গানের ভাষায় বলা হয়, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’। মনের কথা বলুক আর না বলুক, নারীর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় একজোড়া সাজানো চোখ। কাজল চোখে নিজেকে সাজাতে ভালোবাসেন কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধাও।
বাজারে যে কাজল পাওয়া যায় তার চেয়ে ঘরে তৈরি কাজল বেশি ভালো। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে আবার কাজলের বদলে ব্যবহার করেন সুরমাও। সমস্যা হলো, সুরমা দিলেই চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে পারে। তাই অনেকেই শঙ্কায় থাকেন এই উপাদানটি নিয়ে। সুরমা কি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না ক্ষতিকর? চলুন জেনে নিই বিস্তারিত-
বিজ্ঞাপন

কাজল ও সুরমার পার্থক্য
কাজল আর সুরমা কিন্তু এক জিনিস নয়। প্রাচীন ভারতে চোখের অন্যতম একটি প্রসাধনী ছিল সুরমা। পারস্য দেশের কোহিনুর নামের একটি পাথর থেকেই সুরমার জন্ম হয়। আর বাড়িতে তৈরি কাজলের মূল উপাদান আগুনের ভুসো বা কার্বন। দুটো পুরোপুরি ভিন্ন জিনিস। তাছাড়া, কাজলের রঙ হয় কুচকুচে কালো। অন্যদিকে, সুরমা হয় ধূসর বা ছাই রঙা।
সুরমা কি চোখের জন্য নিরাপদ?
বিজ্ঞাপন
বাড়িতে তৈরি কাজল ও সুরমা দুটোই ভালো। তবে চোখের স্বাস্থ্যের কথা যদি ওঠে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সুরমাকেই এগিয়ে রাখেন। সুরমাতে এমন কিছু যৌগ রয়েছে, যা চোখের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ রুখে দিতে পারে। অন্যদিকে, চোখের সৌন্দর্য বাড়ানো ছাড়া কাজলের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।

সুরমার উপকারিতা সম্পর্কে ইসলাম ও বিজ্ঞান
ইসলাম ধর্মে সুরমার গুরুত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা ঘুমের সময় অবশ্যই ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ তা ব্যবহারে চোখের জ্যোতি বাড়ে এবং অধিক ভ্রু জন্মে।” (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আবু ইয়ালা)
হাদিসের পাশাপাশি বিজ্ঞানেও সুরমার উপকারিতা পাওয়া গেছে। নিয়মিত সুরমা ব্যবহারে চোখে জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। কারণ চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক জীবাণুকে ধ্বংস করতে সক্ষম সুরমা।

এটি চোখে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে। পাশাপাশি চোখের প্রবেশকৃত ধুলা ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া সুরমায় রয়েছে চোখের জন্য ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগজীবাণুকে ধ্বংস করার ক্ষমতা।
চোখের যত্নে করণীয়
চোখ ভালো রাখতে যে কেবল সুরমা ব্যবহার করলেই হবে তেমন নয়। এজন্য আরও কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি। নিয়মিত পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। অপরিষ্কার গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চোখ মোছা যাবে না। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। চোখ ভালো রাখতে আরও যা করতে হবে-

চোখের আর্দ্রভাব ধরে রাখুন
দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ব্যয় করলে তার বাজে প্রভাব পড়ে চোখে। তাই কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় কিছুক্ষণ পরপর চোখের পাতা ফেলুন। প্রতি আধঘণ্টা অন্তর দশ মিনিটের বিরতি নিন, এই সময় সম্ভব হলে সবুজ গাছগাছালির দিকে চোখ রাখুন। সবুজ রঙ চোখে প্রশান্তি দেয় এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
প্রাকৃতিক আই মাস্ক ব্যবহার করুন
ঘরোয়া উপাদানে তৈরি আই মাস্ক ব্যবহার করুন। শসা ও আলু চোখের জন্য বেশ উপকারি। চোখের ওপর আলু বা শসার চাকা রেখে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলে চোখের নিচের ফোলাভাব আর ডার্ক সার্কেল কমে। চোখও ভালো থাকে।

মনে আনন্দ ধরে রাখুন
মনে আনন্দ থাকলে তা চোখেও প্রকাশ পায়। আবার ক্লান্তি, অসুস্থতা, বিষণ্ণতাও ধরা দেয় চোখে। তাই হাসিখুশি থাকুন, আনন্দে সময় কাটায়। প্রতিদিন অবশ্যই ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
মনের ইতিবাচক ভাব ধরে রাখুন। এতে চোখ ভালো থাকবে, শরীরও থাকবে চাঙ্গা।
এনএম

