজারীবাগের বউবাজার এলাকা, রায়েরবাজার, কামরাঙ্গীরচরের পুরোটাই ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজের দখলে। সূত্র মতে, পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি, বেঁড়িবাধ এলাকায় দাপিয়ে বেড়ানো বেশিরভাগ রিকশার ঠিকানাই কামরাঙ্গীরচর।
বাড্ডা, মুগদা, মান্ডা, রামপুরা, বনশ্রী এলাকায় এই সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। খিলক্ষেত-ইছাপুরা এলাকায় চলাচল করছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা কয়েক হাজার।
উত্তরার আজমপুর, দিয়াবাড়ি, ধউর, তুরাগ এলাকায় এ ধরনের রিকশার আধিক্য দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান সংখ্যা দশ হাজারের কম নয় বলে জানান স্থানীয় চালকরা।
মিরপুর মাজার রোড, কোনাবাড়ি, বেড়িবাঁধ, মিরপুর-১১, ১২, ১৪ নম্বর, রূপনগর, সেকশন-২, ৭ এলাকায় রয়েছে আরও ১২ থেকে ১৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা।
উত্তরখান ও দক্ষিণখান, ময়নারটেক, তেরমুখ ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত চলাচলের মাধ্যম ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এখানে এ ধরনের রিকশার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। আর ইজিবাইক ১০ হাজারের বেশি বলে জানা গেছে।
প্রকৃতপক্ষে রাজধানীতে কতগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক রয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই কারও কাছেই।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হকের ভাষ্য মতে, রাজধানীতে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় আট লাখ। সারাদেশে এই সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি বলে ধারণা করেন তিনি।
রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকচালক সংগ্রাম পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। রয়েছে দুই লক্ষাধিক ইজিবাইক।
ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও গ্যারেজ মালিকরা জানান, প্রতিটি ইজিবাইক (৬০ ওয়াটের পাঁচ ব্যাটারি) ছয় ঘণ্টা চার্জ দিতে ৮ থেকে ১০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। পুরনো ব্যাটারির ক্ষেত্রে আরও বেশি বিদ্যুৎ লাগে। অর্থাৎ ইজিবাইকে যেহেতু ৫টি ব্যাটারি থাকে, তাই প্রতিটি নতুন ব্যাটারি প্রতিদিন পূর্ণ চার্জ দেওয়ার জন্য দেড় থেকে দুই ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন।
অন্যদিকে প্রতিটি অটোরিকশায় ব্যাটারি থাকে ৩ থেকে ৪টি। সে হিসেবে প্রতিটি অটোরিকশার পেছনে দিনে ৬ থেকে ৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
রাজধানীতে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ৮ লাখ ও ইজিবাইকের সংখ্যা ২ লাখ ধরলে প্রতিদিন অন্তত ৮৪ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয় এই দুই অবৈধ পরিবহনে।
রাজধানীতে বসবাসকারী তিন থেকে চার সদস্যের পরিবারে যদি এসি ব্যবহার না হয়, তাহলে তাদের প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ খরচ হয় ৫ থেকে ৬ ইউনিট। সে হিসেবে ব্যাটারিচালিত দুই পরিবহনের পেছনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা দিয়ে ১৪ থেকে ১৫ লাখ আবাসিক গ্রাহক চলতে পারবেন।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, অবৈধ ও অবৈজ্ঞানিক এই পরিবহন রাজধানীতে থাকাই উচিত নয়। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব ঢাকা মেইলকে বলেন, ব্রেক করলে এই রিকশা থামে না। ব্রেক করলে যে ঝাঁকুনি তৈরি করবে তাতে যাত্রী পড়তে বাধ্য। এর ফলশ্রুতিতে প্রচুর দুর্ঘটনা হচ্ছে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ট্রাফিক পুলিশের একাংশ অটোরিকশা চালকদের থেকে টাকা নেয়। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ যদি পয়সা না নিতো, তাহলে ট্রাফিক পুলিশ শুনলেই দৌড়ে পালিয়ে যেতো। এখন তো তার (রিকশাচালকদের) অপরাধবোধ নাই।
কারই