বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নারী ব্যাংকারের মৃত্যু ঘিরে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

নারী ব্যাংকারের মৃত্যু ঘিরে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ
স্বামী-সন্তানসহ নিহত দীপু সানা ওরফে দীপান্বিতা এবং দুর্ঘটনাস্থল । ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজার এলাকায় মাথায় কংক্রিটের ব্লক পড়ে নারী ব্যাংকার দীপু সানা ওরফে দীপান্বিতার (৩৭) মৃত্যু রহস্য এখনো উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। দীপান্বিতার মাথায় যে ব্লকটি পড়েছিল সেটিকে ঘিরেই চলছে পুলিশের তদন্ত। এ ঘটনায় ভবনটির সংশ্লিষ্ট অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।

এ ঘটনায় পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 


বিজ্ঞাপন


দীপু সানা ওরফে দীপান্বিতা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ছিলেন। তিনি সবশেষ সহ-ব্যবস্থাপক হিসেবে সদরঘাট শাখার জড় সামগ্রী ও মনিহারি শাখায় কর্মরত ছিলেন। তার তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে। দীপান্বিতার গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে পড়েছেন। ছয় বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগ দেন।

আরও পড়ুন

গৃহকর্মী আসমার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন 

পুলিশ ও স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন দ্বিপান্বিতা। মৌচাক এলাকায় তিনি গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত ধরে বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে মৌচাক থেকে মগবাজার যাওয়ার পথে রাস্তার দক্ষিণ পাশে থাকা সুলতান টাওয়ারের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেটির ওপর থেকে একটি কংক্রিটের ব্লক তার মাথায় পড়ে। ওই সময় ঘটনাস্থলেই মারা যান দিপান্বিতা। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

দীপান্বিতার মাথায় পড়া বস্তুটি কোনো সাধারণ ইট নয়, সেটি রাস্তার পাশে থাকা কংক্রিটের ব্লক। যা ফুটপাতে বসিয়ে চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়।


বিজ্ঞাপন


Women2
দুর্ঘটনাস্থল ও কংক্রিটের ব্লক। ছবি: সংগৃহীত

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ভবনটির ওপর থেকে কে বা কারা সেই কংক্রিটের ব্লকটি ফেলল? কারণ ভবনটির আশপাশে তেমন কোনো নির্মাণাধীন ভবনও নেই। ফলে রহস্য জন্মেছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার। কিন্তু সেদিন ওই পার্টি সেন্টারেও কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। তাহলে সেই কংক্রিটের ব্লকটি কারা ওপর থেকে ফেলল- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাঠে কাজ করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

রমনা মডেল থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এ ঘটনায় আশপাশের ভবনগুলো থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো যাচাই চলছে। সেই ইট বা ফুটপাতের ব্লকটি কোথায় থেকে পড়ল, কে ফেলল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আমরা ওই ভবনটির বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এটি তদন্তের একটি অংশ। এখনো এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতারের মতো তথ্য পাইনি।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির নিচ তলায় পার্কিং, দ্বিতীয় তলায় ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টার, তৃতীয় তলায় কমিউটিনিটি সেন্টার ও চতুর্থ তলা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ভবনটির ছাদ অত্যন্ত পরিষ্কার। যদিও ভবন ম্যানেজারের দাবি, তিনি ও মালিক ছাড়া ছাদে তেমন কেউই যান না।

আরও পড়ুন

বেঁচে আছে অসুস্থ ছেলে, মাকে মিথ্যা আশ্বাস বাবার 

রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা ওই সময় কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে দরজায় একটি শব্দ হলো। আমরা নিচে গিয়ে দেখি ওই নারী পড়ে আছেন। তার পাশে কনক্রিটের ইটটা পড়ে আছে। এই ইট আমাদের ছাদেও নেই। তাছাড়া আমাদের ওই সময় কেউই ছাদে যায়নি। এমনকি তিন সপ্তাহ ধরে ছাদ খোলাও হয়নি। তাছাড়া আমাদের কর্মচারীদের ওই দিন অনেকেই ছুটিতে ছিলেন। কেউ খাবার সরবরাহে বাইরে গিয়েছিল। আমরাও হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

তিনি জানান, ছাদে তিনি ও মালিক ছাড়া কারও যাওয়ার পারমিশন নেই। কেউ যেতে চাইলে অনুমতি নিয়েই যায়। তবে ওই সময় কেউই ছাদে যায়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

Women3
যে ভবনের নিচে দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

ভবনটিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হাবিব জানান, তিনি তিন মাস হলো কাজে এসেছেন। ঘটনার পর শুধু একটি ইটের ঢুকরো দেখেছেন। ভবনটির ছাদে তিনিও গত দুই সপ্তাহ যাননি।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্টসহ ভবনটিতে থাকা সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে এখনো কারও সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, পাশে থাকা ফ্লাইওভার থেকেই কংক্রিটের ইটটি এসে পড়েছে। যা সিসি ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে। এখন সেটি কে মারল তা খুঁজতে মাঠে কাজ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

চোখের সামনে পুড়ে অঙ্গার হলো লোকটি! 

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দীপান্বিতার মামা স্বপন কুমার সানা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ এখনো আমাদের তেমন কোনো আপডেট দেয়নি। বলে, তারা তদন্ত করছে।’

স্বপন কুমার বলেন, ‘আমরা দীপান্বিতার মরদেহ বৃহস্পতিবার রাতে বুঝে পেয়ে রাত তিনটার দিকে গ্রামের বাড়িতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা শ্রাবণ বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় অবশ্যই অবহেলা আছে। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটব, আমি নাগরিক, অবশ্যই আমার নিরাপত্তা চাই। আর এ ঘটনায় যারা দায়ী সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

এ ঘটনায় নিহত দীপান্বিতার স্বামী তরুণ বিশ্বাস রমনা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার পর পুলিশ ভবনটির একাধিক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে এখনো সেই কংক্রিটের ব্লকটি কীভাবে পড়ল, কে সেটি ওপর থেকে ফেলল, নাকি কোথাও থেকে এসে পড়ল- এসব প্রশ্নের উত্তর পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর