বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

গৃহকর্মী আসমার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

গৃহকর্মী আসমার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন

রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ডি ব্লকের চার নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসার সামনে থেকে আসমা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আসমা বাসাটির ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন নাকি তাকে হত্যার পর ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়ে মোটাদাগে প্রশ্ন ওঠেছে।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ডি ব্লকের চার নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসা ছাদ থেকে গেটের সামনে পড়ে যান আসমা। গুরুতর আহত আসমা তখনই মারা যান।


বিজ্ঞাপন


বাসাটির মালিক দেলোয়ার হোসেন একজন সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। তার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তার মধ্যে তুবা নামের এক মেয়ের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন আসমা। মালিক দেলোয়ারের দাবি, আসমা মানসিক সমস্যা ভুগছিলেন। তবে বিষয়টির ব্যাপারে এখনো সত্যতা পায়নি পুলিশ।

আরও পড়ুন

বনশ্রীতে গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন মামলা 


বিজ্ঞাপন


সেই বাসার পাশে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে ঢাকা মেইলের কাছে। সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঠিক সকাল ৭টা ২৬ মিনিটে হোসাইন মনজিল নামের পাঁচতলার ছাদ থেকে পড়ে যান আসমা। ওই সময় বাসার সামনের পথ ধরে লোকজন হাঁটছিলেন। কিন্তু আসমার হঠাৎ পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অনেকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে যান। এসময় আসমার পড়ে থাকা দেখে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা দুই যাত্রীকে নিয়ে এসে সেখানে থেমে যায়। এরপর কয়েকজন আসমার কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেন তিনি বেঁচে আছেন কি না। পরে সেখানে আরও দুটি রিকশা ও একটি মোটরসাইকেল আসে। সেই রিকশাগুলোর যাত্রীরাও রিকশা থামিয়ে আসমাকে দেখতে থাকেন। এরপর কিছু সময় পরে সেখানে হাজির হয় শত শত মানুষ। আসমা ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

02

এ ঘটনায় রোববার দিনভর তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায় বনশ্রী এলাকায়। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বনশ্রী এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সেখানে গিয়ে অনেকটা নিরুপায় হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে রিজার্ভ ফোর্স নিয়ে আসে। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। ফলে এলাকাবাসী ও উত্তেজিত জনতার সাথে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা রামপুরা থানার ওসিসহ পাঁচজনের ওপর হামলা চালায় এবং তারা আহত হন। তাদের তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

বাসাটির ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন, তারা এর আগে কখনোই আসমাকে ওই বাসায় দেখেননি। তবে তারা শুনেছেন বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে তুবার বাসায় কাজ করতেন আসমা। 

বাসাটির পঞ্চম তলার ভাড়াটিয়া সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা মেইলকে জানান, আসমা ওই বাসায় শুক্রবার আসেন। গত তিন দিন থেকে সেখানেই ছিলেন। শনিবার রাতে আসমার গৃহকর্ত্রী তুবার সাথে গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে তারা ঘুরে আসেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত গল্পগুজব করে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে মালিকের মেয়ের মারফতে তিনি জেনেছেন, আসমা ও তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে বলে সবসময় ভয়ে থাকতেন আসমা।

আরও পড়ুন

বনশ্রীতে গৃহকর্মীর মৃত্যু ঘিরে দিনভর তুলকালাম 

গত দুই মাস আগে বাড়ির মালিক দেলোয়ারের বাসার এক বুয়া আসমাকে কিশোরগঞ্জ থেকে এনে তুবার বাসায় রাখেন। তুবা তার প্লানিং কমিশনের পরিচালক পদে চাকরি করা স্বামী মইনুলের সাথে মিরপুরে থাকেন। তারা বনশ্রীতে বেড়াতে এসেছিলেন। সাথে আসমাকে নিয়ে আসেন বলেও জানান তিনি।

বাড়িটিতে গত পাঁচ বছর ধরে ভাড়া থাকা ভাড়াটিয়া সাবিনা বলেন, সকালে ওঠে আমি নিচে নামছিলাম। দেখি গেটে অনেক মানুষের ভিড়। তারা বলছিল- দেখেন তো পড়ে থাকা এই মহিলাকে চিনেন কি না। তখন আমি দেখে চিনতে পারিনি। কারণ আসমার লাশটা ওড়না দিয়ে ঢাকা ছিল। বেশি লোকজন ছিল না। তবে ওই সময় ১৫-২০ জন বুয়া ছিল। পরে দারোয়ান কাসেম সাড়ে আটটায় বাসার মালিককে খবরটা দেন। মালিকের মেয়ে তুবা তখন ঘুমাচ্ছিলেন।

বাসাটির দারোয়ান কাসেম বলেন, আসমা সকালে কাপড় ধোয়ার জন্য ছাদে আসেন। দারোয়ানের সাথে রোববার দুপুর আড়াইটায় যখন কথা হচ্ছিল তখন ছাদে প্রবেশমুখের দরজার পাশে একটি গামলায় কিছু কাপড় রাখা ছিল। সেটি দেখিয়ে তিনিসহ আরেকজন আসমার কথা বলছিলেন। তবে সকাল সাড়ে সাতটায় কেন আসমা ছাদে কাপড় ধুইতে গিয়েছিলেন তার জবাব তারা দিতে পারেননি।

03

এসময় এই প্রতিবেদক সেই ছাদটি ঘুরে দেখার চেষ্টা করেন। ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগনো হয়েছে। যে অংশের দিকে আসমা পড়ে গেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে সেই অংশে পাতলা লোহার পাতের বেড়া লাগানো ছিল। 

ভবনটির পাশের বাসার দারোয়ান নজরুল জানান, তিনি সকালে আসমাকে গেটে পড়ে থাকতে দেখেছেন। তবে তার আগে কীভাবে আসমা ছাদ থেকে পড়লেন তা দেখেননি।

এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এ ঘটনাটিকে এখনো হত্যা বা আত্মহত্যা কিছুই বলছি না। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে আসমাকে হত্যা করা হয়েছিল কি না। ভবনটি থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আসমা ওপর থেকে পড়ে গেল। কিন্তু তার আগে কি হয়েছে সেটি তদন্তের বিষয়। আমরা এখনই এ নিয়ে মন্তব্য না করি।

আরও পড়ুন

গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে বনশ্রীতে বাড়িতে আগুন 

রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বাসাটির মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা কেউই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। এমনকি এ বিষয়ে কথাও বলেনি। ফলে দিনভর মানুষের যে প্রশ্ন তার জবাবও আসেনি অভিযোগের তির ওঠা বাড়ির মালিক ও তার মেয়ের কাছ থেকে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, এটি আত্মহত্যা। যদিও এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পায়নি পুলিশ প্রশাসন।

এদিকে আসমার ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ১১নং কৈলাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কায়সার এ হাবিব গণমধ্যমকে জানিয়েছেন, নিহত আসমা সরকারি ভিজিডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়েছেন। এলাকায় তার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির মামলা রয়েছে।

এমআইকে/জেবি

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর