বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ঢিল ছুড়ে বস্তিবাসীকে না জাগালে ঘটত বড় ট্রাজেডি!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢিল ছুড়ে বস্তিবাসীকে না জাগালে ঘটত বড় ট্রাজেডি!

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পূর্বদিকে থাকা মোল্লাবাড়ী বস্তিতে কয়েকশ মানুষের বাস। শনিবার রাতে প্রতিদিনের মতোই বস্তিটিতে বেশিরভাগ লোক ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুন লেগে বস্তিটির অর্ধেক পুড়ে গেলেও তারা টের পাননি। একদিকে গভীর রাত অন্যদিকে প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা ও গিঞ্জি ঘরের কারণে আগুন লাগার বিষয়টি বুঝতে পারেননি তারা।

আগুনের লেলিহান শিখা দেখেন কারওয়ানবাজার রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকর্মীরা। তারা তখন ‘আগুন’ ‘আগুন’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু এতেও বস্তির লোকজনের ঘুম ভাঙছিল না। নিরূপায় তারা তাদের জাগাতে টিনের চালে বৃষ্টির মতো পাথর ও ইটের ঢুকরো ছুড়ে মারে। এতে কিছু বস্তিবাসী জেগে ওঠেন। পরে সেই কর্মীরা বস্তিতে ঢুকে ঘরের দরজায় গিয়ে লাথি দিয়ে বস্তিবাসীকে জাগানোর চেষ্টা করেন। এতে রক্ষা পায় শত শত মানুষের প্রাণ।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে একটার একটু পর বস্তিটিতে আগুন লাগে। এতে পড়ে গেছে দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন মা ও ছেলে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে পোড়া বস্তির ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে রাতের ঘটনা বলছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা শাহীন আলম। তিনি কারওয়ানবাজারে মাছ কাটেন।

শাহীন বলেন, আমরা তখন সবাই ঘুমে। কেউ জানতে বুঝতে পারি নাই আগুন লাগছে। কিন্তু মেট্রোরেলের (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকর্মী) লোকজন না থাকলে আমরা লাশ হয়ে যেতাম। শত শত মানুষ এখনো আজ লাশ হয়ে থাকতো।’


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

ছেলেকে বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দেন শারমিন 

তিনি জানান, তার মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। এরপর তিনি বাবা ও বোনকে ডেকে তোলেন। এর আগে তাদের ঘরে ওপর থেকে টিনের চালে কে বা কারা ঢিল ছুঁড়ে। সেই শব্দে প্রথম তার মা জেগে ওঠেন। ওঠেই শুনতে পান আগুন আগুন। তবে পরে তারা জানতে পারেন তাদের টিনের চালে ঢিল ছোঁড়া সেই ব্যক্তিরা হলেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কর্মী।

বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা রাহেলা বেগমের ঘরটিও পুড়েছে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ওপর থাইক্যা ঢিল ছুড়ছে। এই জন্যি অনেকে জাইগা গেছিল। তারা পাত্থর মাইরা মাইরা আমাগো জাগাইছে। ওপর থাইকা সমানে পানি ছিটাইছে, মাইনষেরে ঘর থাইক্যা বাইর করছে।’

Ghor4

তার স্বামী দুলাল খা বলেন, ‘ওপর থাইক্যা ইট মারছে। সেই ইটের বারি খাইয়া আওয়াজ হইছে। সেই আওয়াজে আমরা উইঠা গেছিগা।’

তার মতে, সেই লোকজন যদি তাদের টিনের চালে ঢিল ছুঁড়ে না জাগাতো তবে তারা আজ ঘরেই পুড়ে মারা যেতেন।

আরও পড়ুন

মোল্লাবাড়ি বস্তিতে আগুনের ঘটনায় ৫ সদস্যের কমিটি 

নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমরা তো আগুনের খবরটাই পাইতাম না। মেট্রোরেলের ব্যাটারা ওপরে ব্রিজের কাজ করতাছিল, তারা আমাগো খবর দিছে। তারা সবার ঘরে ঘরে লাইথ্যা লাইথ্যা অনেক মাইনসেরে ঘুম থাইক্যা ডাইকা তুলছে। যারা ওঠে নাই তাগোরে ঘাড় ধইরা ধইরা জোর কইরা টাইনা তুলছে। হেরায় আগে আগুন দ্যাখছে। হেরা অনেক কষ্ট করছে, মিচা কতা কমু না। হেরা ঘর থাইক্যা মাইনসেরে বের কইরছে, যারা উঠবার চায় নাই তাগোরে গালাগালি কইরা তুলছে। এক ব্যাটারে তো এক হাত আগুনে অর্ধেক পুইরা গেছে।’

তাদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কর্মীরা যখন ডেকে ডেকে তোলেন তখন ঘড়ির কাটায় ২টা ১০ মিনিট বলে জানান নাসিমা। এরপর প্রায় ১৩ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে এবং তারা আগুন নেভানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তার মতে, তিনি ওঠার প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় পুরো বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

জাহিদুল নামে আরেক বলেন, ‘আমরা তো উঠবারই পারতাম না। হেরায় আমাগো জাইগা তুলছে।’

মোল্লারবাড়ী পোড়া বস্তি থেকে বিকেলে ফিরে আসার সময় রেললাইনের ধারের পথে দেখা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণাধীন কারওয়ানবাজার অংশের একটি ইউনিটের প্রধান সাদ্দামের সাথে।  তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের এখনো দুটি শিফটে কাজ হয়। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা আবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যায় ছয়টা। আগুন লাগার সময় সন্ধ্যার শিফটে যারা কাজ করেন তারাই ছিল। তারা না থাকলে এই আগুনে আরও মানুষ পুড়ে মরে যেত। তারা ওপর থেকে ঢিল ছুঁড়েছে, প্রতিটি ঘরের দরজায় গিয়ে ডেকেছে এবং ঘর থেকে লোকজনকে বের করে এনেছে যা আমরা ডিউটিতে এসে শুনতে পারছি।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর