images

জাতীয়

বনশ্রীর সেই গৃহকর্মীর ভবন থেকে পড়ার প্রমাণ মিলেছে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় আসমা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যুর ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তার এখনো কূলকিনারা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ভবনটি থেকে আসমার পড়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা মুশকিল। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে পাওয়া সিসি ফুটেজ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আসমার ভবন থেকে পড়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছি।

ওসি বলেন, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে অন্য মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন

গৃহকর্মী আসমার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন 

এ ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসমা ভবন থেকে পড়ে গেছেন, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ওঠে এসেছে। পাশের একটি ভবনে লাগানো সিসি ক্যামেরায় দৃশ্যটি ধরা পড়ে। তবে তাকে ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নাকি তিনি নিজেই লাফ দিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া তাকে হত্যা করা হলে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেটাও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ওঠে আসবে।

ওই ঘটনার ফুটেজ নিয়ে যায় পিবিআই। তদন্ত সংস্থাটির একটি সূত্র জানিয়েছে, তারাও এখনো এটি যে হত্যা তেমন কোনো প্রমাণাদি পায়নি। তবে ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

Asma3

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটি হত্যা না আত্মহত্যা আমরা এখনো কোনো কিছু বলতে চাই না। এ নিয়ে কাজ চলছে। আমরা মিরপুর বনশ্রী দুই এলাকাতেই খোঁজখবর নিয়েছি। এখনো এটি হত্যা এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাবে না। প্রতিবেদনটা এলেই জানা যাবে গৃহকর্মী আসমার মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল।’

জানা গেছে, ঘটনার দিন রামপুরা থানা পুলিশের সদস্যরা সেখানে গেলে উপস্থিত এলাকার লোকজন বাধা দেন। যার বেশিরভাগই পাশের একটি বস্তি থেকে এসেছিল। তারা পুলিশ সদস্যদের প্রায় তিন ঘণ্টা ভবনটির গ্যারেজে থাকা একটি ঘরে আটকে রাখে। এ সময় রামপুরা থানার এক পুলিশ অফিসারের ব্যবহৃত সরকারি ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সেই ফোনের হদিস এখনো মেলেনি বলে জানিয়েছে রামপুরা থানার একাধিক সূত্র।

আরও পড়ুন

ঢিল ছুড়ে বস্তিবাসীকে না জাগালে ঘটত বড় ট্রাজেডি! 

এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার দিন পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রামপুরা থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

রামপুরা থানার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বনশ্রীর পাশে থাকা একটি বস্তির লোকজন জড়িত। যাদের অনেকের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তারা সেদিনের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে তাদের খুঁজছে পুলিশ। এ বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Asma2

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, রামপুরা থানার তদন্ত কর্মকর্তার সেই ফোনটিতে বিভিন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট তথ্য ছাড়াও থানার অপরাধী এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। সেইসব তথ্য এখনো পুরোপুরি উদ্ধার করা যায়নি। এতে ব্যাহত হচ্ছে নানা কাজ। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টি স্বীকার করছেন না।

আরও পড়ুন

নারী ব্যাংকারের মৃত্যু ঘিরে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ 

গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে বনশ্রী এলাকার ডি ব্লকের চার নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসার সামনে আসমা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহকর্মীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে সেখানে পুলিশ গেলে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রিজার্ভ পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। ততক্ষণে বাসার নিচে থাকা গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। আগুনে গ্যারেজের নিচে থাকা তিনটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। এছাড়া বাসাটির দ্বিতীয় তলায় থাকা এক নারী ও শিশু আহত হন। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে পুলিশের। পরিস্থিতি শান্ত করতে টিয়ারসেল ও শর্ট রাউন্ডের গুলি পর্যন্ত ছুঁড়তে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ ঘটনায় বাদী হয়ে নিহতের ছেলে আজিজুল একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও বাসাটিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এই মামলা দুটির একটি বাদী পুলিশ আর অপরটির বাদী বাসার মালিকের গাড়ি চালক। মামলা দুটিতে হাজারের ওপর মানুষকে আসামি করা হয়েছে।

এমআইকে/জেবি