লাইফস্টাইল ডেস্ক
১০ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম
প্রকৃতি বৈচিত্র্যতায় ভরপুর। তার জন্যই হয়তো পৃথিবী এত সুন্দর। প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষও কিন্তু বৈচিত্র্যময়। এর অন্যতম একটি উদাহরণ আমাদের চোখ। সবার চোখের অক্ষিগোলকের রঙই সাদা। কিন্তু ব্যক্তিভেদে আইরিশের রঙ সবসময় এক হয় না।
কারো চোখের মণি কালো হয়, কারো বাদামী। আবার কারো কারো আইরিশ নীল বা পান্না রঙেরও হয়ে থাকে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, এমনটা কেন হয়? ভিন্ন রঙের আইরিশের সঙ্গে কি দৃষ্টিশক্তির কোনো সম্পর্ক রয়েছে?

আইরিশের মেলানিনের পরিমাণ, প্রোটিনের ঘনত্ব এবং আইরিশে স্ট্রোমার অস্বচ্ছ অংশে আলো কতটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করেই চোখের রং নির্ধারিত হয়। বেশকিছু রঞ্জককণা এক হয়ে মেলানিন গঠিত হয়। এটি কোনো কোষ বা অণু নয়। এটি রঞ্জককণাদের গ্রুপ। প্রাণিদেহের প্রায় অঙ্গাণুতেই এটি পাওয়া যায়। মূলত এই মেলানিনের কারণেই চুল ও ত্বকের রঙে ভিন্নতা দেখা যায়। চোখের ক্ষেত্রেও তাই।
মেলানিন নামের উপাদানের রঞ্জকের পরিমাণ নির্ধারিত হয় ইওমেলানিন এবং ফিওমেলানিনের অনুপাতের ওপর। আমাদের চোখের রং মূলত ৯টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। বংশগতভাবে চোখের রং নির্ধারণে ১৬টি জিন কাজ করে। বংশগতভাবে চোখের রং নির্ধারণে সবচেয়ে প্রভাবশালী জিন হলো ওসিএ২ এবং এইচইআরসি২।

ক্রোমোজোম ১৫ তে এদের অবস্থান। সাধারণত নীল চোখের জন্যে এইচইআরসি২ জিনকে দায়ী করা যায়। অন্যদিকে ওসিএ২ সাধারণত চোখের নীল ও সবুজ রং সৃষ্টিতে কাজ করে। যেহেতু জিনের সঙ্গে চোখের রঙের সংযোগ রয়েছে তাই অনেকসময় চার-পাঁচ প্রজন্ম অন্তর একই রঙের ধারক ফিরে আসতে পারে। এই যেমন, কারো দাদার দাদা হয়তো নীল চোখের ধারক ছিলেন। বহুবছর পর তার সন্তানের চোখেও এই রঙ ফিরে আসতে পারে।
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে বাদামি চোখের। মানব সভ্যতার প্রথম থেকেই এখন পর্যন্ত এই রং দাপটের সঙ্গে টিকে আছে। অন্যদিকে, নীল চোখ মূলত বংশানুক্রমিকভাবে টিকে রয়েছে। দিন দিন এই রঙ বিরল হয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নীল চোখের সৃষ্টিতে জিনগত মিউটেশন ঘটেছিল আজ থেকে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার বছর আগে। নীল চোখের চেয়ে আরও বেশি গাঢ় দেখায় ধূসর চোখ। কারণ এ রংয়ের চোখে মেলানিন পিগমেন্ট অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুন- চোখে সুরমা ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
আইরিশে মেলানিন এবং প্রোটিনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে চোখের ধূসর রংয়ের সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য চোখের মণি সবুজ। পৃথিবীর মাত্র ২ শতাংশ মানুষের চোখের রঙ সবুজ। এ চোখে মেলানিন খুব কম থাকে।

হালকা বাদামি রং তৈরি হয় সবচেয়ে হালকা নীল এবং গাঢ় বাদামির মিশেলে। হালকা বাদামি রংয়ের চোখে আইরিশের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বরাবর প্রচুর পরিমাণে মেলানিন জমা থাকে।
আরও পড়ুন- চোখের পাতা লাফানো কীসের ইঙ্গিত?
বাদামি রঙের পরেই নীল রঙের অবস্থান। এছাড়া ধূসর, সবুজ, বেগুনী রঙেরও আইরিশ হতে পারে। খুব দুর্লভ হলেও একাধিক রঙের মিশ্রণ দেখা যায় আইরিশে। এমনকি দুই চোখের রঙ দুই রকমও হতে পারে। যাকে হেটেরোক্রোমিয়া বলা হয়।

তবে চোখের রঙের সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তত বৈজ্ঞানিকভাবে এটি এখনও প্রমাণিত নয়। আবার রঙের আলাদা করে কোনো বৈশিষ্ট্যও নেই। অর্থাৎ কালো, বাদামী, নীল বা সবুজ—চোখের মণি যেমনই হোক, কাজই একই।
কখনো কখনো চোখের আইরিশের রঙ বদলেও যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, জীবন শুরুর প্রথম কয়েক বছরের মধ্যে চোখের রংয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক শিশুই নীল চোখ নিয়ে জন্মায়। পরবর্তীতে যা সবুজ বা বাদামি হয়ে যায়।
এনএম