images

আইন-আদালত

কাঠগড়ায় মলিন মুখে নিশ্চুপ নুরুল হুদা, শুনলেন নানা অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জুন ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার আরেক দফা রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। দ্বিতীয় দফায়ও চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। এর আগেও চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাবেক এই সিইসিকে।

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শুনানিতে আদালতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন কেএম নুরুল হুদা। এ সময় তিনি বসতে চাইলেও সেখানে বসার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। প্রথম দিন কাঠগড়ায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু কথা বললেও আজ তিনি ছিলেন নিশ্চুপ।

তবে তার চেহারা ছিল মলিন। হতাশার ছাপ ছিল তাতে। পুরো সময়ই রিমান্ডের পক্ষে-বিপক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। এ সময় সরকার পক্ষের আইনজীবী নুরুল হুদার বিরুদ্ধে এনেছেন নানা অভিযোগ। রাতের ভোট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের ‘মূল হোতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন আইনজীবী।

আরও পড়ুন

আদালতের কাঠগড়ায় নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন সাবেক সিইসি

শুক্রবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে নুরুল হুদাকে আদালতে তোলা হয়। এসময় তার বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট পরানো ছিল। এজলাসে হাজির করানোর পর তার হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেয় পুলিশ। এরপর ৩টা ৪৪ মিনিটের এর দিকে আদালতে শুনানি শুরু হয়।

আদালতে শুনানি শুরুর আগে আইনজীবীদের সঙ্গে অল্প সময় কথা বললেও শুনানি চলাকালে কোনো কথা বলেননি সাবেক সিইসি। আদালতে পুরো সময় মাথা নিচু করেছিলেন তিনি। শুনানি চলাকালে তাকে বিমর্ষ দেখা যায়।

RR
প্রথম দিন আদালতে তাকে হাসিমুখে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

তার বিরুদ্ধে মামলায় নির্বাচনে প্রহসন, রাতে ভোট গ্রহণসহ কারচুপির সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ। এ মামলায় তাকে আবার ১০ দিনের রিমান্ড চান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার। রিমান্ডে নিতে যুক্তি দেখান। এরপর ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের জোর দাবি জানান।

শুনানির শুরু থেকেই নুরুল হুদা মলিন মুখে মাথা নিচু করে তদন্ত কর্মকর্তা ও পিপির বক্তব্য শুনতে থাকেন। পিপি ফারুকী বলেন, ২০১৮ সালে পাতানো নির্বাচনের অন্যতম হোতা এই নুরুল হুদা। শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগসাজশে তিনি এ নির্বাচন করেন। এর জন্য তিনি বিপুল অর্থ নেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। এভাবে চলতে থাকা শুনানিতে প্রায় ২১ মিনিট ধরে মাথা নিঁচু করে পিপি ও তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শুনতে থাকেন।

আরও পড়ুন

যে কারণে নূরুল হুদা কমিশনের ওপর এত ক্ষোভ!

এরপর বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব শুনানি শুরু করলে নুরুল হুদা মাথা উঁচু করে শুনানি মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকেন। আইনজীবী শুনানিতে বলেন, এই মামলার ধারাগুলো জামিনের যোগ্য ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন পরবর্তীতে আবার নতুন ধারা (রাষ্ট্রদ্রোহ) যোগ করতে আবেদন করেন। আদালতে এখন কথা বলতেই ভয় করে। নতুন করে আবার ধারা বা নতুন মামলা দেবে।

আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, গত ২৩ তারিখের আবেদন ও আজকের আবেদনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এসময় তিনি গত ৪ দিনের রিমান্ডে আসামির থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে তা জানতে চান।

শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ সাবেক সিইসির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

CEC3
জনতা ধরে হেনস্তা করার পর পুলিশে সোপর্দ করে। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত রোববার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি কেএম নুরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি তাদের সময়ের নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

আরও পড়ুন

সাবেক সিইসিকে যেভাবে সোপর্দ করা হয় পুলিশে

ওই দিনই সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নুরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন আদালতে তোলা হলে তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত।

নুরুল হুদার পর আরেক সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বুধবার ঢাকার মগবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

জেবি